Beta
মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর, ২০২৪

পার্বত‍্যাঞ্চল পরিস্থিতির বিবরণ দিল আইএসপিআর

ss-ispr-logo-200924
Picture of সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

দেশের পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে ঘটা সংঘর্ষ ও উত্তেজনাকর পরিস্থিতির বিবরণ তুলে ধরেছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।

শুক্রবার বিকালে দেওয়া এই বিবরণে আইএসপিআর চলমান উত্তেজনা তিন পার্বত্য জেলায় ভয়াবহ দাঙ্গায় রূপ নিতে পারে বলে সতর্ক করে সেখানে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

ঘটনার বিবরণে আইএসপিআর বলেছে, গত বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) খাগড়াছড়ি জেলা সদরে মোটরসাইকেল চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল জনগণের পিটুনিতে মো. মামুন (৩০) নামের এক যুবক নিহত হন। পরে সদর থানা পুলিশ নিহত ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। এ ঘটনা নিয়ে বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকালে দীঘিনালা কলেজ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি দীঘিনালার বোয়ালখালী বাজার অতিক্রম করার সময় ইউপিডিএফের (মূল) কিছু সন্ত্রাসী মিছিলের ওপর হামলা করে ও ২০-৩০টি গুলি ছোড়ে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিক্ষুব্ধ জনতা বোয়ালখালী বাজারের কয়েকটি দোকানে অগ্নিসংযোগ করে।

এই সংঘর্ষ চলাকালে উভয় পক্ষের ৬ জন আহত হলে তাদের চিকিৎসার জন্য দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে সেনাবাহিনীর টহল দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ফায়ার ব্রিগেড ও স্থানীয় জনসাধারণের সহায়তায় আগুন নেভায়। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে খাগড়াছড়ি জেলা সদর, দীঘিনালা, পানছড়ি ও আশপাশ এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সেইসঙ্গে কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে ক্রমেই পরিস্থিতিকে আরও উত্তেজনাকর করে তোলে। দ্রুততার সঙ্গে খাগড়াছড়ি জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে জরুরি ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বৃহস্পতিবার রাত ১০টা থেকে খাগড়াছড়ি জেলা সদর, দীঘিনালা ও পানছড়িসহ সব উপজেলায় যৌথভাবে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সমন্বয়ে টহল দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন কমিউনিটি লিডারদের (স্থানীয় জনগোষ্ঠীর নেতাদের) সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সব পক্ষকে সহিংস কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।

একই রাতে (১৯ সেপ্টেম্বর) খাগড়াছড়ি জোনের একটি টহল দল রাত সাড়ে ১০টায় একজন মুমূর্ষু রোগীকে স্থানান্তরের সময় খাগড়াছড়ি শহরের স্বনির্ভর এলাকায় পৌঁছালে অবস্থানরত উত্তেজিত জনসাধারণ ইউপিডিএফের (মূল) নেতৃত্বে বাধা সৃষ্টি করে। একসময় ইউপিডিএফের সন্ত্রাসীরা সেনাবাহিনীর টহল দলের সদস্যদের ওপর গুলি করে এবং আত্মরক্ষার্থে সেনাবাহিনী পাল্টা গুলি চালায়। ওই গোলাগুলির ঘটনায় তিনজন নিহত ও কয়েকজন আহত হয় বলে জানা যায়।

একই ঘটনার ধারাবাহিকতায় খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়িতে স্থানীয় উচ্ছৃঙ্খল জনসাধারণ কয়েকজন যুবকের মোটরসাইকেল থামিয়ে তাদের ওপর হামলা ও লাঠিপেটা করে। সেইসঙ্গে উত্তেজিত জনসাধারণ ইউপিডিএফের (মূল) নেতৃত্বে ফায়ার ব্রিগেডের কার্যালয়ে ভাঙচুর করে।

শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে পিসিজেএসএস (পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি) সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ রাঙামাটি জেলা সদরে ‘সংঘাত ও বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন’ এর ব্যানারে স্থানীয় জনসাধারণ রাঙামাটি জিমনেসিয়াম এলাকায় সমবেত হয়। এ সময় ৮০০-১০০০ জন উত্তেজিত জনসাধারণ একটি মিছিল বের করে বনরূপা এলাকার দিকে অগ্রসর হয় এবং বনরূপা বাজার মসজিদ, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, সিএনজি-অটোরিকশা, মোটরসাইকেল এবং বেশ কিছু দোকানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এতে উভয় পক্ষের বেশ কিছু লোকজন আহত হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে রাঙামাটি জেলা সদরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।

উপরিউক্ত ঘটনাগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে চলমান উত্তেজনা তিন পার্বত্য জেলায় ভয়াবহ দাঙ্গায় রূপ নিতে পারে বলে আইএসপিআর সতর্ক করেছে। তারা বলেছে, অনতিবিলম্বে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের চলমান উত্তেজনা প্রশমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। যথাযথ তদন্ত কার্যক্রম সম্পাদনের মাধ্যমে প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের শনাক্তপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিন পার্বত্য জেলায় শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে সর্বসাধারণকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত