Beta
বুধবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
বুধবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২৫

ইফতারে বিএনপি নেতাদের পাশে রেখে যা বললেন জামায়াত আমির

সোনারগাঁও হোটেলে শনিবার জামায়াতে ইসলামীর ইফতার অনুষ্ঠানে যোগ দেন বিএনপির নেতারা।
সোনারগাঁও হোটেলে শনিবার জামায়াতে ইসলামীর ইফতার অনুষ্ঠানে যোগ দেন বিএনপির নেতারা।
[publishpress_authors_box]

আট বছর পর বড় আকারে ইফতার পার্টির আয়োজন করল জামায়াতে ইসলামী; ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে এই আয়োজনে যোগ দিলেন বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারাও।

দুই দলের আনুষ্ঠানিক জোট না থাকার মধ্যে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জামায়াতের অংশ নেওয়ার গুঞ্জন যখন ছড়াচ্ছে, তখন এক সঙ্গে দেখা গেল দল দুটির নেতাদের।

শনিবার জামায়াতের এই ইফতার অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে ছিলেন সাবেক স্পিকার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস। ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, জয়নাল আবেদীন ছিলেন অনুষ্ঠানে। কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে ছিলেন মো. আবদুস সালাম, মজিবুর রহমান সরোয়ার, মাহবুব উদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, কায়সার কামাল, জহির উদ্দিন স্বপন, অপর্ণা রায় এবং মিডিয়া সেলের শায়রুল কবির খান।

অন্য রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে ছিলেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান  অলি আহমদ, এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, বিকল্প ধারার নূরুল আমিন বেপারী ও শাহ আহমেদ বাদল, গণঅধিকার পরিষদের দুই অংশের নেতা নূরুল হক নূর ও ফারুক হাসান, জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান, জাতীয় পার্টির (জাফর) আহসান হাবিব লিংকন, বাংলাদেশ ন্যাপের এম এন শাওন সাদেকী, এনপিপির মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, গণদলের এ টি এম গোলাম মাওলা চৌধুরী, বাংলাদেশ জাতীয় দলের  সৈয়দ এহসানুল হুদা, জাগপার রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ লেবার পার্টির ফারুক রহমান, এনডিপির আবু তাহের, ইসলামী ঐক্যজোটের আবদুল করিম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের জাকির হোসেন খান, বাংলাদেশ ন্যাপের গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, এ বি পার্টির যোবায়ের আহমেদ ভুইয়া।

জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানের আমন্ত্রণে আয়োজিত ইফতার মাহফিলে অতিথিদের স্বাগত জানান দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।

বিএনপি সবশেষ ২০১৫ সালে হোটেল সোনারগাঁওয়ে জামায়াতের ইফতারে যোগ দিয়েছিল। সেবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নিজেই গিয়েছিলেন।

পরের বছরে জামায়াত ইফতার পার্টির আয়োজন করলেও পুলিশের বিধি-নিষেধে বাতিল হয়ে যায়। এরপর থেকে সেভাবে বড় আকারে ইফতার মাহফিল করে দেখা যায়নি দলটিকে।

১৯৯১ সালে সরকার গঠনে বিএনপিকে সমর্থন দিলেও দলটির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক জোট জামায়াত গঠন করেছিল ১৯৯৯ সালে, তখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। তার আগে ১৯৯৬ সালে বিএনপিকে ক্ষমতাচ্যুত করার আন্দোলনে জামায়াতও ছিল।

১৯৯৯ সালে চারদলীয় জোট গঠনের পর ২০০১ সালে জোটগতভাবে নির্বাচনের পর খালেদা সরকারে জামায়াতও যোগ দেয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনেও তাদের জোট ছিল অটুট।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর একাত্তরের যুদ্ধারাধের বিচারে জামায়াতের শীর্ষ নেতার সাজা হয়। তার প্রতিবাদে আন্দোলনে বিএনপিকে পাশে না পাওয়ার অভিযোগ তোলেন জামায়াতের নেতারা।

২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত কেউই যায়নি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে জামায়াতকে বা্দ রেখে বিএনপি কামাল হোসেনকে নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে জোট গড়েন। তবে ভোটে কয়েকটি আসনে জামায়াতকে ছাড় দিয়েছিল সেই জোট।

এরপর থেকে দীর্ঘদিনের মিত্র দলটির সঙ্গে বিএনপির টানাপড়েন বারবারই আসছিল আলোচনায়। তবে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক কতটুকু রয়েছে, সেই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর কখনও আসেনি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছ থেকে।

গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিল দুটি দলই। আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও বিএনপি না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। তবে উপজেলা নির্বাচনে জামায়াতের কেউ কেউ অংশ নিতে পারেন বলে গুঞ্জনের মধ্যে দুই দলকে আবার কাছাকাছি হতে দেখা যাচ্ছে।

গত বছর বিএনপির ইফতারে যেখানে জামায়াতকে দাওয়াতই দেওয়া হয়নি, সেখানে এবছর ইস্কাটন গার্ডেনে লেডিস ক্লাবে ইফতার পার্টিতে দাওয়াত পায় জামায়াত। দলটির আমিরসহ শীর্ষ চার নেতা যোগও দেন তাতে।

যা বললেন জামায়াত আমির

ইফতার অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতাদের পাশে রেখে জামায়াত আমির শফিকুর রহমান বলেন, “বিগত আটটি বছর আমরা সকলে মিলে ইফতার মাহফিলের সুযোগ পাইনি। আজকের ইফতার আয়োজন নিয়েও প্রতিকূলতা ছিল।”

আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ করে জামায়াত আমির বলেন, “ক্ষমতায় যারা আছেন, আমরা তাদের দুষমন নই। একই রক্ত আমাদের সকলের শরীরে। আমরা তাদেরও কল্যাণ কামনা করি। আমরা সবাইকে সত্যের পথে আসতে বলি, হঠকারিতার পথ পরিহার করতে বলি।

“আমাদের ওপর আঘাত এলে তা প্রতিরোধ করার অধিকার আমার আছে। কারও ওপর গায়ে পড়ে লাগতে চাই না। তবে কেউ যদি পায়ে পাড়া দিয়ে লাগতে চায়, তবে আমাকে তো আমার দায়িত্ব পালন করতেই হবে।”

সংগ্রামের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শফিকুর বলেন, “মুক্তি কখনও বিনা সংগ্রামে বা যুদ্ধে আসে না। এ জাতিকে মুক্তির স্বাদ দিতে হলে আরেকটিবার সত্যের পক্ষে বুক শক্ত করে দাঁড়াতে হবে।”

জাতীয় স্বার্থকে সামনে রেখে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান পর্যালোচনা করার আহ্বান জানান তিনি। সেই সঙ্গে কোনও হঠাকারিতা কিংবা বিশৃঙ্খলা কিংবা সহিংসতা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন তিনি।

ইফতার মাহফিলে জামায়াত নেতাদের মধ্যে ছিলেন সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, আ ন ম শামসুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম খান, হামিদুর রহমান আযাদ, মতিউর রহমান আকন্দ, আব্দুল হালিম, এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল, শাহজাহান চৌধুরী, নূরুল ইসলাম বুলবুল, মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত