লেবাননে হিজবুল্লাহর স্থাপনা লক্ষ্য করে ব্যাপক ও বিস্তৃত এলাকাজুড়ে ইসরায়েলের চালানো হামলায় ৪৯২ জন নিহত হয়েছে। এসময় আহত হয়েছে ১ হাজার ৬৪৫ জন।
সোমবার দিনভর এই বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল।
১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত চলা গৃহযুদ্ধের পর একদিনে এত মৃত্যু দেখেনি লেবানন।
দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৩৫টি শিশু ও ৫৮ জন নারী রয়েছে। হতাহতদের মধ্যে কতজন বেসামরিক নাগরিক আর কতজন যোদ্ধা, তা নিশ্চিত করে বলতে পারেনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
লেবানন রাষ্ট্র পরিচালিত সংবাদ সংস্থা ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সির (এনএনএ) প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৬টার দিকে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। যা চলে সারাদিন।
ইসরায়েলি বিমান থেকে ক্রমাগত ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকে ‘ভয়ঙ্কর’ অভিহিত করে এক লেবানিজ নারী বলেন, “আমাদের মাথার ওপর দিয়ে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র উড়ে যাচ্ছিল। বোমাবর্ষণের শব্দে আমাদের ঘুম ভেঙে যায়। আমরা এমনটা আশা করিনি।”
ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সি জানায়, দক্ষিণ লেবাননের সিদন, মারজায়ুন, নাবাতিয়েহ, বিনত জেবেইল, তির, জেঝাইন ও জাহরানি জেলার কয়েক ডজন শহর, গ্রাম ও খোলা প্রান্তর লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালানো হয়। এছাড়া পূর্ব লেবাননের বেকা উপত্যকার জাহলে, বালবেক ও হারমাল জেলাতেও একইভাবে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইসরায়েল।
এছাড়া লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলীয় বির আল-আবেদ এলাকার একটি ভবনে বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে।
লেবাননের শিয়া ইসলামী রাজনৈতিক দল ও আধাসামরিক গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডার আলি কারাকিকে লক্ষ্য করে ওই ভবনে হামলা করা হয় বলে দেশটির নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
ইসরায়েলি হামলায় আল কারাকি নিহত হয়েছেন কি না, তা নিশ্চিত করতে পারেনি ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সি।
তবে হিজবুল্লাহর তথ্য দপ্তর বলছে, আলি কারাকি সুস্থ আছেন। তিনি নিরাপদ স্থানে সরে গেছেন।
বিবিসি জানিয়েছে, লেবাননে বিমান হামলার বিষয়ে ইসরায়েলের সশস্ত্র বাহিনী ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) সোমবার সন্ধ্যায় বিবৃতি দেয়।
এতে বলা হয়, দক্ষিণ লেবানন ও বেকা উপত্যকায় হিজবুল্লাহর আনুমানিক ১ হাজার ৩০০ ‘সন্ত্রাসী লক্ষ্যে’ আঘাত হানা হয়েছে। এসব লক্ষ্যে রকেট, ক্ষেপণাস্ত্র, লঞ্চার ও ড্রোন লুকানো ছিল।
হামলা সম্পর্কে কমান্ডারদের আইডিএফের সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারজি হালেভি বলেন, “গত ২০ বছর ধরে হিজবুল্লাহ যেসব অবকাঠামো গড়ে তুলেছে, আমরা সেগুলো ধ্বংস করার চেষ্টা করছি। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
অন্যদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু লেবানিজদের উদ্দেশে এক ছোট ভিডিও বার্তায় বলেন, “ইসরায়েলের যুদ্ধ আপনাদের বিরুদ্ধে নয়। আমরা হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে লড়ছি। দীর্ঘদিন ধরে হিজবুল্লাহ আপনাদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আসছে।”
ফিলিস্তিনের গাজায় হামাস-ইসরায়েলের যুদ্ধকে কেন্দ্র করে প্রায় এক বছর ধরে সীমান্ত এলাকায় থেমে থেমে লড়াইয়ে লিপ্ত হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েল।
হিজবুল্লাহ ও হামাস উভয়েরই ইরানের সমর্থন আছে। হিজবুল্লাহ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, গাজায় ইহুদি রাষ্ট্রটির আগ্রাসন বন্ধ না হলে তাদের ওপর আক্রমণ চলবে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত রবিবার ইসরায়েল সীমান্তে দেড়শোর বেশি রকেট ও ড্রোন হামলা চালায় হিজবুল্লাহ।
তার আগে গত সপ্তাহে হিজবুল্লাহর সদস্যদের ব্যবহার করা হাজারো পেজার ও ওয়াকি-টকিতে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ৩৯ জনকে হত্যা করা হয়। আহত হয় কয়েক হাজার মানুষ। এ ঘটনার জন্য ইসরায়েলকেই দায়ী করে হিজবুল্লাহ।