এবার হামলা করার আগে ইরানকে জানিয়ে রেখেছিল ইসরায়েল; ২৫ দিন আগে ইসরায়েলে হামলার আগেও তেল আবিবকে বার্তা পাঠিয়েছিল তেহরান। কেন দুটি দেশই হামলার আগে পরস্পরকে জানাচ্ছে?
গাজায় যুদ্ধ চলছে, লেবাননের হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলও যুদ্ধে লিপ্ত- মধ্যপ্রাচ্য তো বড় আকারের যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতই হয়ে আছে। তার মধ্যে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাঁধলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেবে বলে আশঙ্কা।
তার মধ্যেই ইরান ও ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলা চলছে। তবে সেই হামলার আগে প্রতিপক্ষকে জানিয়ে রাখার বিষয়টি কৌতূহল তৈরি করছে সবার মধ্যেই।
তেহরানে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াহকে হত্যার পর লেবাননে ইরান সমর্থিত সশস্ত্র দল হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরাল্লাহসহ সংগঠনটির শীর্ষ নেতাদের হত্যার প্রেক্ষাপটে গত ১ অক্টোবর ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে প্রায় ২০০ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল ইরান।
তখন বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছিল, ইসরায়েলে যে ড্রোন হামলা হবে, সেই খবর প্রতিবেশী দেশগুলোকে জানিয়েছিল তেহরান। যার অর্থ খবরটি ইসরায়েলের পাওয়ার পথ করে দিয়েছিল তারা।
তখন জর্ডান, তুরস্ক ও ইরাকি কর্মকর্তারা তখন তেহরানের আগাম বার্তা পাওয়ার খবর জানিয়েছিলেন।
তখন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসাইন আমিরাআবদোল্লাহিয়ান জানিয়েছিলেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর পাশাপাশি ইসরায়েলের মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্রকেও হামলার ৭২ ঘণ্টা আগে খবরটি দেওয়া হয়েছিল।
ওয়াশিংটন তখন হামলার আগাম খবর পাওয়ার কথা অস্বীকার করলেও তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তখন জানিয়েছিল যে হামলার বিষয়ে তারা যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান উভয়ের সঙ্গে আলোচনা করেছিল।
২৫ দিন পর শনিবার ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালায়। ইসরায়েল সামরিক বাহিনী আইডিএফ জানিয়েছে, ইসরায়েলের ওপর চালানো হামলায় ব্যবহৃত ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণের স্থাপনা ছিল তাদের হামলার লক্ষ্য।
পাশাপাশি ভূমি থেকে আকাশে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র প্রক্রিয়াসহ ইরানের আকাশ সক্ষমতাকে ভোঁতা করাও হামলার উদ্দেশ্য ছিল বলে জানায় আইডিএফ।
সফল হামলা চালিয়ে ইসরায়েলের বৈমানিকরা ঘাঁটিতে ফিরে এসেছে বলেও আইডিএফ জানায়।
হামলায় ক্ষতির পরিমাণ সীমিত বলে জানিয়েছে ইরান; তবে দুজন সৈন্য নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করেছে।
এই হামলা চালানোর আগে তেল আবিব তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে তেহরানে খবর পাঠিয়েছিল বলে জেরুজালেম পোস্ট, টাইমস অব ইসরায়েলের মতো ইসরায়েলি সংবাদপত্রগুলো খবর দিয়েছে।
‘অনুতাপের দিনগুলো’- অভিযানের এই নাম দিয়েছে ইসরায়েল; ইরানকে লক্ষ্য করেই যে অভিযানের এই নাম, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের কর্মকর্তারা জানান, তিনটি পর্যায়ে এই বিমান হামলা হয়েছে। প্রথম ধাপে হামলা হয় ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা লক্ষ্য করে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে হামলা হয় ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ঘাঁটি এবং সমরাস্ত্র তৈরির স্থাপনাগুলোয়।
তেল আবিবের উচ্চ পর্যায়ের একটি সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, তৃতীয় একটি পক্ষ নয়, একাধিক পক্ষের মাধ্যমে তেহরানকে খবর পাঠানো হয়েছিল।
একজন কর্মকর্তা বলেন, “বার্তা দিয়ে তেল আবিব এটা স্পষ্ট করতে চেয়েছে যে ইরানে ইসরায়েল কী করতে যাচ্ছে, আর কী করতে যাচ্ছে না।”
এর প্রতিশোধ যেন না চালানো হয়, সেই বিষয়েও ওই বার্তায় ইরানকে বলা হয়েছে। বার্তায় হুঁশিয়ার করা হয়েছে, প্রতিশোধমূলক হামলা হলে ইসরায়েলকেও বড় অভিযানের দিকে যেতে হবে।
শনিবারের হামলায় প্রতিশোধ হিসাবে নতুন কোনও হামলার কথা তাৎক্ষণিকভাবে বলেনি তেহরান।
যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তারা ইরানকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারও প্রতিশোধমূলক হামলা না চালাতে ইরানকে আহ্বান জানিয়েছে।
ইরান পাল্টা হামলা চালালে মধ্যপ্রাচ্যে বড় যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা সবার। তবে হামলার আগে দুই পক্ষের বার্তা পাঠানো থেকে কূটনীতিকরা বলছেন, সম্ভবত এদের কেউ পুরোদমে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে চায় না।
ইসরায়েলও যে বড় যুদ্ধে জড়াতে চায় না; তার পক্ষে যুক্তি হিসাবে দেখানো হচ্ছে, হামলার ক্ষেত্রে ইরানের তেল স্থাপনা ও পরমাণবিক স্থাপনা এড়িয়ে যাওয়া।
ইসরায়েল ইতোমধ্যে বলেছে, ১ অক্টোবর তাদের ওপর চালানো হামলার প্রতিশোধ নেওয়া শেষ হয়েছে। অর্থাৎ, নতুন হামলা না হলে তারাও হামলা চালাবে না।
যে কয়েকটি সূত্রে ইরানকে হামলার বার্তা আগেই পাঠানো হয়, বলা হচ্ছে, তার একটি নেদারল্যান্ডসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাসপার ফেল্ডক্যাম্প।
তিনি এক্স প্লাটফর্মে লিখেছেন- “ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। যুদ্ধ ও ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা নিয়ে আমরা কথা বলেছি। এটা যেন আর না বাড়ে, সবার প্রতি সেই আহ্বানই আমি জানাচ্ছি।”
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার মুখপাত্র শন সাভেটও বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে কূটনৈতিক তৎপরতার মধ্য দিয়েই উত্তেজনা প্রশমন করতে চায় ওয়াশিংটন।
“ইরানের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, ইসরায়েলে হামলা যেন তারা বন্ধ করে। কারণ তাহলে সেই হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনাই ঘুরেফিরে আসবে,” বলেন তিনি।