বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক পদে নিয়োগ পাওয়ার পর যোগ দিয়েছেন নন্দিত নাট্যনির্দেশক সৈয়দ জামিল আহমেদ।
সোমবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে দুই বছরের জন্য তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার প্রথম দিন অফিস করতে গিয়েই কর্মকর্তা-শিল্পী-কর্মচারী ও সংস্কৃতি কর্মীদের ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হন তিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও অভিনন্দন বার্তা জানিয়েছেন শিল্প ও সংস্কৃতি অঙ্গন সংশ্লিষ্টরা।
সৈয়দ জামিল আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। নাট্যনির্দেশনায় তার খ্যাতি রয়েছে। তার নির্দেশিত নাটকগুলোর মধ্যে অন্যতম কমলা রানীর সাগর দীঘি (১৯৯৭), এক হাজার আর এক থি রাত (১৯৯৮), বেহুলার ভাসান (২০০৬), পাহিয়ে (২০০৬) এবং সং ভং চং (২০০৯), রিজওয়ান (২০১৭), ৪.৪৮ মন্ত্রাস (২০২০)।
মঞ্চনাটক, প্রায়োগিক মঞ্চনির্দেশনা, লোককথা ও সংস্কৃতি অধ্যয়নের ওপর ষাটের বেশি একাডেমিক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে তার।
শিল্পকলা একাডেমির পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নিজ কার্যালয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় পর্ব শেষে দুপুরে একাডেমির কর্মকর্তা, শিল্পী ও কর্মচারীদের নিয়ে জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে বিশেষ মতবিনিময় সভা করেন নতুন মহাপরিচালক।
এ সময় তিনি বলেন, “একাডেমির কর্মকাণ্ডকে সকল স্তরের মানুষের মাঝে আমরা পৌঁছে দিতে চাই। একাডেমির সকল কাজকর্ম হবে জবাবদিহিতামূলক ও স্বচ্ছ। আইন অনুযায়ী সকল কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে। আইন ও নিয়ম-নীতি বহির্ভূত কোনও কিছুই এখানে ঘটবে না।”
গত ১৬ জুলাই থেকে প্রায় দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে প্রতিষ্ঠানটিতে বন্ধ রয়েছে সংস্কৃতিচর্চার সব ধরনের কর্মকাণ্ড। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির কিছু দাপ্তরিক কাজও বন্ধ রয়েছে। ফলে ওই দিন থেকে বাতিল হতে শুরু করে পূর্বনির্ধারিত সব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নাটকের মঞ্চায়ন।
এরপর ১৯ জুলাই কারফিউ জারি হলে সেখানে সেনা ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। এখনও সেটি সরিয়ে নেওয়া হয়নি। বিষয়টি সকাল সন্ধ্যাকে নিশ্চিত করেছেন একাডেমির জনসংযোগ কর্মকর্তা সাবিনা ইয়াসমিন।
তিনি বলেন, “রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থেই সেনাবাহিনীকে এখানে ক্যাম্প করতে হয়েছে। ক্যাম্প এখনও আছে। শিল্পকলা একাডেমি থেকে তাদের সরে যেতে নিশ্চয়ই সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত প্রয়োজন হবে।”
তবে, কর্মদিবসের প্রথমেই দ্রুততম সময়ের মধ্যে শিল্পকলা একাডেমি খুলে দেওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন জামিল আহমেদ।
তিনি বলেন, “সম্প্রতি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা শিল্পকলা একাডেমিগুলোর সংস্কার ও কার্যক্রম দ্রুত চালুর ব্যাপারেও উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
এ সময় একাডেমির কর্মকাণ্ডকে এগিয়ে নিতে এবং সুষ্ঠু কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে – প্রবিধানমালা সংশোধন, কর্মঘণ্টা নির্ধারণ, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন সংকট এবং এ সংক্রান্ত নানান বিষয় তুলে ধরেন একাডেমির কর্মকর্তারা।
এর আগে নানা বিতর্ক ও অভিযোগ সঙ্গী করে টানা ১৩ বছর শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন লিয়াকত আলী লাকী।
গত ১২ আগস্ট ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন তিনি। ২০১১ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর অনেকবারই তাকে অপসারণের দাবি ওঠে। দুর্নীতির অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথাও জানা যায়। সবশেষ ২০২৩ সালে সপ্তমবারের মতো বাড়ানো হয় তার মেয়াদ।