জুলাই সনদ নিয়ে মতৈক্য প্রতিষ্ঠায় আলোচনা চলার মধ্যে রাজপথে জামায়াতে ইসলামীর কর্মসূচি রাজনৈতিক অঙ্গনে সৃিষ্ট করেছে কৌতূহল।
অন্তর্বর্তী সরকার আলোচনার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতৈক্য প্রতিষ্ঠায় এখনও আশাবাদী হলেও জামায়াত বলছে, এই আলোচনা সফল হওয়ার কোনও সম্ভাবনা তারা দেখছে না। এদিকে বিএনপি তাদের এই কর্মসূচিকে সন্দেহের চোখে দেখছে বিএনপি।
গত বছর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের দীর্ঘদিনের মিত্রতা বৈরিতার দিকে গড়াতে থাকে। দলটি নেতাদের পাল্টাপাল্টি বাক আক্রমণেও দেখা যাচ্ছে, যা আগে কখনও দেখা যায়নি।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংবিধান, সরকার ব্যবস্থা, নির্বাচনসহ নানা ক্ষেত্রে যে মৌলিক সংস্কারে হাত দিয়েছে, সেই প্রশ্নে দল দুটির মধ্যে মতভেদ এখন প্রকাশ্য।
সংস্কারের সব প্রস্তাব এক করে জুলাই সনদ প্রণয়নে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ধারাবাহিক বৈঠক চালিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত মতৈক্য প্রতিষ্ঠা হয়নি।
ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিজয়ে চাঙা জামায়াত এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার বিক্ষোভের কর্মসূচি ডাক দেয়। তাদের সঙ্গে ইসলামী আন্দোলনসহ আরও কয়েকটি ইসলামী দলও যুগপৎ কর্মসূচি পালন করে।
সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে সংসদ নির্বাচন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নসহ পাঁচ দাবিতে সারাদেশে এই বিক্ষোভ করে জামায়াত। ঢাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ হয় বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকে।
সেই সমাবেশে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “আলোচনা সফল হওয়ার সম্ভাবনা দেখছি না বলেই আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।”
নির্বাচনের আগেই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়ার দাবি তুলেছে জামায়াত। অন্তর্বর্তী সরকার তার সংস্কারের প্রতিশ্রুতি েথকে সরে যাচ্ছে বলে মনে করছে দলটি।
পরওয়ার বলেন, “মনে হয় কোনও চাপের মধ্যে পড়ে সরকার শুভংকরের ফাঁকির দিকে যাচ্ছে।”
বিএনপির দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “ফ্যাসিবাদের রাষ্ট্র কাঠামো সংশোধনের জন্য এত আলোচনা হলেও একটি দল বলছে সবকিছু পরে হবে। সবকিছু যদি পরেই হবে, তাহলে এত আলোচনা কেন?”
সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি নিয়ে বিএনপির বিরোধিতার প্রেক্ষাপটে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, “যারা দেশে আবারও কর্তৃত্বপরায়ণ সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তারাই সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে।”
জামায়াতের সঙ্গে যুগপৎ কর্মসূচিতে বায়তুল মোকাররমের উত্তর ফটকে সমাবেশ করে ইসলামী আন্দোলন।
সেই সমাবেশে দলটির জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিমও সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির দাবি তুলে বলেন, “বিএনপির একজন নেতা বলেছেন যে ৯০ শতাংশ ভোট তাদের। যদি তাই হয়, তাহলে তো তারা আসন পাবে ২৭০ এর ওপরে। সমস্যা কোথায়?”

তাদের সমাবেশের ঠিক আগে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ফরেইন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন উপদেষ্টা পরিষদের সভার সিদ্ধান্ত জানাতে।
তাকে সাংবাদিকরা জামায়াতের বিক্ষোভ নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনা এখনও চলমান।
“আমরা আশাবাদী যে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনার মাধ্যমেই সবকিছুর সমাধান হবে।”
অন্যদিকে জামায়াত বিক্ষোভ কর্মসূচি ডাকার পর তা নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে প্রতিক্রিয়া জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।
আলোচনা চলার মধ্যে জামায়াতের বিক্ষোভ নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, এটা এক ধরনের ‘স্ববিরোধিতা’।
“এই আন্দোলন কাদের বিরুদ্ধে, সেটা দেখতে হবে। এটা কি অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে, নাকি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বিরুদ্ধে, নাকি বিএনপির বিরুদ্ধে? এটা নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার কোনও কৌশল কি না, সেটাও দেখতে হবে,” বলেন সালাহউদ্দিন।



