Beta
মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

জীবন যাপনে জনপ্রিয় কিছু জাপানি মূল্যবোধ

japaneese-lifestyle
Picture of সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

জাপানের প্রসঙ্গ এলেই মনে পড়ে এনিমে আর দারুণ সব মডেলের গাড়ির কথা। তবে অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এ দেশটির মানুষের জীবনযাপনের নানাদিক ইদানিং লাইফস্টাইলের ট্রেন্ড হিসেবে পুরো পৃথিবীতেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। 

পারমাণবিক বোমায় একসময়ের বিধ্বস্ত জাপান এ সময় পৃথিবীর অন্যতম উন্নত দেশগুলোর তালিকায় অন্যতম। এমনকি গড় আয়ুর বিচারে জাপানিরা পৃথিবীতে দ্বিতীয়। কাজেই জীবনযাপন পদ্ধতিতে জাপানিরা যে অনুকরণীয় হবেন- তা আর বিচিত্র কি!

ইকিগাই

‘ইকিগাই’ শব্দটি দুটি জাপানি শব্দ থেকে উদ্ভূত। ‘ইকি’ অর্থ জীবন আর ‘গাই’ অর্থ মূল্য।

‘ইকিগাই’ হলো এমন কিছু করা যা জীবনকে অর্থপূর্ণ করে তুলবে। অথবা নিজের জন্য এমন কোন কাজ খুঁজে বের করা যে কাজ বেঁচে থাকার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। যে কাজ একইসঙ্গে একজন মানুষের ভেতর আনন্দ এবং সুখ বয়ে আনবে।

প্রতিটি মানুষের একটি হলেও ‘ইকিগাই’ আছে। কেবল দরকার নিজের আবেগ, শক্তি এবং জীবনবোধকে সময়ের প্রয়োজনের সাথে মিলিয়ে একান্ত নিজস্ব ‘ইকিগাই’টি খুঁজে পাওয়া। 

মনে মনে হয়তো ভাবছেন, কোনটি আপনার ‘ইকিগাই’? আর কিভাবেই বা খুঁজে পাবেন? 

তাহলে এই চারটি প্রশ্নের উত্তরে পেয়ে যেতে পারেন আপনার কাঙ্ক্ষিত ‘ইকিগাই’-

কোন কাজটি করতে আপনি ভালোবাসেন?

কোন কাজে আপনি খুব ভালো?

ওই কাজে কি আপনাকে সম্মানী দেওয়া যায়?

এই কাজটি কি পৃথিবীর কোন কাজে লাগে?

একবার ‘ইকিগাই’য়ের সন্ধান পেলে আপনার প্যাশন, মিশন, ভোকেশন আর প্রফেশন মিলে যাবে এক বিন্দুতে।  জাপানের ওকিনাওয়া দ্বীপের মানুষেরা বিশ্বাস করে যে ‘ইকিগাই’ হলো তাদের প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার কারণ।

ওয়াবি-সাবি

জাপানি সৌন্দর্য ধারণার প্রাণ হলো ওয়াবি-সাবি। 

ওয়াবি-সাবি নিখুঁত হবার পরিবর্তে আমাদের সরল এবং খাঁটি হতে বলে। জাপানের শিল্পে এবং সংস্কৃতিতে এটি মেনে চলা হয়। জেন বৌদ্ধধর্মের সঙ্গে এর দর্শনগত মিল রয়েছে। 

কিন্তু ওয়াবি-সাবির মানেটা কী?

ওয়াবি এবং সাবি দুটো আলাদা শব্দ যেগুলো পৃথক পৃথক অর্থ বহন করে। 

ওয়াবি হলো, সহজ এবং সরলতায় সৌন্দর্য খুঁজে পাওয়া ও আধ্যাত্মিক সমৃদ্ধির জন্য বৈষয়িকতা থেকে দূরে থাকা।

আর সাবি হলো, যেকোনও কিছু পুরোনো বা ক্ষয় হয়ে যাওয়ার যে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া তার ভেতর সৌন্দর্য খুঁজে পাওয়া।

হাল-জামানায় সবাই যেন ছুটছে ‘নিখুঁত’ কিছুর পেছনে। জীবনের শেষ কথা যেন ‘পারফেকশন’।

কিন্তু আদৌ কি তা সম্ভব?

