আগামী ২ মার্চ জাতীয় সম্মেলন করার ঘোষণা দিয়েছে রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির (জাপা) একাংশ। বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার গুলশানে রওশন এরশাদের বাসভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন জাপার একাংশের মহাসচিব কাজী মামুনুর রশীদ।
রওশনপন্থীদের জাতীয় সম্মেলনের এ ঘোষণাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন দলটির আরেক অংশ। এই অংশের মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নু বলছেন, কারা কোথায় কী করল, তা নিয়ে ভাবার সময় নেই।
গত রবিবার জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে দল থেকে অব্যাহতি দিয়ে রওশন এরশাদ নিজেকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও কাজী মামুনুর রশীদকে মহাসচিব ঘোষণা করেন। সে সময় মজিবুল হক চুন্নু বলেছিলেন, রওশন এরশাদের এই সিদ্ধান্তের কোনও ভিত্তি নাই।
বৃহস্পতিবার রওশন এরশাদের বাসার সংবাদ সম্মেলনে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের ছেলে সাদ এরশাদ, দলের এ অংশের মুখপাত্র সুনীল শুভ রায়, প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টু উপস্থিত ছিলেন।
কাজী মামুনুর রশীদ বলেন, “জাতীয় পার্টি নির্বাচনমুখী দল। আমরা আগামী ৯ মার্চ থেকে শুরু হওয়া উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। কিন্তু তার আগে চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে আমরা আমাদের সম্মেলন করার তারিখ নির্ধারণ করেছি।”
তিনি বলেন, “জাতীয় পার্টির যে নেতাকর্মীরা দলকে বাঁচাতে দল থেকে পদত্যাগ করেছিল, তারা আজ রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টিকে আগের থেকেও শক্তিশালী করার জন্য এক হয়েছে। পার্টির গুরুত্বপূর্ণ নেতা যাদের বহিষ্কার করা হয়েছিল, তাদেরকে চেয়ারম্যান আবার তাদের নিজ নিজ জায়গায় বহাল করেছেন।”
একইসঙ্গে বিলুপ্ত হওয়া জাতীয় পার্টির ঢাকা মহানগর উত্তর কমিটির সম্মেলনের তারিখও ঘোষণা করেন মামুনুর রশীদ। তিনি জানান, আগামী ৭ মার্চ মোহাম্মদপুরে এই সম্মেলন হবে। সম্মেলন পর্যন্ত ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক হিসেবে তিনিই দায়িত্ব পালন করবেন।
জাতীয় পার্টিতে ভাঙনের বিষয়ে তিনি বলেন, “জাতীয় পার্টি বেগম রওশন এরশাদের নেতৃত্বে একতাবদ্ধ হয়েছে। সবার বহিষ্কারাদেশ তুলে নেওয়া হয়েছে। আমরা সবাই জাতীয় পার্টি পরিবারের লোক। রওশন এরশাদকে আমরা আমাদের মার মত শ্রদ্ধা করি, তিনিও আমাদের সন্তান হিসেবে নিয়েছেন। একত্রে আমরা জাতীয় পার্টির পুরোনো ঐতিহ্য ফেরত আনব।”
রওশনপন্থীদের জাতীয় সম্মেলনের দিন ঘোষণার পর এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে সকাল সন্ধ্যা কথা বলেছে জাতীয় পার্টির আরেক অংশের মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নুর সঙ্গে।
তিনি বলেন, “জাতীয় পার্টি জি এম কাদেরের নেতৃত্বে একতাবদ্ধ রয়েছে। কারা কোথায় কী করল, তা নিয়ে এত ভাবার সময় আমাদের নেই।”
চুন্ন বলেন, “আগেও বলেছি এগুলো ধুম্রজাল সৃষ্টির চেষ্টা। কিছু লোক, যারা জাতীয় পার্টির কোনও পর্যায়ের নেতা নয়, তারা মিলে এসব কাজ করছে। এদের এত গুরুত্ব নাই। মানুষ জানে জাতীয় পার্টি কারা।”
সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদের গড়া জাতীয় পার্টির বহু নাটকের সাক্ষী বাংলাদেশ। তার মৃত্যুর পরও তা থেমে নেই।
২০১৯ সালে এরশাদের মৃত্যুর পর শুরুতেই গোল বেঁধেছিল দলের কর্তৃত্ব নিয়ে। ভাবি রওশন এবং দেবর কাদেরের সেই বিরোধে দলটি ফের ভাঙনের উপক্রম হয়েছিল।
তবে সেই দফায় জ্যেষ্ঠ নেতাদের হস্তক্ষেপে দুজনের সমঝোতা হয়। তাতে দলে কর্তৃত্ব নিয়ে কাদের হন চেয়ারম্যান; আর একাদশ সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার পদটিতে থেকে যান রওশন, পাশাপাশি দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক নামে পদ তৈরি করে তাকে দেওয়া হয় সেই পদ।
অশীতিপর রওশন অসুস্থতার জন্য দীর্ঘদিন বিদেশে থাকায় তাকে বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে সরাতে তৎপরতা ছিল কাদের সমর্থকদের। জি এম কাদেরের সেই অপূর্ণ আশা পূরণ হয়েছে দ্বাদশ সংসদে।