কে হবেন পরের ০০৭, সেটি যে হাতেগোনা কয়জন জানেন তাদের একজন অ্যামাজন এমজিএম স্টুডিওর গ্লোবাল হেড জেনিফার সালকি। জেমস বন্ড এবং রকি-র মতো গ্লোবাল বক্স অফিসের দুই অমূল্য ফিল্ম সিরিজের গ্লোবাল ফ্র্যাঞ্চাইজ এমজিএম।
২০২১ সালে আমাজন যখন ১০০ বছরের পুরনো এমজিএম কিনে নেয় তখন সালকি ছিলেন ক্রেতা দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। ৪ হাজার মুভি এবং ১৭ হাজার ঘণ্টার টিভি প্রোগ্রামের মালিকানা পেয়েছিল অ্যামাজন সাড়ে ৮ শ কোটি ডলারের ওই চুক্তির মাধ্যমে। এর মধ্যে ছিল এমজিএমের জনপ্রিয় সিরিজ ‘গোন উইথ দ্য উইন্ড’ থেকে ‘হবিট’ এবং ‘হ্যান্ডমেইডস টেল’ থেকে ‘লিগ্যালি ব্লন্ড’-এর মতো জনপ্রিয় সিরিজ।
তবে সবকিছুর চেয়েই এগিয়ে জেমস বন্ড। চিরতরুণ বন্ড নিয়ে কখনওই দর্শকদের আগ্রহের ঘাটতি ছিল না।
তবে জেমস বন্ডের মালিকানা স্বত্বের নানা সমীকরণের জটিলতা রয়েছে। ২০২২ সালে এমজিএমকে কিনে নেয়ার সময় আমাজন জেমস বন্ডের ২৫টি সিনেমার মালিকানাও পেয়েছিল। তবে আসলে পার্টনারশিপে জেমস বন্ড কেবল এমজিএমের ছিল না। ১৯৬২ সাল থেকে চলে আসা ৬২ বছর বয়সী এই ফিল্ম ফ্র্যাঞ্চাইজির মূল মালিকানা ও নিয়ন্ত্রক আইওএন প্রোডাকশন, যেটির সিদ্ধান্ত গ্রহণে মূল ভূমিকা রাখেন বারবারা ব্রোকলি এবং মাইকেল জি উইলসন।
এখানে একটি কথা বলে রাখা ভাল, এমজিএম জেমস বন্ড প্রোডাকশনের বিশ্বব্যাপী বাজারজাতকরণে যুক্ত হয়েছে এটি চালুর প্রায় ২০ বছর পর, ১৯৮১ সালের দিকে।
ড্যানিয়েল ক্রেইগের পর জেমস বন্ড কে হবেন- তা নিয়ে জল্পনা কল্পনার মধ্যে নাম এসেছে ইদ্রিস এলবা থেকে অ্যারন টেলর-জনসন পর্যন্ত। সম্প্রতি অ্যামাজন-এমজিএম প্রোডাকশনের সল্টবার্ন ফিল্মখ্যাত তারকা ব্যারি কেওহানও জেমস বন্ড চরিত্রে অভিনয় করতে পারেন বলে মিডিয়া পাড়ায় চলছে জোর সোরগোল।
সুপার স্পাই সিনেমার শেষ সিরিজটি মুক্তি পেয়েছিল ২০২১ সালে। ‘নো টাইম টু ডাই’ এর জেমস বন্ড চরিত্রে শেষবারের মতো অভিনয় করেছিলেন ড্যানিয়েল ক্রেইগ। এরপরই অ্যামাজন কিনে নিয়ে এমজিএমকে। ফলে ৩ বছর ধরে জেমস বন্ড তৈরি বন্ধ তো বটেই, এমনকি এর মূল চরিত্রে কে অভিনয় করবেন- তাও পরিষ্কার নয়।
জেনিফার সালকি অবশ্য এই বিরতিতে ভক্তদের মতো অস্থির নন। বরং তিনি জেমস বন্ড নিয়ে ভক্তদের জল্পনা-কল্পনাকে উপভোগ করছেন বলেই মনে হচ্ছে।
তিনি বলেন, “অনেক জল্পনা-কল্পনা (সম্ভাব্য অভিনেতা নিয়ে) হচ্ছে, যেগুলো আমার কাছে আগ্রহোদ্দীপক বলেই মনে হয়েছে। আমি মনে করি, আমরা নানাভাবেই এগোতে পারি। আইওএন এবং বারবারা ও মাইকেলের সঙ্গে আমাদের ভালো এবং ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। জেমস বন্ডের বিস্ময়কর চলচ্চিত্রগুলো যেভাবে তৈরি হয়েছে, সেই প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত যাতে না ঘটে সেই চেষ্টাই করা হচ্ছে। আমাদের ভালোর জন্যই, আমরা তাদের (আইওন প্রডাকশন) নেতৃত্ব নিচ্ছি।”
তিনি আরও বলেন, “বিশ্বব্যাপী দর্শকরা ধৈর্য ধরবে বলেই মনে করছি। আমরা চলচ্চিত্রের মধ্যে খুব বেশি সময়ের ব্যবধান চাই না, তবে আমরা এই মুহূর্তে উদ্বিগ্ন নই।”
ব্রকোলি অর্থাৎ আইওএন পরিবার ও সালকির ‘জেমস বন্ড’-কে টিভি সিরিজ হিসেবে মুক্তি দেয়ার বিষয় নিয়ে টানাপড়েনের খবর কিছুদিন আগে পত্রপত্রিকায় প্রকাশ করা হয়।
সেটি নিয়ে সালকি বলেন, “টানাপড়েন হয়নি কখনওই। আসলে আমি সেইভাবে কথাটা বলিইনি। আপনি যখন জেমস বন্ডের মতো একটি আইকনিক সিরিজের দিকে তাকাবেন তখন এ সম্পদের দীর্ঘমেয়াদী ভবিষ্যতের কথাও আপনাকে ভাবতে হবে। সব হিসেব-নিকেশই আপনার বিবেচনায় রাখতে হবে।”
তিনি বলেন, “এমজিএম-এর সঙ্গে চুক্তির পর আমাজন এর সংগ্রহশালা স্ট্রিমিং জগতে এতো বড় হয়েছিল যে, সেটি আমার জন্যও ছিল অচেনা জলে সাঁতার কাটার মতো।”
সালকি বসেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার কালভার স্টুডিওতে। আমাজনের ফিল্ম ও টিভি স্ট্র্যাটেজির জন্য তাকে প্রায়ই যুক্তরাজ্যে আসতে হয়। গত সপ্তাহেও তিনি একারণে সেখানে গিয়েছিলেন।
এ বছরের শুরুতে আমাজন যুক্তরাজ্যের শেপারটনে তাদের এক্সক্লুসিভ স্টুডিও স্পেস চালু করে। সেখানে ‘দ্য ডেভিলস আওয়ার’ এর তৃতীয় সিজনের কাজও হয়েছে ইতিমধ্যে। নেটফ্লিক্সের পাশাপাশি আমাজনও সারেতে দ্বিতীয় বৃহত্তম ফিল্ম স্টুডিও কমপ্লেক্স বানিয়েছে।
আর গত জুলাইয়ে আমাজন বার্কশায়ারের ব্রে স্টুডিওস অধিগ্রহণ করেছে, যেটি মূলত হরর-থ্রিলার জনরার ‘হ্যামার ফিল্ম’ তৈরির পথিকৃত।
এই ব্রে স্টুডিওসে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি বাজেটের সিরিজ ‘লর্ড অব দ্য রিংস’-এর ‘দ্য রিংস অব পাওয়ার’ শুটিং করার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া প্রিয়াঙ্কা চোপড়া অভিনীত ‘সিটাডেল’-এর শুটও এখানেই করার কথা রয়েছে।
অ্যামাজন যুক্তরাজ্যে তাদের বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। যুক্তরাজ্যে তৈরি হওয়া বেশ কয়েকটি ফিল্ম ও টিভি সিরিজের প্রযোজনায় সাফল্য আসার কারণেই এ উদ্যোগ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে তাদের লক্ষ্য যুক্তরাজ্যে শক্তিশালী উপস্থিতির পাশাপাশি সেখানকার প্রতিভাধর অভিনেতা এবং সুযোগ কাজে লাগানো।
এরই ধারাবাহিকতায় একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল ‘দ্য রিংস অফ পাওয়ার’ এর প্রযোজনা নিউজিল্যান্ড থেকে যুক্তরাজ্যে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত।
এ পরিবর্তনের পেছনে বেশকিছু কারণও ছিল। এর একটি ছিল নিউজিল্যান্ডের দূরত্ব। শুটিংয়ে অভিনেতা-অভিনেত্রী এবং কলাকুশলীরা ‘হোম সিকনেসে’ ভুগতেন। কোভিড চলাকালীন আন্তর্জাতিক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এই পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছিল।
অ্যামাজন স্টুডিওর পরিচালনাকারী জেনিফার সালকি এসব ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
সালকির টেলিভিশন জগতে দীর্ঘদিনের কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। ১৯৯০ এর দশকে অ্যারন স্পেলিং প্রোডাকশনে যখন জনপ্রিয় সিরিজ ‘মারলোস প্লেস’ মুক্তি পাচ্ছে, তখন সেখানে কাজ করেছেন তিনি। টোয়েন্টিন্থ সেঞ্চুরি ফক্সে কাজ করার সময় ‘প্রিজন ব্রেক’, ‘টোয়েন্টি ফোর’, ‘মডার্ন ফ্যামিলির’ মতো সফল সিরিজ সেখান থেকে মুক্তি পেয়েছে।
২০১৮ সালে সালকি শীর্ষ ধনী জেফ বেজোসের মিডিয়া সাম্রাজ্যে কাজ শুরু করেন। যোগ দেন
অ্যামাজনের এনবিসি ইউনিভার্সালে। তখন এনবিসির স্ট্রিমিং সার্ভিস রীতিমত ধুঁকছিল। সালকির ছোঁয়ায় সেটি ‘দিস ইজ আস’ সিরিজ দিয়ে আবার চাঙা হয়।
][দ্য গার্ডিয়ান অবলম্বনে}