সারাক্ষণ সাফল্যের চাপ আর সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেকে প্রকাশ করার তাড়া থেকেই এই অধরা ‘পারফেকশন’ এর ধারণা তৈরি হয়, যা কিনা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ফেলে নেতিবাচক প্রভাব। কেড়ে নেয় জীবনের সুখ।

নিজের জীবনে ওয়াবি-সাবির প্রয়োগ করতে নিচের পথগুলো বেছে নেওয়া যেতে পারে-

অতীত আর ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে মুহূর্তে বাঁচুন।

নিখুঁত হবার পরিবর্তে চোখ ফেরান সমৃদ্ধির দিকে, উৎকর্ষের দিকে।

নিজের যা আছে তাই নিয়ে সন্তুষ্ট হতে শিখুন।

জীবনের জয়–পরাজয়কে সমানভাবে আলিঙ্গন করুন। কারণ এ সমস্ত কিছুই আপনার জীবনকে সুন্দর করে তোলে।

ভুল থেকে শিখুন।

‘মা’ বা নেগেটিভ স্পেস

‘মা’ জাপানি জীবনবোধের খুব গুরুত্বপূর্ণ দিক। যা কিনা কোনকিছুর শুরু এবং শেষের মাঝে খানিক জিরিয়ে নেওয়াকে তুলে ধরে। এই ‘কোনকিছু’ হতে পারে যে কোন কাজ, হতে পারে যোগাযোগ, অথবা শিল্প চর্চা। জাপানি কলা এবং স্থাপত্যের অন্যতম দিক হলো এই ‘মা’।   

‘মা’ আমাদের এই জীবনযাত্রায় বিশ্রামের উপর গুরুত্ব দেয়। যুগের কথিত চাহিদার সাথে তাল মেলাতে গিয়ে আমরা ভুলে যাচ্ছি স্থিরতা। কিন্তু ‘মা’ জোর দেয় স্থিরতার ওপর। 

ইংরেজিতে ‘মা’ এর অর্থ হলো গ্যাপ, স্পেস ইত্যাদি।  

এই প্রশান্তি জায়গা শুধু নিজের জন্য তা কিন্তু নয়। এটি প্রযোজ্য বন্ধু, সঙ্গির জন্যও। 

সোশ্যাল মিডিয়ার এই ভরা জোয়ারে আমরা আমাদের মস্তিষ্ককে তথ্যের ভারে জর্জরিত করছি। অন্যের ব্যক্তিগত এবং সামাজিক নানান তথ্য আমাদের নিজেদের নিয়ে ভাববার ফুরসৎ দিচ্ছে কই? 

কিন্তু ‘মা’ জাপানিদের সত্যিকারের সামাজিকীকরণের পথ বাতলে দেয়। অন্যকে যথাযথ সম্মানের সাথে মনোযোগ দিতে শেখায়। 

খেয়াল করবেন, জাপানিরা যখন পরিচিত হবার সময় কারও সামনে মাথা নোয়ান তখনও সেটা বেশ ধীরে।

তাই ‘মা’ এর অনুশীলন আপনাকে নীরবে এবং ধীরে চিন্তাভাবনা করতে শেখায়। আপনাকে করে তোলে একজন পরিশীলিত মানুষ। এই চর্চা আপনাকে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবেও একজন উন্নত মানুষে পরিণত করে।

কিন্তু কিভাবে করবেন এর অনুশীলন? 

জেনে নিন-

যখন আপনি একা থাকবেন তখন ফেসবুকে স্ক্রলিং না করে একা থাকা উপভোগ করুন। নিজেকে সময় দিন। 

যখন কাউকে জড়িয়ে ধরবেন, তখন ইচ্ছে করেই একটু বেশি সময় তাকে জড়িয়ে ধরে রাখুন অথবা যখন হ্যান্ডশেক করবেন তখন একটু বেশি সময় হাত চেপে ধরে রাখুন। চোখে রাখুন চোখ। 

কোন কিছুই চট করে শেষ না করে একটু থামুন, ভাবুন। আপনার সিদ্ধান্তেও এর প্রতিফলন রাখুন। 

পূর্ণ মনোযোগের সাথে আরেকজনের কথা শুনুন, আলাপ করে তুলুন অর্থময়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত