সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরতদের সঙ্গে ছাত্রলীগের মধ্যরাতে দফায় দফায় সংঘর্ষের পর থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে ঢাকার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে।
মঙ্গলবার সকালে সাভারে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে বিপুল সংখ্যক পুলিশের অবস্থান দেখা গেছে।
শিক্ষার্থীরা হল থেকে বের হতে চাইলেই তাদের ফিরে যেতে বলছে পুলিশ সদস্যরা। এনিয়ে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের তর্কে জড়াতেও দেখা যাচ্ছে।
তবে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনও কথা বলতে রাজি হননি।
এদিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন, সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ছাত্রলীগের হামলায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।
এবিষয়ে ছাত্রলীগের কোনও ভাষ্য পাওয়া যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. আলমগীর কবির বলছেন, পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল।
সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহাল করে গত মাসে হাইকোর্ট রায় দেওয়ার পর এই মাসের শুরুতেই ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে আন্দোলন শুরু হয়।
ঢাকায় শাহবাগে কেন্দ্রীয়ভাবে কর্মসূচি ঘোষণার পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভ, ক্যাম্পাস সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছিল।
সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলকারী শিক্ষার্থীর ওপর সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের হামলার পর তার প্রতিবাদে সন্ধ্যায় জাহাঙ্গীরনগরেও বিক্ষোভ শুরু হয়। তারপরই বাঁধে সংঘর্ষ।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সামনে গেলে তাদের ওপর হামলা হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আরিফ সোহেল বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে বঙ্গবন্ধু হল এলাকায় গেলে ছাত্রলীগ আমাদের ওপর হামলা করে।
“তারা আগে থেকেই লাঠিসোঁটা নিয়ে প্রস্তুত ছিল। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে। যদিও তারা আগে থেকেই হামলার ব্যাপারে জানত।”
ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেল এবং সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনের নেতৃত্বে হামলা হয়েছিল বলে আন্দোলনকারীদের অভিযোগ।
ওই হামলার পর ক্যাম্পাস উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। আবাসিক এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে কয়েকশ শিক্ষার্থী উপাচার্যের বাড়ির সামনে জড়ো হন।
সেখানেও ছাত্রলীগ হামলা চালায় বলে আন্দোলনরতদের অভিযোগ। তারা বলছে, হেলমেট পরে, লাঠি হাতে ছাত্রলীগের কর্মীরা তাদের ওপর চড়াও হয়েছিল।
মধ্যরাতে উপাচার্যের বাড়ির সামনে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া সংঘর্ষ শুরু হলে প্রশাসন পুলিশ ডেকে আনে।
প্রক্টর আলমগীর কবির বলেন, “আমরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ার আগেই শিক্ষার্থীরা ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি তখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল।”
পুলিশ শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিপেটা ও রবার বুলেট ছোড়ে। তখন গুলির শব্দও শুনতে পাওয়ার কথা জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
এরপর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরাও পাল্টা হামলা চালিয়ে বিভিন্ন হলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের কক্ষ ভাংচুর করে বলে খবর পাওয়া গেছে।
পুলিশের হামলায় বহু শিক্ষার্থীর সঙ্গে কয়েকজন শিক্ষক ও সাংবাদিকও আহত হয়।