সারাবিশ্বের মুসলমানরা রোজার ইফতারে যে খাদ্যপণ্যটি অত্যাবশ্যক ভাবেন, সেই খেজুর রপ্তানিতে বিশ্বে শীর্ষে ইসরায়েল। তবে এবার গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর আক্রমণের পর ইসরায়েলি খেজুর বয়কটের ডাক আসছে বিভিন্ন দেশের মুসলমানদের কাছ থেকে।
রপ্তানিতে শীর্ষে হলেও খেজুর উৎপাদনে ইসরায়েল বিশ্বে প্রথম নয়, এই স্থানটি দখল করে আছে আরব দেশ মিশর।
খেজুর মূলত উষর আরব দেশের ফল। ২০২২ সালে এই ফল উৎপাদনে শীর্ষ ১০ দেশের নয়টিই ছিল আরব অঞ্চলের।
বিশ্বে খাদ্যপণ্য আমদানি-রপ্তানির তথ্য সংরক্ষণকারী তথ্যভাণ্ডার ট্রিজের তথ্যে দেখা যায়, ২০২২ সালে বিশ্বে মোট ১০ বিলিয়ন কেজি খেজুর উৎপাদন হয়েছিল। এর ১৮ শতাংশ বা প্রায় এক-পঞ্চমাংশ উৎপাদন হয় আফ্রিকার আরব দেশ মিশরে।
খেজুর উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ হলো সৌদি আরব। বিশ্বের মোট উৎপাদনের প্রায় ১৭ শতাংশ আসে এই দেশ থেকে। ১৩ শতাংশ উৎপাদন করে তৃতীয় স্থানে রয়েছে আলজেরিয়া।
ইরান ও ইরাকও খেজুর উৎপাদনে শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে রয়েছে। তাদের বাইরে শীর্ষ ১০ এ জায়গা করে নেওয়া একমাত্র দেশ হলো দক্ষিণ এশিয়ার পাকিস্তান।
অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি খেজুর আমদানি করে থাকে ভারত। খেজুর আমদানিতে তার পরেই রয়েছে মরক্কো।
ট্রিজের তথ্য বলছে, ২০২২ সালে ৩৩০ মিলিয়ন ডলারের খেজুর রপ্তানি করে এ ক্ষেত্রে বিশ্বে শীর্ষস্থানে ছিল ইসরায়েল। এর পরের স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, তারা ২০২২ সালে ৮২ মিলিয়ন ডলারে খেজুর রপ্তানি করে।
অন্যদিকে স্ট্যাটিসটার তথ্যে ইসরায়েল শীর্ষে থাকলেও দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে তিউনিসিয়া, ২৭৩ মিলিয়ন ডলারের খেজুর রপ্তানি করে।
রপ্তানিকারকদের তালিকায় এর পরের স্থানগুলোতে রয়েছে যথাক্রমে তিউনিসিয়া, আমিরাত, ইরান, সৌদি আরব, আলজেরিয়া, ইরাক, যুক্তরাষ্ট্র, মিশর ও নেদারল্যান্ডস।
ইসরায়েলের খেজুর বিভিন্ন দেশে গেলেও তার প্রধান ভোক্তা মূলত ইউরোপের দেশগুলো। গাজা যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় এখন সে দেশগুলোতে ইসরায়েলি খেজুর বর্জনের ডাক দিয়েছেন সেখানকার অনেক মুসলমান।
গত ছয় মাস ধরে চলা গাজা যুদ্ধে ৩২ হাজার মানুষ মারা গেছে। ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনি নিহতের ঘটনায় বিশ্বজুড়েই চলছে নিন্দা-প্রতিবাদ।
এরমধ্যে যুক্তরাজ্যে প্রচার চলছে ইসরায়েলি খেজুর বয়কটের। ইউরোপের এই দেশটিতে খেজুর মূলত ইসরায়েল থেকেই যায়।
এক তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ২০২০ সালে ইসরায়েল থেকে ৩ হাজার টন খেজুর আমদানি করেছিল যুক্তরাজ্য, তাতে ব্যয় হয় ৯৬ লাখ ডলার।
আরব নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের মুসলমানরা এতদিন হালাল খাবার বেছে নিতে দেখা গেলেও এবার খেজুরের বেলায় তারা দেখছেন, এটা ইসরায়েলের কি না?
ফিলিস্তিনিদের সমর্থকারী গ্রুপ ‘ফেন্ডস অব আল-আকসা (এফওএ)’ ইসরায়েলি খেজুর বর্জনের ডাক দিয়ে একটি ক্যাম্পেইন শুরু করেছে।
‘চেক দ্য লেবেল’ স্লোগানে দীর্ঘদিন ধরেই ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের আহ্বান জানিয়ে আসছিল তারা। এবার হ্যাশট্যাগ করে সোশাল মিডিয়ায় প্রচার চালাচ্ছে। রমজানের মধ্যে তাদের প্রচার জোরদার হয়েছে।
এফওএ’র সংগঠক সামিউল জোয়ারদার আরব নিউজকে বলেন, তারা মসজিদে মসজিদে এর প্রচার চালাচ্ছেন। তাতে সাড়াও পাচ্ছেন।
ইসরায়েলি পণ্য বর্জনের মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনে দেশটির দখলদারত্বের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন বলে দাবি করছেন তারা।
জোয়ারদার বলেন, ভোক্তাদের বিভ্রান্ত করতে ইসরায়েল তাদের পণ্যে উৎস দেশের তথ্য গোপন করছে।
ইসরায়েলি খেজুর বয়কটের পাশাপাশি ফিলিস্তিনের খেজুর কেনায়ও উৎসাহিত করছে এফওএ। দাতব্য সংগঠন পেনি অ্যাপিল ফিলিস্তিনের জেরিকো থেকে আসা খেজুর বিক্রিও শুরু করেছে।
যুক্তরাজ্যের মতো মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ কিছু দেশেও ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের আওয়াজ উঠেছে।
তবে এই বয়কটের ধাক্কায় ইসরায়েলের খেজুর রপ্তানির ওপর কতটা প্রভাব পড়েছে, সে বিষয়ে কোনও তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি।