Beta
সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫
Beta
সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫

ইসরায়েলি হামলায় ৩ ছেলে হারিয়ে যা বললেন হামাসপ্রধান

বুধবার তিন ছেলে ও চার নাতি-নাতনিকে হারান হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়ে। ছবি: আনাদোলু এজেন্সি
বুধবার তিন ছেলে ও চার নাতি-নাতনিকে হারান হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়ে। ছবি: আনাদোলু এজেন্সি
[publishpress_authors_box]

ঈদের দিন ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় হামাসপ্রধান ইসমাইল হানিয়ের তিন ছেলে ও চার নাতি-নাতনি নিহত হয়েছে।

গাজায় হামাসপরিচালিত সরকারের তথ্য অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, বুধবার গাজার উত্তরপশ্চিমে আল-শাতি শরণার্থী শিবিরে হানিয়ে পরিবারকে বহনকারী গাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। তারা ঈদ উদযাপন করতে আত্মীয়-স্বজনদের কাছে যাচ্ছিলেন।

ইসরায়েলি বিমান হামলায় হামাসপ্রধানের তিন ছেলে হাজেম হানিয়ে, আমির হানিয়ে ও মোহাম্মদ হানিয়ে নিহত হন। গাড়িতে থাকা ইসমাইল হানিয়ের চার নাতি-নাতনি– মোনা, আমাল, খালেদ ও রাজানও প্রাণ হারান।

হামাসপ্রধান ইসমাইল হানিয়ের পরিবারের ওপর হামলা গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি সংক্রান্ত চলমান আলোচনাকে জটিল করবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।

হানিয়ের ছেলে ও নাতি-নাতনিদের ওপর হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী। তারা বলেছে, হামাসপ্রধানের নিহত তিন ছেলে গাজার মধ্যাঞ্চলে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ পরিচালনা করছিল।            

ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) ও ইসরায়েল নিরাপত্তা সংস্থার (আইএসএ) দাবি, ইসমাইল হানিয়ের ছেলে আমির হানিয়ে হামাসের সামরিক শাখার সেল কমান্ডার। আর মোহাম্মদ হানিয়ে ও হাজেম হানিয়ে সেনাসদস্য।              

আইডিএফের দাবির সত্যতা সিএনএনের পক্ষে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। 

পরিবারের সাত সদস্যকে হারানোর পর ইসমাইল হানিয়ে এক বিবৃতিতে বলেন, “নেতাদের ছেলেদের হত্যাকাণ্ড হামাসকে তার নীতির প্রতি আরও অবিচল করবে। মাতৃভূমির প্রতি তাদের আনুগত্য আরও বাড়াবে।”             

বিবৃতিতে হামাসপ্রধান আরও বলেন, “যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি নিয়ে চলমান আলোচনায় হামাসের দাবি-দাওয়া আছে। এখন কেউ যদি মনে করে আমার ছেলেদের ওপর হামলা চালালে আমরা সেসব দাবি থেকে সরে আসব, তাহলে সে বোকার স্বর্গে বাস করছে।”            

আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা করে রাফায় স্থল অভিযান চালাবেনই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ছবি: রয়টার্স

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর প্রায় ১৫ লাখ ফিলিস্তিনি গাজার সর্বদক্ষিণের রাফা এলাকায় আশ্রয় নেয়। ওই এলাকায় স্থল অভিযান শুরুর তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে বলে সোমবার জানান ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

রাফায় ইসরায়েলের আগ্রাসন নিয়ে হামাস ভীত নয় বলে জানান ইসমাইল হানিয়ে। তিন ছেলে আর সাত নাতি-নাতনির মৃত্যুর পর তিনি বলেন, “আমাদের ত্যাগ যতই বড় হোক না কেন, হামাস কোনও পরিস্থিতিতেই আত্মসমর্পণ করবে না। আপোষ করবে না।”

৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালায় হামাস। এতে ১ হাজার ২০০ জনের বেশি নিহত হন, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক মানুষ। একই সঙ্গে সেদিন তারা ২৫৩ ইসরায়েলিকে জিম্মি করে। এর জবাবে ওই দিনই গাজায় পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েল, যা এখনও চলছে।

গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩৩ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এছাড়া গাজায় ইসরায়েলের হামলায় বাস্তুচ্যুত হয়েছে ২০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি।

হামাসে ইসমাইল হানিয়ের গুরুত্ব

গাজা থেকে ৭ অক্টোবর ইসরায়েল ভূ-খণ্ডে হামাস যে নজিরবিহীন হামলা চালায়, তার অন্যতম পরিকল্পনাকারী ছিলেন ইসমাইল হানিয়ে। তিনি এবং তার পরিবারের সদস্যরা অনেক আগে থেকেই ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তু।

গত অক্টোবরে গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর হামাসপ্রধানের ভাই ও ভাতিজাও ইসরায়েলের হামলায় মারা যান। পরের মাসে নভেম্বরে তার এক নাতিকে হত্যা করে ইসরায়েল। সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারিতে ইসরায়েলি হামলায় আরেক ছেলেকে হারিয়েছিলেন হানিয়ে।

১৯৬২ সালে গাজার আল-শাতি শরণার্থী শিবিরে জন্মগ্রহণ করা ইসমাইল হানিয়ে বর্তমানে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর চেয়ারম্যান।

ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব গাজায় আরবি সাহিত্যে পড়াশোনা করার সময় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সঙ্গে যুক্ত হন হানিয়ে। ১৯৯৭ সালে সংগঠনটির একটি শাখার প্রধান হিসেবে নিয়োগ পান তিনি।        

২০১৪ সালে এক সমাবেশে ইসমাইল হানিয়ে। ছবি: এপি

আশির দশকে ফিলিস্তিনিদের প্রথম ইন্তিফাদা বা গণঅভ্যুত্থানের সময় হানিয়ে ছিলেন সামনের কাতারের নেতা। গণঅভ্যুত্থান দমানোর অংশ হিসেবে ১৯৮৯ সালে তাকে বন্দি করে ইসরায়েল। টানা তিন বছর ইসরায়েলি কারাগারে ছিলেন তিনি। সেখান থেকে ছাড়া পাওয়ার পর ১৯৯২ সালে ইসরায়েল ও লেবাননের মাঝে এক নোম্যান্সল্যান্ডে হামাসের অন্য নেতাদের সঙ্গে নির্বাসনে যান হানিয়ে।                              

এক বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে ১৯৯৩ সালে গাজায় ফেরেন তিনি। ১৯৯৭ সালে হামাসের আধ্যাত্মিক নেতার কার্যালয়ের প্রধান হিসেবে নিয়োগ পেয়ে সংগঠনটিতে নিজের অবস্থান আরও শক্তিশালী করেন হানিয়ে।              

২০০৬ সালে জাতীয় নির্বাচনে বিপুল আসনে জয় পেয়ে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন হানিয়ে। তবে এক বছর পর গাজায় ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের দল ফাতাহ-এর হামাসের ভয়াবহ সংঘাত বাধলে হানিয়েকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরান আব্বাস।         

প্রেসিডেন্টের পদক্ষেপকে সেসময় ‘অসাংবিধানিক’ হিসেবে মন্তব্য করেছিলেন হানিয়ে। ২০১৭ সালে তিনি হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হন।    

২০১৮ সালে হানিয়েকে ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে অভিহিত করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বেশ কয়েক বছর ধরেই তিনি কাতারে বাস করছেন।           

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত