ফিলিস্তিনের গাজায় হামাসের হাতে বন্দিদের মুক্তি ও প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পদত্যাগ দাবিতে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে ইসরায়েলে।
ইসরায়েলি পত্রিকা হারেৎজ জানিয়েছে, তেল আবিব, জেরুজালেম, হাইফা, বেয়ের শেভা, সিজারিয়াসহ ইসরায়েলের আরও কয়েকটি শহরে শনিবার বিকালে হাজার হাজার মানুষ বন্দিদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ করে।
এসময় তাদের সরকারবিরোধী স্লোগান দিতে দেখা যায়। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে জিম্মিদের স্বজনরাও ছিলেন।
বিক্ষোভের একপর্যায়ে তেল আবিব থেকে ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ‘সড়ক অবরোধ ও যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি’ করায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে পুলিশের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিক্ষোভাকারীরা তেল আবিবসহ অন্যান্য শহরের সড়ক অবরোধ করে আগাম নির্বাচনের দাবি জানান। অন্যদিকে জেরুজালেমে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বাসভবনের সামনে শনিবার শত শত বিক্ষোভকারী অবস্থান নেন।
গাজায় হামাসের হাতে বন্দি প্রায় ১৩০ জন ইসরায়েলির এখন পর্যন্ত মুক্ত না হওয়ার জন্য তারা নেতানিয়াহুর কট্টর ডানপন্থী সরকারের ব্যর্থতাকে দায়ী করেন। বন্দি ১৩০ ইসরায়েলির মধ্যে ৩৩ জন জীবিত নেই বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হঠাৎ হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। সেদিন তাদের হাতে ১ হাজার ১৩৯ ইসরায়েলি নিহত হয়। জিম্মি হয় শতাধিক। হামাসের হামলার প্রতিক্রিয়ায় ওই দিনই গাজায় আক্রমণ করে ইসরায়েল।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত ৩২ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। বাস্তুচ্যুত হয়েছে লাখো ফিলিস্তিনি।
গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে ২৫ মার্চ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাব পাস হয়। যুক্তরাষ্ট্র প্রথমবারের মতো প্রস্তাবটিতে ভেটো দেওয়া থেকে বিরত ছিল। এর আগে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে তোলা প্রতিটি প্রস্তাবেই ভেটো দিয়ে আসছিল হোয়াইট হাউস।
মিত্রদেশ হওয়ার পরও সর্বশেষ প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র ভেটো না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। এতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস হওয়ার পর রবিবার মিশরের রাজধানী কায়রোতে এ নিয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে হামাস নেতাদের ফের বৈঠক শুরুর কথা রয়েছে।
বিবদমান পক্ষের প্রতিনিধিরা এর আগেও কয়েকটি দেশের মধ্যস্থতায় শান্তিচুক্তি নিয়ে বৈঠকে বসলেও কোনও সুরাহা হয়নি। যুদ্ধ বন্ধে ইসরায়েলের শর্ত হামাস মানেনি। অন্যদিকে হামাসের দাবি-দাওয়াতে রাজি হয়নি ইসরায়েল।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস হওয়ায় গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর নির্বিচারে হামলা বন্ধে চাপে আছে ইসরায়েল। এরই মধ্যে ইসরায়েল-হামাস বৈঠকের আগের দিন শনিবার খোদ প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করল ইসরায়েলিরা।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলিদের বড় অংশ মনে করে, হামাসের সঙ্গে শান্তিচুক্তি ও গাজা থেকে জিম্মিদের দেশে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু স্বয়ং।
এ বিষয়ে তেল আবিবে অবস্থানরত আল জাজিরার প্রতিনিধি হামদাহ সালহুত বলেন, “প্রায় ছয় মাস ধরে গাজায় বন্দিদের দেশে ফেরানোর দাবি জানিয়ে আসছে হাজারো ইসরায়েলি। তারা এখন মনে করছে, জিম্মিদের বিষয়ে ইসরায়েল সরকারের নীতি পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।”