Beta
শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

এরশাদের মৃত্যুবার্ষিকীতেও এক হতে পারল না জাতীয় পার্টি

এইচ এম এরশাদ।
এইচ এম এরশাদ।
[publishpress_authors_box]

এইচ এম এরশাদের গড়া দল জাতীয় পার্টি তার মৃত্যুবার্ষিকী পালন করল বিভক্তভাবে। সেই আয়োজনে পরস্পরকে উদ্দেশ করে বক্তব্যও এল।

জি এম কাদেরের নেতৃত্বে দলটির একাংশ ঢাকার রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে আলোচনা সভা করে। আরেক অংশের আয়োজনে কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের আলোচনা সভায় ছিলেন রওশন এরশাদ। এদিকে রংপুরে এরশাদের বাড়িতে আরেক আয়োজনে ছিলেন ছেলে এরিক এরশাদ।

গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সামরিক শাসক এরশাদ ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টি গঠন করেন। ১৯৯০ সালে তিনি ক্ষমতা হারালেও বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্ব নিয়েই ছিলেন।

২০১৯ সালের ১৪ জুলাই এরশাদ মারা যাওয়ার পর দলের মধ্যে বিভেদ দেখা দেয়। এক পক্ষে ভাই জি এম কাদের, আরেক পক্ষে স্ত্রী রওশন এরশাদ। এর বাইরে এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা এরশাদও সক্রিয় হতে চাইছেন ছেলে এরিককে নিয়ে।

রওশনের কর্মসূচি

রওশন নেতৃত্বাধীন অংশ এরশাদের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রবিবার কাকরাইল ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে স্মরণসভার আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন রওশন।

এছাড়া বারিধায়ায় এ অংশের অস্থায়ী কার্যালয়ে দিনব্যাপী কোরআনখানি ও দোয়া মাহফিল হয়।

সভায় রওশন বলেন, “আমাদের পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান পল্লীবন্ধু এরশাদ নেতাকর্মীদের কত ভালবাসতেন এবং কত আদর করতেন। আপনারা কি কেউ তাকে ভুলতে পারবেন?”

দলের অন্য অংশের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “অথচ অনেকে আছেন, যারা জাতীয় পার্টির পরিচয় দিয়েও এরশাদকে মুছে ফেলতে চাইছেন। বিগত নির্বাচনে পল্লীবন্ধুর নাম মুখে নেওয়া হয়নি। নির্বাচনী ইশতেহারে পর্যন্ত পল্লীবন্ধুর ছবি রাখা হয়নি।”

বিভেদের মধ্যেও জাতীয় পার্টিকে ঐক্যবদ্ধ করার ওপর জোর দিয়ে রওশন বলেন, “জাতীয় পার্টির মধ্যে কোনও দ্বিধা-বিভক্তি হতে দেব না। তাহলে পল্লীবন্ধুর আত্মা কষ্ট পাবে। যারা পল্লীবন্ধুকে ভালোবাসেন, যারা তার আদর্শে বিশ্বাসী, তাদের মধ্যে কোনও বিভক্তি নেই। আমরা এক আছি, ঐক্যবদ্ধ আছি।”

দলের নেতা-কর্মীদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন, “বিগত নির্বাচনের পর জাতীয় পার্টিতে চরম বিপর্যয় নেমে আসে। কর্মী-সমর্থকদের মন ভেঙে যায়। তাদের মধ্যে হতাশা আসে।

“সেই অবস্থায় এই নেতৃবৃন্দ আবার পার্টির হাল ধরেছেন। পার্টিকে চাঙা করে তুলেছেন। আমি পার্টির যে কোনও দুঃসময়ে পাশে থেকেছি। আপনারা হতাশ হবেন না।”

জি এম কাদেরের কর্মসূচি

জি এম কাদের নেতৃত্বাধীন অংশ রবিবার সকালে কাকরাইলে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় চত্বরে এরশাদের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

বিকালে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে করে স্মরণ সভা। পাশাপাশি সারাদেশে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল, দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ এবং স্মরণসভা আয়োজন করা হয়।

ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের স্মরণসভায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, “এরশাদ সাহেব জনগণের কল্যাণে উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। কোনও দুর্নীতি যাতে না হয়, তিনি সেই ব্যবস্থা করেছিলেন।

“তিনি যে কাজগুলো করে গেছেন, এদেশের মানুষের বুকে তার নামটি বহমান রয়েছে। এই মহান নেতা যদি আরও কয়েকদিন বেঁচে থাকতেন, তাহলে দেশকে উন্নয়নের শিখরে নিয়ে যেতে পারতেন।”

বাংলাদেশের রাজনীতিতে এরশাদের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, “রাজনীতিতে যত আলোচনা হয়, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সবকিছুর মূল কেন্দ্রবিন্দু। এদেশ যতদিন থাকবে, ততদিন দেশের মানুষ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে স্মরণ করবে।”

“বর্তমান সরকার বাজেট করে অনেক বাহাদুরি করছে। এরশাদ সাহেব আপনাদের (আওয়ামী লীগ সরকার) মতো জনগণকে কষ্ট দেয়নি, জনগণের ওপর জুলুম করেনি,” বলেন সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা কাদের।

রংপুরে এরিক

এরশাদের মৃত্যুবার্ষিকী পালনে ছোট ছেলে এরিক তার মাকে নিয়ে রংপুরে পৈত্রিক নিবাস পল্লী নিবাসে রয়েেছন। শনিবার সেখানে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি।

এরিক বলেন, “রংপুরবাসী যদি আমাকে জাতীয় পার্টিতে দেখতে চায়। তাহলে আমি তাদের ডাকে সাড়া দেব। আমার বাবার মুখ উজ্জ্বল করব।”

রংপুরে এরশাদের আসনে এক সময় সংসদ সদস্য ছিলেন রওশনপুত্র রাহাগীর আল মাহী (সাদ এরশাদ)। এখন সেখানে সংসদ সদস্য জি এম কাদের।

এরিক বলেন, “যেহেতু আমার চাচা জিএম কাদের পলিটিক্স করেন। আপনারা তাকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করবেন, তিনি আমার খোঁজ রাখেন কি না?”

এরিকের মা বিদিশা বলেন, “জাতীয় পার্টিতে যারা আছেন, তাদের আমি ডিস্টার্ব করতে চাই না। তারা মনে করে আমি পলিটিক্যাল না, পরিবারেরও কেউ না। রংপুরের মানুষ মনে করলে আমি আমার লাইফ স্যাক্রিফাইস করতে পারি, আমার সন্তানও তাই করবে।”

“রাজনীতি তো অবশ্যই করব, তা সময়ের অপেক্ষা মাত্র,” সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেন তিনি।

বিভাজনের জাপা

সেনাপ্রধান থেকে অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলকারী এইচ এম এরশাদ ১৯৮৬ সালে দলছুট একদল নেতাকে নিয়ে জাতীয় পার্টি গঠন করেন । ১৯৯০ সালে গণঅভ্যুত্থানে এরশাদের পতনের পর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে ৩৫টি আসনে বিজয়ী হয়ে চমক দেখায় দলটি।

১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি প্রথম ভাঙনের মুখে পড়ে। আনোয়ার হোসেন মঞ্জু আলাদা দল গঠন করেন। ১৯৯৯ সালে আবার ভাঙে তখনকার মহাসচিব নাজিউর রহমান মঞ্জুর নেতৃত্বে। ২০১৪ সালে কাজী জাফর আহমেদ আলাদা দল গঠন করে এরশাদের জাতীয় পার্টি েথকে বেরিয়ে যান।

এরশাদের মৃত্যুর পর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে থেকে জাতীয় পার্টিতে কোন্দল চলছিল। তবে দেবর-ভাবির সেই দ্বন্দ্ব মেটে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যস্থতায়। জিএম কাদের দলের কর্তৃত্ব নেন, আর রওশন সংসদে দলের নেতৃত্ব নেন।

তবে ভোটে জাতীয় পার্টির ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ ফলের পর কোন্দল আরও বাড়ে, তার ধারাবাহিকতায় আলাদা সম্মেলন ডাকেন রওশন। সেখানে রওশনকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হয়, মহাসচিব হন কাজী মামুনুর রশীদ।

তবে এই অংশের তৎপরতাকে আমলে না নিয়ে জিএম কাদের নেতৃত্বাধীন অংশ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, যেখানে মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন মুজিবুল হক চুন্নু।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত