ফিলিস্তিনের গাজায় ১১ মাস হামাসের হাতে জিম্মি থাকা ছয় ইসরায়েলির মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ইসরায়েল।
রবিবার তেল আবিব, জেরুজালেমসহ অন্যান্য শহরের রাজপথে নেমে বিক্ষোভ করেছে হাজার হাজার মানুষ। ছয় জিম্মির মৃত্যুর জন্য প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকেই দায়ী করছে তারা।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে হামাসের হাতে জিম্মি সব ইসরায়েলিকে মুক্তির বিষয়ে চুক্তি করতে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেয়নি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও তার সরকার। ২৫২ জনের মধ্যে ১১৭ জন জিম্মি গাজা থেকে জীবিত ফিরতে পারলেও বাকিদের জীবন তাদের পদক্ষেপহীনতার কারণে ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
বিবিসি জানিয়েছে, তেল আবিব শহরজুড়ে রবিবার ইসরায়েলিদের বিক্ষোভ মোটা দাগে শান্তিপূর্ণ ছিল। তবে জনতা একপর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে ফেলে এবং শহরের একটি প্রধান সড়ক অবরোধ করে। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ।
বিক্ষোভস্থল থেকে জিম্মি মুক্তির চুক্তির দাবিতে সোমবার দেশজুড়ে ধর্মঘটের ডাক দেয় ইসরায়েলের প্রধান শ্রমিক সংগঠন হিস্তাদ্রুত।
সংগঠনের চেয়ারম্যান আরনন বার-ডেভিড বলেন, “আমাদের অবশ্যই জিম্মি মুক্তির চুক্তি করতে হবে। এ মুহূর্তে চুক্তি ছাড়া আর কিছুই গুরুত্বপূর্ণ নয়। চুক্তির বদলে আমরা মরদেহ পাচ্ছি।”
শনিবার গাজার দক্ষিণে রাফাহ এলাকায় একটি ভূগর্ভস্থ টানেল থেকে ছয় জিম্মির মরদেহ উদ্ধার করে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী।
মৃত ছয় ইসরায়েলি হলেন কারমেল গাত, ইডেন ইয়েরুশালমি, হারশ গোল্ডেনবার্গ-পোলিন, আলেকজান্দার লোবানভ, আলমগ সারুসি ও মাস্টার ওরি দানিনো।
দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, শনিবার ওই ভূগর্ভস্থ টানেলে তাদের সেনাবাহিনী পৌঁছার অল্প সময় আগে তাদের হত্যা করা হয়।
গাজায় ছয় জিম্মির মরদেহ উদ্ধারের খবর পেয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়ে ইসরায়েলের জনগণ। পরদিন তাদের বিক্ষোভে যোগ দেন ২৪ বছর বয়সী ইয়োতাম পির। গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় মারা যান তার ২১ বছরের ভাই।
ইয়োতাম পির বিবিসিকে বলেন, “ছয় জিম্মির মৃত্যুর খবরে আমরা চুপ থাকতে পারি না। আমাদের সামনে আর কোনও পথ খোলা নেই।”
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, রবিবারের বিক্ষোভে উপস্থিত ছিলেন ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিরোধী দল ইয়েশ আতিদের নেতা ইয়ার লাপিদ।
গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজা থেকে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে অতর্কিতে হামলা চালায় হামাস। ওই হামলায় ১ হাজার ১৩৯ ইসরায়েলি নিহত হয়। আর জিম্মি হয় ২৫২ জন।
হামাসের হামলার প্রতিক্রিয়ায় সেদিনই গাজায় হামলা করে ইসরায়েল, যা এখনও চলছে। ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৪১ হাজার ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছে।
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধে বিরতি দিতে গত কয়েক মাস ধরে ইসরায়েল সরকার চাপ দিয়ে যাচ্ছে জিম্মিদের পরিবারের সদস্যরা।
তাদের সংগঠন হোস্টেজেস ফ্যামিলিজ ফোরাম বলেছে, “শনিবার গাজায় যে ছয় জিম্মির মরদেহ ইসরায়েলের সেনাবাহিনী পেয়েছে, তাদের গত কয়েকদিন আগে মেরে ফেলা হয়েছে। ১১ মাস তারা নির্যাতন আর অনাহারের মধ্যে ছিল।
“যুদ্ধবিরতি চুক্তি সইয়ে বিলম্ব তাদের মৃত্যু ডেকে এনেছে।”