Beta
রবিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
রবিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫

ইসরায়েল করেছে হত্যা, কে এই নাসরাল্লাহ

হাসান নাসরাল্লাহ
[publishpress_authors_box]

হিজবুল্লাহপ্রধান হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যার দাবি করেছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। শুক্রবার লেবাননের রাজধানী বৈরুতে চালানো হামলায় তিনি নিহত হয়েছেন, এমনটা বলা হচ্ছে।

তবে নাসরাল্লাহর মৃত্যু নিয়ে শুরুতে হিজবুল্লাহ কোনও বিবৃতি দেয়নি। পরে তারা তাদের নেতার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে বিবৃতি দিয়েছে। এতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দেয় হিজবুল্লাহ।

আইডিএফ তাদের সোশাল মিডিয়া এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “হাসান নাসরাল্লাহ আর বিশ্বে সন্ত্রাস ছড়াতে পারবেন না।”

শনিবার ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ হার্জি হালেভি এক বিবৃতিতে জানান, “আমাদের বার্তা খুব সাধারণ। যারাই ইসরায়েলের জনগণকে হুমকি দেবে, আমরা জানি তার কাছে কীভাবে পৌঁছাতে হবে।”

জেরুজালেম পোস্ট জানিয়েছে, শুক্রবারের হামলায় নাসরাল্লাহর সঙ্গে হিজবুল্লাহর দক্ষিণ ফ্রন্টের কমান্ডার আল কারাকিও নিহত হয়েছেন। তবে ওই হামলায় মোট কয়জন নিহত হয়েছেন সেবিষয়ে বিস্তারিত এখনও জানা যায়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে ভাষণ দেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ভাষণে তিনি বলেন, বিজয় পুরোপুরি অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত ফিলিস্তিনের গাজা ও লেবাননে আক্রমণ অব্যাহত থাকবে।

নেতানিয়াহু যখন জাতিসংঘে ভাষণ দিচ্ছিলেন, তখন ইসরায়েলি বাহিনী লেবাননে বড় পরিসরে বিমান হামলা চালাচ্ছিল।

আল জাজিরা জানিয়েছে, ওই হামলাতেই হিজবুল্লাহপ্রধান নিহত হয়ে থাকতে পারেন। তবে আল জাজিরাও নাসরাল্লাহর নিহত হওয়ার খবর স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি।

ইসরায়েল গত সোমবার থেকে নিয়মিত বিমান হামলা চালাচ্ছে লেবাননে। এতে এ পর্যন্ত আট শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বৈরুতের স্থানীয় কর্মকর্তারা। নিহতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যকই বেসামরিক।

কে এই হাসান নাসরুল্লাহ

লেবাননের শিয়া মতাবলম্বী হিজবুল্লাহ আন্দোলনের নেতা হলেন শেখ হাসান নাসরাল্লাহ। তাকে মধ্যপ্রাচ্যের অত্যাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে দেখা হয়।

ইসরায়েলের আক্রমণের শিকার হতে পারেন, এই শঙ্কা থেকে গত কয়েক বছর ধরেই তাকে জনসমক্ষে দেখা যায়নি।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, নাসরাল্লাহর নেতৃত্বে হিজবুল্লাহ ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেয়। এছাড়া ইরাক ও ইয়েমেনের একাধিক সশস্ত্র গোষ্ঠীর পেছনেও আছে হিজবুল্লাহ।

ইসরায়েলের আক্রমণ থেকে লেবাননকে রক্ষা করতে নাসরাল্লাহ একটি সাধারণ মিলিশিয়া বাহিনীকে হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী হিসেবে গঠন করেন। লেবাননের সেনাবাহিনীর চেয়েও শক্তিশালী বাহিনী গঠনে তার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। তার নেতৃত্বেই হিজবুল্লাহ লেবাননের সর্বক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করেছে।

বৈরুতের পূর্বাঞ্চলীয় বুর্জ হামুদ এলাকায় ১৯৬০ সালে জন্ম হাসান নাসরাল্লাহর। তার বাবার নাম আবদুল করিম। ছিলেন একজন মুদি দোকানদার। তার নয় সন্তানের মধ্যে সবচেয়ে বড় ছিলেন নাসরাল্লাহ।

১৯৭৫ সালে লেবাননের গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে তিনি শিয়াপন্থী ‘আমল আন্দোলনে’ যোগ দেন। এই আন্দোলনে যোগ দেওয়ার প্রেরণা তিনি পেয়েছিলেন ইরাকের নাজাফ শহর থেকে। তকে ১৯৮২ সালে আন্দোলনটি ভাগ হয়ে গেলে, তিনি একটি অংশের সঙ্গে আলাদা হয়ে যান। এর কিছুদিন পরেই ইসরায়েল লেবাননে হামলা চালায়।

আমল আন্দোলনের ভাগ হওয়া অংশ নিয়ে নাসরাল্লাহ গঠন করেন ‘ইসলামিক আমল’ নামের আরেকটি গ্রুপ। এই গ্রুপটিকে তখন থেকেই সমর্থন ও সহায়তা দিতে শুরু করে ইরানের বিপ্লবী গার্ডস বাহিনী। বিশেষ করে বেক্কা ভ্যালিতে বিপ্লবী গার্ডস বাহিনীর তত্ত্বাবধানে ইসলামিক আমলের সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়।

‘ওপেন লেটার’ নামে একটি প্রকাশনা বের করার মধ্য দিয়ে ১৯৮৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠার কথা জানায় হিজবুল্লাহ। যুক্তরাষ্ট্র ও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নকে তারা চিহ্নিত করে ‘ইসলামের প্রধান দুই শত্রু’ হিসেবে। সেই সঙ্গে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলকে ধ্বংস করার ডাক দেয় তারা। দেশটিকে আখ্যায়িত করে মুসলিমদের ভূমি দখলকারী হিসেবে।

হিজবুল্লাহর প্রতিষ্ঠাতা নেতা আব্বাস আল মুসাবি মৃত্যুর পর মাত্র ৩২ বছর বয়সে ১৯৯২ সালে সংগঠনটির নতুন প্রধান হন নাসরাল্লাহ। আব্বাস তখন ইসরায়েলের হেলিকপ্টার হামলায় নিহত হয়েছিলেন।

আব্বাসের হত্যার প্রতিশোধ নিতে নাসরাল্লাহ তখন ইসরায়েলের উত্তরে রকেট হামলা চালাতে নির্দেশ দেন। ওই হামলায় এক ইসরায়েলি মেয়ে নিহত হয়। এছাড়া তুরস্কে ইসরায়েলের দূতাবাসে কর্মরত এক ইসরায়েলি নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়। আর আর্জেন্টিনার ইসরায়েলি দূতাবাসে এক আত্মঘাতী হামলায় ২৯জনকে হত্যা করা হয়।

লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল থেকে ২০০০ সালে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার করার পরেও নাসরাল্লাহ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যান।

হিজবুল্লাহ ২০০৬ সালে ফের ইসরায়েলে হামলা চালায়। এতে ৮ ইসরায়েলি সেনা নিহত ও দুইজনকে অপহরণ করা হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলি বিমানবাহিনী বৈরুতে হামলা চালায়। সহস্রাধিক লেবানিজ ওই হামলায় নিহত হয়। ৩৪ দিনের ওই যুদ্ধে ১১৯ ইসরায়েলি যোদ্ধা ও ৪৫ বেসামরিক নিহত হয়।

নাসরাল্লাহ ২০০৯ সালে হিজবুল্লাহর ‘রাজনৈতিক ভিশন’ প্রকাশ করেন। এর চার বছর পর হিজবুল্লাহ নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করে। তখন নাসরাল্লাহ সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে সহায়তা করতে হিজবুল্লাহর সদস্যদের পাঠান। তখন নাসরাল্লাহ বলেছিলেন, “এটা আমাদের লড়াই। আর এই লড়াই আমরা করব।”

সর্বশেষ হিজবুল্লাহ–ইসরায়েল উত্তেজনা বাড়ে গত বছরের ৮ অক্টোবর থেকে। সেদিন ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের রকেট হামলার জেরে গাজায় নজিরবিহীন হামলা করে দেশটি। ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানাতে মাঝেমধ্যেই ইসরায়েলের অভ্যন্তর ও দখলকৃত গোলান মালভূমি এলাকায় রকেট হামলা চালাতে শুরু করে হিজবুল্লাহ।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত