জ্বালানি তেলের দাম ১০ থেকে ১৮ টাকা কমানো সম্ভব বলে মনে করে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। এজন্য বাজারভিত্তিক ও আন্তর্জাতিক মূল্যের সঙ্গে সমন্বয়েরে পরামর্শ প্রতিষ্ঠানটির।
বৃহস্পতিবার ঢাকার গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত সংলাপে জ্বালানি তেলের দাম কমানোর বিষয়ে একথা বলেছেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
‘বাজারভিত্তিক জ্বালানির মূল্য : সরকারের নেতৃত্বাধীন উদ্যোগ এবং সম্ভাব্য পূর্নমূল্যায়ন’ শীর্ষক সংলাপে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) এখন যে ফর্মুলা ব্যবহার করে জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ করছে তা সংশোধন করলে ডিজেলের ক্ষেত্রে ১৮ টাকা, অকটেনের ক্ষেত্রে ১৩ টাকা এবং পেট্রোলের ক্ষেত্রে ১০ টাকা লিটারপ্রতি কমানোর সুযোগ রয়েছে।”
এতে ভোক্তারা উপকৃত হওয়ার পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির চাপও কমবে বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বলেন, “আমরা জ্বালানি তেলের দাম বাজারভিত্তিক করার জন্য কাজ করছি। সিপিডির এই পর্যবেক্ষণ আমরা মূল্যায়ন করব। এতে ভোক্তারা উপকৃত হবে বলে আমরা মনে করি।”
বিপিসি গত মার্চ থেকে একটি ডাইনামিক ফর্মুলা অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করছে জানিয়ে বিপিসির চেয়ারম্যান (সেক্রেটারি) আমিন উল আহসান বলেন, “এছাড়াও বিপিসি জ্বালানির দাম বাজারভিত্তিক করার চেষ্টা করছে। কিন্তু এখানে কিছু জ্বালানি অপচয় হয়। সোজা বাংলা কথায় যদি বলি, চুরি হয়। যা বন্ধ করা গেলে আরও কিছুটা সাশ্রয়ী দামে জ্বালানি সরবরাহ করা যেত।”
সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা সহযোগী হেলেন মাশিয়াত প্রিয়তী ও প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট ফয়সাল কাইয়ুম। এতে উপস্থিত ছিলেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম।
এসময় সিপিডির পক্ষ থেকে জ্বালানি ব্যবস্থাপনায় মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি, মূল্য নির্ধারণ, বাস্তবায়ন ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বিইআরসি’র হাতে ন্যস্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। পাশাপাশি গণশুনানির মাধ্যমে জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতেও পরামর্শ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, “বিগত সরকারের সঙ্গে তেলের দাম নিয়ে আলোচনা আবর্জনায় পরিণত হয়েছে। গত সরকার জ্বালানির দাম নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করে করত। এখনকার সরকারের অন্য কোনও স্বার্থ নেই। এ কারণে তেলের দাম নির্ধারণে জনগণের স্বার্থটাই বিবেচনা করা উচিত।”
খাদ্যের মতো জ্বালানি নিশ্চিত করাও সরকারের মৌলিক দায়িত্ব উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বিপিসি জ্বালানি থেকে ১৩-১৪ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করে। সরকার একইসঙ্গে মুনাফা ও ট্যাক্স নিয়ে থাকে। এটা সরকারের কাজ নয়।”
জ্বালানির মূল্য নির্ধারণে সিঙ্গাপুর, দুবাইয়ে বৈঠক হয় জানিয়ে তিনি বলেন, “এসব মিটিংয়ের নামে বাড়তি খরচ করে জ্বালানির দাম নির্ধারণের ওপর চাপানো হয়।”
এনার্জি প্যাকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিপার ভাইস-প্রেসিডেন্ট হুমায়ুন রশিদ বলেন, “গ্যাসের দাম ১৫ টাকা থেকে কয়েকগুণ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি না করে গ্যাস সরবরাহ করার কথা। কিন্তু প্রতিনিয়ত ক্ষতি হচ্ছে, তিতাস গ্যাস সে ক্ষতির কথা বিবেচনা করছে না।”
দেশের তৈরি পোশাক খাতসহ শিল্পের জন্য সঠিক নীতি ও সঠিক মূল্যে গ্যাস সরবরাহের তাগিদ দেন তিনি।
বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র জ্বালানি বিশেষজ্ঞ তৌহিদ মওলা বলেন, বাজারভিত্তিক মূল্য পদ্ধতিতে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম যতই বাড়ুক দেশের বাজারের যেন সর্বোচ্চ ১০ শতাংশে উপরে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে দেশের বাজারে সর্বনিম্ন ৫ শতাংশ কমানোর পরামর্শ দেন তিনি।
বিশ্বব্যাংকের এই জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বলেন, “দেশের প্রান্তিক মানুষের কাজে ডিজেল ব্যবহার হয়ে থাকে। এ কারণে ডিজেলের দাম পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে।”