লেবাননের রাজধানী বৈরুতে শুক্রবার ইসরায়েলের বিমান হামলার পর থেকে এখন পর্যন্ত হিজবুল্লাহ তাদের জ্যেষ্ঠ নেতা হাশেম সাফিয়েদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে না। এই সাফিয়েদ্দিনকেই ইসরায়েলের হাতে গত সপ্তাহে নিহত হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহর সম্ভাব্য উত্তরসূরি ভাবা হচ্ছে।
হিজবুল্লাহ দুদিন ধরে তাদের জ্যেষ্ঠ নেতার কোনও খোঁজ না পাওয়ায় স্বভাবতই গুঞ্জন উঠেছে, তিনি হয়তো আর বেঁচে নেই। নাসরাল্লাহর মতো সাফিয়েদ্দিনও ইসরায়েলের হাতে প্রাণ হারিয়েছেন। অন্তত রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এমনটাই মনে করছেন।
তাদের ধারণা, হিজবুল্লাহর নেতাদের অবস্থান সম্পর্কিত তথ্য গোষ্ঠীটির ভেতর থেকেই ইসরায়েলে পাচার করা হচ্ছে। আর তাতে মারা পড়ছেন তাদের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা।
বৈরুতে শুক্রবার সকালে ইসরায়েলি হামলার পর হিজবুল্লাহ ও সাফিয়েদ্দিনের মধ্যে যোগাযোগবিচ্ছিন্নতার তথ্য আল জাজিরাকে নিশ্চিত করেছে লেবাননের নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাফিয়েদ্দিন হিজবুল্লাহর নির্বাহী পরিষদের চেয়ারম্যান। লেবাননের শিয়া মুসলিম রাজনৈতিক এই দলের সদ্যপ্রয়াত নেতা নাসরাল্লাহর মামাত ভাই তিনি।
বৈরুত থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক দোরসা জাব্বারি জানিয়েছেন, শুক্রবার সকালে বৈরুতে ইসরায়েলের বিমান হামলার পর ঘটনাস্থল থেকে হতাহতদের উদ্ধারে লেবানন সরকার ও হিজবুল্লাহর সদস্যদের মধ্যে এক ধরনের তাড়াহুড়ো লক্ষ্য করা গেছে।
দোরসা জাব্বারি বলেন, “হিজবুল্লাহর অধিকাংশ কমান্ডার আড়ালেই থাকেন। সাফিয়েদ্দিনও লোকচক্ষুর অন্তরালেই ছিলেন এতদিন। তার নাম প্রথম শোনা যায় যখন ২৭ সেপ্টেম্বর নাসরাল্লাহ নিহত হওয়ার পর হিজবুল্লাহর মহাসচিব হিসেবে সাফিয়েদ্দিনের দায়িত্ব নেওয়ার গুঞ্জন ওঠে।
“শুক্রবার সকাল থেকে সাফিয়েদ্দিনের খোঁজ পাচ্ছে না হিজবুল্লাহ। হতে পারে, নাসরাল্লাহর মতো তিনিও আর বেঁচে নেই। সেক্ষেত্রে হিজবুল্লাহর দায়িত্বভার কে নেবে, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।”
অবশ্য ইসরায়েলি হামলায় সাফিয়েদ্দিনের মৃত্যু হয়েছে, এমন রটনাকে ভিত্তিহীন বলছে হিজবুল্লাহ। তাদের তথ্য দপ্তর এক বিবৃতিতে বলেছে, “হিজবুল্লাহর ‘নেতাদের দুর্ভাগ্য’ নিয়ে আমাদের সদস্যদের বরাত দিয়ে পত্র-পত্রিকায় যেসব প্রতিবেদন ছাপা হচ্ছে, তা নিতান্তই গুজব। আমাদের তথ্য দপ্তর থেকে পাঠানো বিবৃতিই কেবল নির্ভরযোগ্য।”
শনিবার আল জাজিরাসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম হিজবুল্লাহর নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের বরাতে প্রতিবেদন ছাপিয়ে বলেছিল, সাফিয়েদ্দিনের সঙ্গে শুক্রবার ইসরায়েলের হামলার পর থেকে যোগাযোগ করতে পারছে না সশস্ত্র গোষ্ঠীটি।
এরপরই হিজবুল্লাহর তথ্য দপ্তর থেকে এই বিবৃতি এল।
এ বিষয়ে আল জাজিরার রাজনৈতিক বিশ্লেষক মারওয়ান বিশারা বলেন, “সাফিয়েদ্দিনের সঙ্গে হিজবুল্লাহর যোগাযোগবিচ্ছিন্নতা এটাই প্রমাণ করে, গোষ্ঠীটির নেতারা কে কোথায় আছেন, সেসব তথ্য তাদের ভেতর থেকেই ইসরায়েলের কাছে ফাঁস করা হচ্ছে। হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতাদের অবস্থান জেনে নিয়ে এক এক করে তাদের হত্যা করছে ইসরায়েল।”
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যপ্রাচ্য ও ইসলামী রাজনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নাদের হাশেমির বদ্ধমূল ধারণা, সাফিয়েদ্দিন জীবিত নেই।
তিনি আল জাজিরাকে বলেন, “নাসরাল্লাহর উত্তরসূরি সাফিয়েদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারা হিজবুল্লাহর জন্য আরেকটি গুরুতর ও উল্লেখযোগ্য ধাক্কা।
“‘সাফিয়েদ্দিনের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না’- এই বাক্যের মাধ্যমে হিজবুল্লাহর সমর্থকদের মানসিকভাবে প্রস্তুত করার চেষ্টা করা হচ্ছে এটা শোনার জন্য যে, তাদের নেতার মৃত্যু হয়েছে।”