টেনিসে বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক নারী রেফারি হিসেবে ম্যাচ পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা আগেই হয়েছিল মাসফিয়া আফরিনের। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় রমনা শেখ জামাল জাতীয় টেনিস কমপ্লেক্সে পরিচালনা করেন জুনিয়র বিশ্ব টেনিস সিরিজ।
আগামী ৮-১৩ জানুয়ারি দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হবে আইটিএফ ওয়ার্ল্ড জুনিয়র টেনিস টুর্নামেন্ট। দেশের বাইরে কোনো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় প্রথমবার রেফারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বাংলাদেশের মাসফিয়া। তিনি থাকবেন মূলত সহকারি রেফারির দায়িত্বে।
দিল্লির প্রতিযোগিতা শেষে ১৫-২০ জানুয়ারি কলকাতায়ও একই টুর্নামেন্টে সহকারি রেফারি থাকবেন তিনি। এই টুর্নামেন্টে অংশ নিতে গতকাল ভারত গেছেন মাসফিয়া।
খেলোয়াড় হিসেবেই ক্যারিয়ার বেছে নিতে চেয়েছিলেন মাসফিয়া। কিন্তু চোট তাকে সেই স্বপ্ন পূরণ করতে দেয়নি। এর আগে ২০১০ সাল থেকে খেলেছেন জাতীয় ও বয়সভিত্তিক একাধিক আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে। সেই অভিজ্ঞতা তো আছেই। এরপর রেফারিংয়ের লেভেল ওয়ান কোর্স করেছেন ২০২২ সালে। সে বছর ঢাকায় হয়েছিল আইটিএফ (আন্তর্জাতিক টেনিস ফেডারেশন) অনূর্ধ্ব-১৪ ডেভেলপমেন্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। ওই টুর্নামেন্টে সহকারী রেফারি ছিলেন মাসফিয়া।
২০২২ সালে ভারতের সিলভার ব্যাজ রেফারি অভিষেক মুখার্জীর তত্ত্বাবধানে আয়োজন করা হয় ‘ন্যাশনাল লেভেল অফিসিয়েটিং স্কুল’। সেখানে অংশগ্রহণকারী ২২ জন রেফারির মধ্যে টপ স্কোরার ছিলেন মাসফিয়া। সেই পারফরম্যান্স এবার আইটিএফের টুর্নামেন্টে রেফারির দায়িত্ব পেতে সাহায্য করেছে তাকে।
দশ বছরের খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ারে অনূর্ধ্ব-১০, অনূর্ধ্ব-১২, অনূর্ধ্ব-১৪, অনূর্ধ্ব-১৬ পর্যায়ে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন মাসফিয়া। মেয়েদের জাতীয় র্যাঙ্কিংয়ে ছিলেন দ্বিতীয় স্থানে। প্রথম মেয়ে হিসেবে আইটিএফ ডেভলপমেন্ট বৃত্তি নিয়ে উজবেকিস্তানে খেলেছেন তিনি। খেলেছেন মালেয়িশয়ায় অনুষ্ঠিত বিলি জিন কিং কাপের জুনিয়র টুর্নামেন্টে। এ ছাড়া নেপালে অনুষ্ঠিত আইটিএফ অনূর্ধ্ব-১২ আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপে আর ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও ভারতে খেলেছেন আইটিএফ অনূর্ধ্ব-১৪ চ্যাম্পিয়নশিপে। শ্রীলঙ্কায় খেলেছেন বিশ্ব জুনিয়র টেনিস টুর্নামেন্টে।
কাঁধের চোটের কারণে খেলা ছেড়ে এখন পুরোপুরি রেফারিংয়ে ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন দেখছেন মাসফিয়া। তিনি বলছিলেন, ‘আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের একমাত্র মেয়ে রেফারি আমি। স্বপ্ন দেখি একদিন সাদা ব্যাজের রেফারি হওয়ার। তাহলে হয়তো একদিন গ্র্যান্ড স্লাম চালাতে পারব।’
শুরুতে ভারতে যাওয়া নিয়ে বেশ সংশয় ছিল মাসফিয়ার। পড়তে হয়েছিল ভিসা জটিলতায়। মাসফিয়ার বাবা মুহাম্মদ মাহমুদ আলম বলছিলেন, ‘আমি তো ভেবেছিলাম মেয়ের যাওয়া হবে না ভারতে। ওখানকার আমন্ত্রণপত্রসহ নানা কাগজপত্র জমা দেওয়ার পরই ভিসা এসেছে। অবশেষে মেয়ে যেতে পেরেছে এতেই আমি খুশি।’