সরকার জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে; নিষিদ্ধ করা হয়েছে দলটির সহযোগী সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির ও ইসালামী ছাত্রীসংস্থাকেও।
বৃহস্পতিবার বিকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক শাখা থেকে ‘সন্ত্রাসী’ দল হিসাবে জামায়াতকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি হয়। এ বিষয় নিয়ে এখনই প্রতিক্রিয়া জানাতে চাইছে না দলটির দীর্ঘদিনের মিত্র বিএনপি।
গত শতকের নব্বইয়ের দশকে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে আন্দোলনের সময় দাবিটি জোরাল হয়ে উঠেছিল। পরে ২০১৩ সালে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনে তা আরও জোর পায়।
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এক রায়ে জামায়াতকে ‘ক্রিমিনাল দল’ আখ্যায়িত করার পর দল হিসাবে তাদের বিচারের দাবিও উঠেছিল শাহবাগ আন্দোলন থেকে। সেই বিচারের পথ তৈরি করতে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়ার কথা আওয়ামী লীগ সরকার বললেও এক দশকেও তা হয়নি।
এর মধ্যে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার জন্য জামায়াত-শিবিরকে দায়ী করে গত সোমবার আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের বৈঠকে দলটিকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত আসে। এরপর নিষিদ্ধের প্রক্রিয়া শুরু করে সরকার। নির্বাহী আদেশে দলটিকে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তের পর দুদিনে আইন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নথি চালাচালির পর প্রজ্ঞাপন আসে।
দেরিতে হলেও সরকারকে ধন্যবাদ : তরিকত ফেডারেশন
প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “প্রতিক্রিয়া কিছু নাই। প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ আছে। ২০০৯ সালে কেস করেছিলাম। ইতিহাসের পার্ট তো হইছি আমারাও।”
তিনি বলেন, “অনেকে দাবি করছে, আমরা সরাসরি কাজ করেছি। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য একটা ভালো দিক। এখন কেউ স্বাধীনতার বিরুদ্ধে, সংবিধানের বিরুদ্ধে কাজ করতে ভয় পাবে। দেরিতে হলেও সরকার যে এটা করছে এজন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।”
১৪ দলের সাম্প্রতিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়ার বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান বলেন, “প্রধানমন্ত্রীও আফসোস করে বলেছিলেন, যখন নিবন্ধন বাতিল করেছে, তখনই সর্বোচ্চ আদালতকে সম্মান জানিয়ে নিষিদ্ধ করতাম তাহলে এতো লাশ দেখতে হতো না।”
জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধ হওয়ায় উৎফুল্ল হওয়ার কিছু নেই বলে মনে করেন তিনি।
নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী বলেন, “এটা আরও আগে হওয়া উচিত ছিল। সুশীল সমাজসহ সবার দাবি ছিল। এখন দেখা দরকার সরকার তাদের কীভাবে হ্যান্ডেল করে। তারা যাতে নতুন মোড়কে আসতে না পারে। তাহলে সুফল দেশ ভোগ করতে পারবে না।”
এটা না করলেও পারত : ইসলামী আন্দোলন
জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার প্রতিক্রিয়ায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনুস আহম্মেদ সেখ সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “যারা দেশের নাগরিক রাজনীতি করা তাদের সাংবিধানিক অধিকার। আওয়ামী লীগের সঙ্গে তারা যুগপৎ আন্দোলন করেছে। তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে দেশের বিশেষ কোনও ফায়দা হবে বলে মনে হয় না।
“যদি অন্যায়ভাবে কোনও দলকে বন্ধ করা হয়, সেটা ঠিক হবে না। দেশকে শান্ত রাখতে হলে এটা না করলেও পারত। দেশকে শান্ত রাখতে হলে অনেক কিছু চিন্তা ভাবনা করে করতে হয়।”
