ফিলিস্তিনের গাজায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে হামাসের হাতে বন্দি নিজেদের চার নাগরিককে উদ্ধার করার কথা জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
অন্যদিকে ইসরায়েলের এই অভিযানে অন্তত ২১০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার শাসকদল হামাস। তারা আরও বলছে, ইসরায়েলি এই অভিযানে আহত হয়েছে অন্তত চার শতাধিক ফিলিস্তিনি।
শনিবার গাজার মধ্যাঞ্চলীয় আল নুসেইরাত এলাকায় এই অভিযান চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। জিম্মি উদ্ধারে এই অভিযানের সময় আকাশ থেকে বিমান হামলাও চালানো হয় নুসেইরাত এলাকায়।
নুসেইরাতে ইসরায়েলি বাহিনী ও হামাসের মধ্যে নিয়মিতই সংঘর্ষ হয়। এলাকাটি ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় হতাহতের সংখ্যাও হয় বেশি।
স্থানীয় চিকিৎসা কর্মকর্তারা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর শনিবার নুসেইরাতে চালানো ইসরায়েলি এই অভিযানকে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী দিন বলে বর্ণনা করেছেন।
জিয়াদ নামে নুসেইরাতের এক অধিবাসী ও প্যারামেডিক বলেন, “ইসরায়েলের ড্রোন ও যুদ্ধবিমানগুলো সারারাত লোকজনের বাড়িতে এবং যারা সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল তাদের ওপর গুলি ও বোমা হামলা চালায়।”
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে একটি মেসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে তিনি জানান, এই বোমা হামলায় একটি স্থানীয় বাজার এবং আল আওদা নামের একটি মসজিদকেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়।
জিয়াদ বলেন, চারজনকে মুক্ত করতে তারা ডজন ডজন নিরাপরাধ বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে।
ইসরায়েলি সামরিক মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, “নুসেইরাতের একটি আবাসিক এলাকার কেন্দ্রস্থলে অভিযানটি চালানো হয়েছিল। সেখানকার দুটি পৃথক অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকে ওই চার জিম্মিকে বন্দি করে রাখা হয়েছিল।
তিনি বলেন, “জিম্মিদের গাজার বেসামরিক লোকজনের মাঝে লুকিয়ে রেখেছিল হামাস, কিন্তু তাদের পাহারায় ছিল সশস্ত্র যোদ্ধারা।”
অভিযানের সময় ইসরায়েলি বাহিনী হামাসের তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়ে জানিয়ে হাগারি বলেন, “এক পর্যায়ে হামাসের সঙ্গে ব্যাপক বন্দুকযুদ্ধ শুরু হয়। তখন ইসরায়েলি বাহিনী একযোগে রাস্তা থেকে ট্যাঙ্ক দিয়ে এবং আকাশ থেকে বিমান হামলা চালায়।
“আমরা প্রায় ১০০ জন ফিলিস্তিনির নিহত হওয়ার কথা জানি। তবে, তাদের মধ্যে কয়জন হামাস সন্ত্রাসী আর কয়জন বেসামরিক তা নিশ্চিত নই।”
স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মী ও বাসিন্দারা বলছেন, হামলায় বহু লোক নিহত হয়েছে এবং একটি বাজার ও একটি মসজিদের চারপাশে নারী, পুরুষ ও শিশুদের ছিন্নভিন্ন লাশ পড়ে আছে।
এই অভিযানে ইসরায়েলের স্পেশাল ফোর্সের একজন কমান্ডোও নিহত হয়েছে।
ইসরায়েল উদ্ধার পাওয়া জিম্মিদের নাম প্রকাশ করেছে। তারা হলেন নোয়া আরগামানি (২৬), আলমোগ মেইর জান (২২), আন্দ্রে কোজলোভ (২৭) ও স্লোমি জিভ (৪১) । এদের মধ্যে নোয়া আরগামানি নারী ও বাকি তিনজন পুরুষ।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলার সময় হামাসের যোদ্ধারা এই চারজনসহ আড়াইশ’ মতো ইসরায়েলিকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। হামাসের ওই হামলায় নিহত হয়েছিল প্রায় ১২০০ ইসরায়েলি।
এরপর থেকে গাজায় পাল্টা হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েলি বাহিনী। তাদের পাল্টা হামলায় গাজায় এ পর্যন্ত ৩৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
তথ্যসূত্র: রয়টার্স, বিবিসি, আল জাজিরা