Beta
মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ, ২০২৫

মন্দায় জাপান, টপকে গেল জার্মানি

SS-JAPAN-GERMANY-150224 (1)
[publishpress_authors_box]

যুক্তরাষ্ট্রের ডলারের বিপরীতে জাপানের মুদ্রা ইয়েনের মূল্য কমছে। দেশটিতে বেড়েছে খাদ্য, জ্বালানি ও অন্যান্য পণ্যের দাম। কমেছে ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা। এতে টানা ছয় মাস সংকোচনের পর গত বছরের শেষদিকে মন্দায় পড়েছে দেশটি। বিশ্ব অর্থনীতিতেও হারাতে হয়েছে অবস্থান। জাপানকে টপকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পর জার্মানি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

জাপানের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ২০২৩ সালের শেষ তিন মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। তার আগের তিন মাসে সংকুচিত হয়েছিল ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। এর জন্য ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়াকেই দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে।

সাধারণত টানা ছয় মাস (পরপর দুই ত্রৈমাসিক প্রান্তিক) কোনও দেশের অর্থনীতি সংকুচিত হলে দেশটি অর্থনৈতিক মন্দায় পড়েছে বলে ধরা হয়।

বৃহস্পতিবার জাপানের মন্ত্রী পরিষদের প্রকাশ করা তথ্য থেকে দেশটির অর্থনীতির এই পরিস্থিতি ধরা পড়েছে। অথচ অর্থনীতিবিদদের ধারণা ছিল, গত বছরের শেষ তিন মাসে জাপানের জিডিপি ১ শতাংশের চেয়ে বেশি বাড়বে।

তবে বলা হচ্ছে, সর্বশেষ প্রকাশিত এই তথ্য জাপানের অর্থনীতির প্রাথমিক মূল্যায়ন। এতে আরও কিছু সংশোধন আসতে পারে। তাতে হয়তো পরিস্থিতির কিছুটা হেরফের হতে পারে।

গত বছরের অক্টোবরে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) পূর্বাভাস দিয়েছিল, মার্কিন ডলারে পরিমাপ করা হলে জাপানকে ছাড়িয়ে জার্মানি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হতে পারে।

তবে, উভয় দেশ তাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পরিসংখ্যানের চূড়ান্ত তথ্য প্রকাশের পরই আইএমএফ তার র‌্যাঙ্কিংয়ে পরিবর্তন ঘোষণা করবে। ১৯৮০ সাল থেকে বিশ্ব অর্থনীতির এই র‌্যাঙ্কিং শুরু করে আইএমএফ।

অর্থনীতিবিদ নিল নিউম্যান বিবিসিকে বলেছেন, “সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানগুলোতে দেখা গেছে, ২০২৩ সালে জাপানের অর্থনীতি প্রায় ৪ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলারের। আর জার্মানির অর্থনীতি ছিল ৪ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলারের।

“ডলারের বিপরীতে জাপানি মুদ্রার দুর্বলতার কারণেই এমনটা ঘটেছে। তবে ইয়েনের মূল্য পুনরুদ্ধার করতে পারলে জাপান তৃতীয় স্থান ফিরে পেতে পারে।”

এর আগে ২০১০ সাল পর্যন্ত জাপান বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনীতির দেশ হিসেবে দাপট ধরে রেখেছিল, তবে ওই বছর চীনের অর্থনীতি জাপানকে ছাড়িয়ে যায়।

চলতি মাসে টোকিওতে এক সংবাদ সম্মেলনে আইএমএফের উপপ্রধান গিতা গোপিনাথও বলেছিলেন, তৃতীয় স্থান থেকে জাপানের পিছলে যাওয়ার বড় কারণ হলো, গত বছর মার্কিন ডলারের বিপরীতে ইয়েনের দাম প্রায় ৯ শতাংশ কমেছে।

তবে, ইয়েনের দুর্বলতা জাপানের কিছু বড় কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়াতেও সহায়ক হয়েছে। কারণ এতে দেশটির রপ্তানি পণ্য, যেমন গাড়ি বিদেশে সস্তা হয়। ফলে রপ্তানিও বাড়ে।