সরকার একটি নিন্দনীয় কাজ করেছে : এলডিপি
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপির) প্রেসিডেন্ট অলি আহমদ মনে করছেন, সরকার জামায়াতের নামটা নিষিদ্ধ করেছে, জামায়াতের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করতে পারবে না।
সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি বলতে চাই- জামায়াতের নিষিদ্ধের মাধ্যমে সরকার একটি নিন্দনীয় কাজ করেছে। দেশের সংবিধান অনুযায়ী তাদেরও রাজনীতি করার অধিকার আছে।”
বর্তমান সরকারকে অবৈধ উল্লেখ করে অলি আহমদ বলেন, “জামায়াতকে ব্যান্ড করার আইনগত বৈধতা তাদের নেই। এই সরকার ১৫ দিনে কয়েকশ সন্তানকে গুলি করে হত্যা করেছে। এই সরকার দুর্নীতি করার লোভে ক্ষমতায় টিকে আছে। তাদের কাউকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে নাই। এই সরকার যত দ্রুত পালাবে ততই মঙ্গল হবে।”
আরও আগেই করা উচিত ছিল : ওয়ার্কার্স পার্টি
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন মনে করেন, আরও অনেক আগেই জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা উচিত ছিল।
জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “প্রতিক্রিয়ার কী আছে? আমরাই তো বলেছি নিষিদ্ধ করা হোক। ৯০ সালের আগে থেকেই বলে আসতেছি। আরও আগেই করা উচিত ছিল।”
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের এই নেতা আরও বলেন, “উল্টো পরিবেশে করা হলো, যার ফলে কিছু লোকজনের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হবে। অনেকেই বলা শুরু করেছে এটা এই সময়ে কেন? যারা বলছে, তারাও এটা চায়।”
কোর্টে গেলেই তো এই সিদ্ধান্ত বাতিল হয়ে যাবে : বাসদ
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ মনে করছেন, আদালতে গেলে জামায়াতকে নিষিদ্ধের এই সিদ্ধান্ত বাতিল হয়ে যাবে।
জামায়াতকে নিষিদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “সরকার জামায়াত নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু যুদ্ধাপরাধী সংগঠন হিসেবে তো তাদের নিষিদ্ধ করা হলো না। করা হয়েছে সন্ত্রাস বিরোধী আইনের ১৮(১) ধারা দিয়ে। মানে একটি সংগঠনকে আপনি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করলেন।
“কোর্টে গেলেই তো এই সিদ্ধান্ত বাতিল হয়ে যাবে। মূলত সরকার শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের দিক থেকে দৃষ্টি সরাতে এ রায় দিয়েছে। সরকার ভেবেছে দেশের মানুষ এই সিদ্ধান্তে সরকারের পক্ষে থাকবে। কিন্তু মানুষ সরকারের এই চালে পা দিবে না। লড়াইটা এখন সকল বৈষম্যের বিরুদ্ধে।”
২০১৩ সালে করলে আরও কার্যকর হতো : গণজাগরণ মঞ্চ
জামায়াতকে নিষিদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “উচ্চ আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালে যখন এই যুদ্ধাপরাধী সংগঠনটির নিবন্ধন বাতিল করেছিল নির্বাচন কমিশন, তখনই তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলে তা আরও কার্যকর হতো।
“গণজাগরণ মঞ্চের দাবি উত্থাপনের দীর্ঘ ১০ বছর পর জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও, দেশের নানা স্তরে এমনকি খোদ সরকারি দলের মধ্যেও জামায়াত-শিবির ও তাদের জঙ্গিমনস্কতার ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। এই ভাইরাস দূরীকরণে সরকার কী করবে এখন তাই দেখার।”
যুদ্ধাপরাধী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করতে হবে : সিপিবি
জামায়াতে ইসলামীকেকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নয়, যুদ্ধাপরাধী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করতে হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সভাপতি শাহ আলম।
জামায়াতকে নিষিদ্ধের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সিপিবি সভাপতি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “জামায়াতের রাজনীতি আমাদের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। কিন্তু এতদিন তারা রাজনীতি করার সুযোগ পেল। অনেক আগে থেকেই জামায়াতসহ সকল সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি আমাদের ছিল।
“কিন্তু সরকারের নানান রাজনৈতিক সমীকরণে এতদিন তা করেনি সরকার। এখন যে নিষিদ্ধ করল তাতেও নানান রকমের সমীকরণ রয়েছে। জামায়াতকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নয়, যুদ্ধাপরাধী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করতে হবে।”
দেরিতে হলেও সঠিক পদক্ষেপ : জাসদ
দেরিতে হলেও জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা সঠিক পদক্ষেপ বলে মনে করেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু।
জামায়াতকে নিষিদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “জামায়াত ও ইসলামী ছাত্রশিবির সাম্প্রদায়িক গণহত্যার সঙ্গে জড়িত। এরা সাম্প্রদায়িকতার সমর্থকের দল। স্বাধীন হওয়ার পরও এদের চরিত্র বদলায়নি। এরা ধর্মকে ব্যবহার করে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়েছে।
“সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে আমার মনে হয়, দেরিতে হলেও সঠিক পদক্ষেপ নিয়েছে। আরও আগে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা ভালো ছিল। অন্য কোনও ব্যানার নিয়ে আসলেও তাকে নিষিদ্ধ করা হবে।”
আন্দোলনের বিজয় হিসেবে দেখছে একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি
জামায়াত ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার বিষয়টিকে নিজেদের আন্দোলনের বিজয় হিসেবে দেখছে একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি।
জামায়াত নিষিদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, “এটা আমাদের ৩৩ বছর ধরে দাবি ছিল। আমাদের আন্দোলনের বিজয় হিসেবে এটাকে দেখি। কিন্তু এটা আরও আগে করা উচিত ছিল। কিন্তু এটাই শেষ নয়।”
জামায়াতের অর্থনৈতিক কাঠামো না ভাঙ্গতে পারলে দলটির মওদুদীবাদের দর্শন আটকানো যাবে না বলে মনে করেন শাহরিয়ার কবির।
তিনি বলেন, “জামায়াতের অর্থনৈতিক কাঠামো না ভাঙ্গতে পারলে জামায়াতের মওদুদীবাদের দর্শন আটকানো যাবে না। একই সাথে জামায়াতের নেতারা অন্য কোনও সংগঠনের নামে যেন রাজনীতি না করতে পারে সেদিকেও আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। সরকারের এখন আরও বেশি ভূমিকা নিতে হবে। জামায়াত শুধু না, এর মানসিকতা দূর করতে হবে।”
মওদুদীর জামায়াত পাকিস্তানেও হয়েছিল নিষিদ্ধ
অখণ্ড ভারতে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠা হলেও পাকিস্তানকে ভিত্তি করে এগিয়েছে দলটি। তবে সেই দেশেও একাধিকবার নিষিদ্ধ হয়েছিল।
১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর পাকিস্তানে অন্তত দুই বার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। দলটির প্রতিষ্ঠাতা আবুল আলা মওদুদীর মৃত্যুদণ্ডও হয়েছিল সামরিক আদালতের রায়ে, যদিও তাকে সেই শাস্তি ভোগ করতে হয়নি। জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠা ১৯৪১ সালের ২৬ আগস্ট। মওদুদীর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা দলটির নাম তখন ছিল জামায়াতে ইসলামী হিন্দ।
মওদুদীর জন্ম বর্তমান ভারতের মহারাষ্ট্রের আওরঙ্গবাদ শহরে। তার পড়াশোনার শুরু মাদ্রাসায়। কিছুদিন সাংবাদিকতাও করেছিলেন তিনি। প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা বেশি দূর না এগোলেও ধর্মীয় বিষয়ে পড়াশোনায় মনোযোগ ছিল তার।
দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তি ভারত ভাগের পর পাকিস্তানে গিয়ে জামায়াতের কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে থাকেন মওদুদী। ইসলামী ভাবাদর্শে দল গঠনকারী মওদুদী ধর্ম নিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্রকে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের কুফল হিসাবে দেখতেন।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার এক বছরের মধ্যে ইসলামী সংবিধান ও ইসলামী সরকার প্রতিষ্ঠার আওয়াজ তুলে ১৯৪৮ সালে গ্রেপ্তার হন মওদুদী। কিন্তু ১৯৪৮ সালের ২২ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর মৃত্যুর পর ১৯৪৯ সালে মওদুদী মুক্তি পান এবং রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন তিনি।
এরপর মওদুদীর নেতৃত্বে আহমদিয়াদের ‘অমুসলিম’ ঘোষণার দাবি ওঠে। তা কেন্দ্র করে লাহোরে দাঙ্গা বাধে। তাতে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ২ শতাধিক মানুষ প্রাণ হারায়।
সেই ঘটনায় সামরিক আদালতে মওদুদীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ হয়েছিল। কিন্তু সে রায় আর কার্যকর হয়নি। প্রথমে মৃত্যুদণ্ডের সাজা লঘু করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছিল, পরে দণ্ড মওকুফ করে মুক্তি দেওয়া হয় তাকে।
১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের প্রথম সামরিক শাসক হিসেবে আইয়ুব খান ক্ষমতা নেওয়ার পর সব ধর্মীয় রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করেন। তাতে জামায়াতও নিষিদ্ধ হয়েছিল।
আইয়ুব খানের আমলে প্রণীত মুসলিম পারিবারিক আইনের বিরোধিতা করে পরিস্থিতি নাজুক করার চেষ্টা চালালে ১৯৬৪ সালে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হয়।
পাকিস্তানের দৈনিক ডনের সূত্রে জানা যায়, তখন নির্বাহী আদেশে ‘বেআইনি সংগঠন’ হিসাবে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। নিষিদ্ধের আদেশে বলা হয়েছিল, জামায়াত ও দলটির নেতারা রাষ্ট্রীয় সংহতি ও ঐক্য বিনষ্টের কাজে সক্রিয় ছিলেন। রাষ্ট্রের শত্রুদের কাছ থেকে দলটির অর্থ নেওয়ার প্রমাণও রয়েছে।
১৯৬৪ সালে আইয়ুব খানের সরকার মওদুদীকে আবার কারাগারে পাঠালেও পরে মুক্তিও দেওয়া হয় তাকে। মওদুদী ৭৫ বছর বয়সে ১৯৭৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে মারা যান।
পাকিস্তানে জামায়াতে ইসলামী রাজনৈতিক দল হিসাবে এখনও সক্রিয় আছে। তবে তাদের প্রভাব দিন দিনই কমছে। এই বছরের শুরুতে পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচনে জাতীয় পরিষদের ২৬৬ আসনের মধ্যে ২৪৩টিতে প্রার্থী দিলেও একটি আসনেও জিততে পারেনি দলটি।
বাংলাদেশে দ্বিতীয়বার নিষিদ্ধ জামায়াত
একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া জামায়াতের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ ভূমিকার বিষয়টি আলোচিত। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সরকার ধর্মীয় সব দল নিষিদ্ধ করলে জামায়াতও সেই কাতারে পরে নিষিদ্ধ হয়। তবে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশের যে উল্টোযাত্রা শুরু হয়, তাতে পুনর্বাসিত হয় জামায়াত।
জিয়াউর রহমানের আমলে জামায়াত সক্রিয় ওঠার পর এইচ এম এরশাদের আমলে দলটি সংসদেও আসন নেয়। এরপর ২০০১ সালে খালেদা জিয়ার সরকারে মন্ত্রীও করা হয় দলটির দুই নেতাকে, তাদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দেওয়াকে একাত্তরের লাখো শহীদের প্রতি ‘চপেটাঘাত’ বলে পরে মন্তব্য এসেছিল একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের মামলার এক রায়ে। ওই দুজন পরে যুদ্ধাপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে ফাঁসিতে ঝুলেছেন।