Beta
সোমবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
সোমবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৫

রাফায় ইসরায়েলি হামলায় পুড়ে মরল ফিলিস্তিনিরা

Rafah
[publishpress_authors_box]

গাজার উদ্বাস্তুদের শেষ আশ্রয়স্থল রাফার একটি তাঁবুর শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় পুড়ে মরলো অনেক ফিলিস্তিনি।

নিরাপদ অঞ্চল হিসাবে স্বীকৃত রাফার তাল আস-সুলতানে এই হামলায় প্রায় ৪০ জন নিহত এবং কয়েক ডজন আহত হয়েছেন। নিহতদের বেশিরভাগই বাস্তুচ্যুত নারী ও শিশু।

প্যালেস্টাইন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (পিআরসিএস) বলেছে, নিহতদের বেশিরভাগই নিজেদের তাঁবুর ভেতরে জীবন্ত পুড়ে মারা গেছেন।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) হামলার কথা স্বীকার করে বলেছে, তাদের বিমান বাহিনী রাফায় হামাসের একটি ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছিল।

আইডিএফের দাবি, এই হামলায় হামাসের পশ্চিম তীরের একজন প্রধান কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন, যিনি ইসরায়েলিদের উপর হামলায় জড়িত ছিলেন।

তবে হামলায় বেসামরিক মানুষদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথাও স্বীকার করে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী বলেছে, ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা জানান, রবিবার জাবালিয়া, নুসেইরাত ও গাজা সিটি সহ অন্যান্য অঞ্চলেও ইসরায়েলি বাহিনী বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের আশ্রয়কেন্দ্রে বোমা হামলা চালিয়েছে। এদিন সবমিলিয়ে  কমপক্ষে ১৬০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

তাল আস-সুলতানের প্রত্যক্ষদর্শীরা স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানান, রবিবার স্থানীয় সময় রাত ৮ টা ৪৫ মিনিটে অন্তত আটটি ক্ষেপণাস্ত্র তাঁবুর শিবিরটিতে আঘাত করে। হামলার পর পুরো শিবিরে আগুন ধরে যায়।

রাফা শহরের কুয়েতি হাসপাতালে আগত আহতদের একজন বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, “বিমান হামলায় তাঁবু পুড়ে গেছে, তাঁবু গলে গেছে এবং মানুষের দেহও গলে গেছে।”

হামলার পর রাফার কুয়েতি হাসপাতালে আহত ফিলিস্তিনি শিশু।

এর আগে রবিবার সকালে রাফা থেকে হামাস সদস্যরা ইসরায়েলের সাবেক রাজধানী তেল আবিবে রকেট হামলা চালিয়েছিল। সেই হামলার পর রাতে ইসরায়েল এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়।

ইসরায়েল বলেছে, রবিবার রাফাহ এলাকা থেকে হামাস সদস্যরা তেল আবিবে অন্তত আটটি রকেট ছুড়েছে। তবে হামলায় কোনও ইসরায়েলি নাগরিক হতাহত হয়নি।

এদিন প্রায় চার মাস পর ইসরায়েলে রকেট হামলা চালালো ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার শাসকগোষ্ঠী হামাস।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ ও আহ্বান উপেক্ষা করে গাজার রাফায় ইসরায়েলি সেনারা স্থল অভিযান শুরু করার তিন সপ্তাহের মাথায় তেল আবিবে ওই হামলা চালায় হামাস।

গত শুক্রবার আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) রাফায় ইসরায়েলের হামলা বন্ধে একটি রায়ও দেয়। কিন্তু ইসরায়েল সেই আদেশ মানেনি।

ইসরায়েল প্রায় তিন সপ্তাহ আগে রাফায় সামরিক অভিযান শুরু করে, যেখানে প্রায় ১৫ লাখ ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছিল। হামলা শুরুর পর সেখান থেকে ইতিমধ্যেই প্রায় ৮ লাখ ফিলিস্তিনি পালিয়ে গেছে।

ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক ফ্রান্সেস্কা আলবানিজ রাফায় তাঁবুর ক্যাম্পে ইসরায়েলের হামলাকে “আরও ভয়াবহ” বলে বর্ণনা করেছেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে এক পোস্টে তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক আইন ও ব্যবস্থার স্পষ্ট অবাধ্যতা সহ এই নিষ্ঠুরতা অগ্রহণযোগ্য। বাহ্যিক চাপ ছাড়া #গাজা গণহত্যা সহজে শেষ হবে না। ইসরায়েলকে অবশ্যই ন্যায়বিচার ও নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি করতে হবে। চুক্তি, বাণিজ্য, অংশীদারত্ব এবং বিনিয়োগ স্থগিতের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ফোরামে তাদের অংশগ্রহণ বন্ধ করতে হবে।”

আবাসনের অধিকার সম্পর্কিত জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক বালাকৃষ্ণান রাজাগোপাল বলেন, “রাফাহতে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা আতঙ্কিত নারী ও শিশুদের ওপর হামলা করা এক ভয়ংকর নৃশংসতা। আমাদের এখনই ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে সমন্বিত বৈশ্বিক পদক্ষেপের প্রয়োজন।”

গত ৭ মাসেরও বেশি সময় ধরে গাজায় চলমান ইসরায়েলের সামরিক আগ্রাসনে প্রায় ৩৬ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের এক অতর্কিত হামলার জবাবে গাজায় ইসরায়েলের এই আগ্রাসন শুরু হয়। হামাসের হামলায় প্রায় ১২০০ ইসরায়েলি নাগরিক নিহত হয়। এ ছাড়া হামাস ইসরায়েল থেকে ২৫২ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায়।

তথ্যসূত্র : বিবিসি, আল জাজিরা, রয়টার্স

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত