চাকরি সূত্রে ঢাকাতেই সংসার পেতেছেন যুবায়েদ আল মাসুম। প্রতিদিনই বের হতে হয় এই নগরীতে, দেখতে হয় যানজট আর দূষণ। ঈদের ছুটিতে প্রতিবারই বাড়ি যান, এবার ছুটি না পাওয়ায় যাওয়া হয়নি। সেই আফসোস হারিয়ে গেল অন্য রকম ঢাকা দেখে।
“বাড়ি যেতে পারিনি বলেই ঢাকার এত সুন্দর রূপ দেখতে পারলাম। ঈদের ঢাকা যে এত সুন্দর, আগে জানতাম না।”
ঈদের দিন মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়ে যানজটবিহীন ঢাকা দেখে এভাবেই নিজের মুগ্ধতা প্রকাশ করেন যুবায়েদ।
একটি বেসরকারি হাসপাতালের হিসাব বিভাগে চাকরি করেন তিনি। ঢাকায় থাকতে হওয়ায় রোজার ঈদের দিন বৃহস্পতিবার দুপুরে চন্দ্রিমা উদ্যানে বেড়াতে আসেন।
যুবায়েদ বলেন, “ঢাকায় সব সময় যানজট লেগেই থাকে। এছাড়া রাস্তায় বের হলে মানুষের ভিড় আর গাড়ির উচ্চ শব্দের হর্নে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। বাতাসে ধুলাবালির কারণে শ্বাস নেওয়ায় দায় হয়ে যায়। তাই সবসময় এসব যন্ত্রণা থেকে মুক্তির স্বপ্ন দেখতাম। “আজ মনে হচ্ছে, সেই স্বপ্ন পূর্ণ হলো। কোনও যানজট নেই, বাতাসে ধুলাবালিও অনেক কম। ফাঁকা ফুটপাত দিয়েও শান্তিমতো হাঁটা যাচ্ছে। আহা! ঢাকা যদি সবসময় এমন থাকত।”
যুবায়েদের কথা শুনে পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা একজন বলে উঠলেন, “সব সময় না ভাই, মাত্র ২/৩ দিন ঢাকার এমন চেহারা দেখতে পাবেন। তবে এবার মানুষজন লম্বা ছুটি পাওয়ায় ৪-৫ দিন ঢাকা ফাঁকা পেতে পারেন।”
পরিচয় জানতে চাইলে নিজের নাম সাইদুজ্জামান বলে জানান ওই ব্যক্তি। রায়েরবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তিনি।
সাইদুজ্জামান বলেন, “আমার বাসা রায়েরবাজারের নেকাব খান রোডে। আমি স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ায় সবসময়ই ঢাকায় ঈদ করতে হয়। তাই ঈদে ঢাকার এই চেহারা আমার খুবই পরিচিত। যানজটের শহর এই ঢাকায় ঈদের সময় একেবারেই পাল্টে যায়। কয়েকদিন কোনও যানজট থাকে না। রিকশা নিয়েই সবখানে যাতায়াত করা যায়। তাই প্রতি ঈদেই পরিবার নিয়ে ঘুরতে বের হই। আত্মীয়-স্বজনের বাসায় যাই।”
আজিমপুর থেকে সংসদ ভবনের ঘুরতে এসেছেন মো. হাসান ও সুমি দম্পতি। মোটরসাইকেলে আজিমপুর থেকে মাত্র ১০ মিনিটে সংসদ ভবনে আসতে পেরে দারুণ খুশি তারা।
হাসান বলেন, “অন্য সময় এই পথটুকু পাড়ি দিতেই ১ ঘণ্টা পার হয়ে যায়। আর আজ মনে হলো চোখের পলকেই চলে এলাম। জানি আর কয়েকদিন পরই এমন অবস্থা আর থাকবে না। তাই এখন বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছি।”
চন্দ্রিমা উদ্যানেই দেখা মিলল রিকশাচালক হাফিজুর রহমানের। বাড়ি তার সিরাজগঞ্জে। ঢাকায় থাকেন আদাবরের ১৭ নং বস্তিতে।
ঈদের নামাজ শেষেই রিকশা নিয়ে বেরিয়েছেন হাফিজ। তিনি বলেন, “আইজ কোনও জ্যাম নাই। আবার সব সড়কেই রিকশা চালানো যাইতেছে। তাই বেশি বেশি খ্যাপ মারতে পারতেছি। অন্যদিন হলে রিকশা নিয়া কখনও এইহানে আইতে পারতাম না।”
তবে ঢাকার এমন চেহারায় খুশি নন সিএনজি অটোরিকশাচালক মো. হালিম। তিনি বলেন, “আইজ সিএনজির কোনো জমা নেবে না মালিক। তাই ভাবছিলাম ইনকাম বেশি করতে পারমু। এই আশায় ঈদে বাড়িও যাইনি। কিন্তু আশা পুরণ হলো না।”
সকাল থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ২৩০ টাকা উঠেছে হালিমের; দিনের বাকিটা সময়ও ভালো যাবে বলে মনে করছেন না।
“রাস্তায় যেমন গাড়ি নাই, তেমনি মানুষও নাই। তাই শুধু শুধু বইসা আছি, ভাড়া মারতে পারতেছি না। যারা ঘুরতে বের হইছে তাদের বেশির ভাগই মোটরসাইকেল আর প্রাইভেট কারে ঘুরতাছে। আর বাকিরা রিকশার যাত্রী।”