১৯৯০ সালের পর এই সপ্তাহে প্রথমবারের মতো টোকিওর পুঁজিবাজারের নিক্কেই ২২৫ সূচক বেড়ে ৩৮ হাজার পয়েন্টের মাইলফলক ছাড়ায়। বৃহস্পতিবার সূচকটি ৪৫৪ পয়েন্টে বেড়ে দাঁড়ায় ৩৮ হাজার ১৫৭ দশমিক ৯৪ পয়েন্টে। এর আগে ১৯৮৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর নিক্কেই ২২৫ সূচক সর্বোচ্চ ৩৮ হাজার ৯১৫ দশমিক ৮৭ পয়েন্টে উঠেছিল।

বৃহস্পতিবার টোকিওর একটি রাস্তায় ইলেকট্রনিক বোর্ডে টোকিও স্টক এক্সচেঞ্জের সূচকের অবস্থান দেখা যাচ্ছে।

জাপানের জিডিপি প্রবৃদ্ধির সর্বশেষ তথ্য থেকে আশঙ্কা করা হচ্ছে, দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণের খরচ বাড়াতে বহুল প্রত্যাশিত সিদ্ধান্তটি নিতে আরও দেরি করতে পারে।

ব্যয় ও বিনিয়োগ বাড়াতে ২০১৬ সালে ব্যাংক অব জাপান ঋণের সুদ হার কমিয়েছিল। কিন্তু সুদহার কমানোর ফলে ইয়েন বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ হারায়, এতে ডলারের বিপরীতে ইয়েনের দাম অনেক কমে যায়।

অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেওয়ায় জাপানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কবে থেকে তাদের এই অতি-শিথিল মুদ্রানীতি থেকে বেরিয়ে আসবে তা নিয়েও সন্দেহ তৈরি হয়েছে।

খাদ্য, জ্বালানি ও অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়ায় দেশটির ব্যক্তিগত ভোগ— যা দেশটির অর্থনীতিতে অর্ধেক অবদান রাখে, তা ২ শতাংশ কমেছে।

টোকিওভিত্তিক জাপানম্যাক্রোর কৌশলবিদ নিল নিউম্যান সিএনএনকে বলেছেন, জাপান তার জ্বালানি চাহিদার ৯৪ শতাংশ এবং খাদ্যের চাহিদার ৬৩ শতাংশ আমদানি করেই মেটায়। বেশি আমদানি নির্ভরতার কারণে দেশটির মুদ্রার মান কমার ফলে জীবনযাত্রার ব্যয়ও অনেক বেড়ে যায়।

নিউম্যান বলেন, “দেশটির ব্যক্তিগত ভোগ বিশেষভাবে দুর্বল ছিল এবং বাজারের প্রত্যাশা ছিল তা সমান হয়ে আসবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত জাপান সাগরের ভূমিকম্পের পর জানুয়ারিতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় মানুষ ভোগ কমিয়ে দেয়।”

অনেক বিশ্লেষক চলতি প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ ২০২৪ ) জাপানের অর্থনীতিতে আরও সংকোচন হওয়ার আশঙ্কা করছেন। চীনের বাজারে চাহিদা কমে যাওয়া এবং টয়োটা মোটর করপোরেশনের একটি ইউনিটে (৭২০৩টি) উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়াসহ নানা লক্ষণ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, জাপানের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও নতুন নীতিনির্ধারণ সামনে আরও কঠিন হয়ে উঠতে পারে।

দাই-ইচি লাইফ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী অর্থনীতিবিদ ইয়োশিকি শিনকে বলেছেন, “বিশেষ করে যা লক্ষণীয় তা হলো ভোগ ও ব্যয়ে স্থবিরতা, যা দেশীয় চাহিদার মূল স্তম্ভ।

“ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়ার কোনও চাবিকাঠি না থাকায় আপাতত জাপানের অর্থনীতি নতুন করে গতি পাবে না।”

মুডি’স অ্যানালিটিকসের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ স্টেফান অ্যাংরিক বলেছেন, “জিডিপিতে পরপর দুটি পতন এবং দেশীয় চাহিদায় পরপর তিনটি পতন খারাপ খবর। এমনকি সংশোধনের পর চূড়ান্ত পরিসংখ্যান যদি পরিবর্তিতও হয় তাতেও পরিস্থিতির খুব একটা হেরফের হবে না। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে সুদহার বাড়ানোও কঠিন হবে। ফলে সহসাই জাপান অর্থনৈতিক মন্দা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না।”

তথসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, সিএনএন

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত