সিঙ্গাপুরের কাছে হারের পর হাভিয়ের কাবরেরার চাকরি আবারও নড়বড়ে হয়ে গেছে। ঘরে-বাইরে সমালোচনার মুখে পড়েছেন বাংলাদেশের স্প্যানিশ কোচ।
অথচ এই ম্যাচটাই হতে পারতো বাংলাদেশ অধ্যায়ে তার সেরা ম্যাচ। কাবরেরা নিজেও এই দলটাকে তার সময়ের ‘সেরা দল’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ খেলা হামজা চৌধুরী, কানাডার শীর্ষ লিগের শমিত সোম ও ইতালির চতুর্থ টায়ারের প্রতিভান তরুণ ফাহমিদুল ইসলামের সুবাদে বাংলাদেশের মধ্যমাঠ আসলে দেখার মতো। অফুরান শক্তির উৎস হিসেবেই ধরা হয়েছিল। তাই কোচের চোখেমুখেও স্বপ্নের ঝিলিক ছিল। ভীষণ আশাবাদী ছিলেন সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে হোম ম্যাচ জয়ের ব্যাপারে।
কিন্তু সেই দল মাঠে নেমে প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। প্রথমার্ধে ০-২ গোলে পিছিয়ে পড়ে শেষমেষ ২-১ গোলে হারে বাংলাদেশ। কোচের প্রত্যাশার পাশাপাশি বিশাল ধাক্কা খায় দেশের ফুটবলপ্রেমীরাও। একই সঙ্গে এশিয়ান কাপ ফুটবল বাছাইটাও কঠিন হয়ে যায় বাংলাদেশের।

সিঙ্গাপুর ম্যাচ শেষে শুরু হয় বাংলাদেশের স্প্যানিশ কোচের ট্যাকটিকস নিয়ে কাটাছেঁড়া। প্রশ্ন উঠে তার দল নির্বাচন নিয়ে। প্রকাশ্যে কোচের সমালোচনা করেছেন দেশি কোচ জুলফিকার মাহমুদ মিন্টু, এমিলিসহ অনেকে। তারা সিঙ্গাপুর ম্যাচে কাজেম শাহ’র অন্তর্ভূক্তির কারণ খুঁজে পাননি। উইঙ্গার রাকিব হোসেনকে ‘নাম্বার নাইন’-এ খেলিয়ে তার কার্যকারিতা নষ্ট করার অভিযোগ তুলেছেন কেউ কেউ। অনেকে বিস্মিত হয়েছেন ওই ম্যাচের দু’দিন আগে ভাই হারানোর শোকে মুহ্যমান থাকা মিতুল মারমাকে গোলপোস্ট আগলাতে দেখে।
বাইরে সমালোচনার সঙ্গে বাফুফের ভেতরেও সঞ্চারিত হয়েছে কোচবিরোধী ক্ষোভ। সেটা প্রকাশ্যে আসে ১৪ জুন রাওয়া কমিউনিটি সেন্টারে বাফুফের সংবাদ সম্মেলনে। নির্বাহী সদস্য শাখাওয়াত হোসেন শাহীন হঠাৎ ‘দেশের ১৮ কোটি মানুষের মুক্তির জন্য’ কাবরেরার পদত্যাগ দাবি করেছেন। তার কথায় দৃশ্যত বিব্রত হয়েছেন বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল। তিনি বলেন, “এটা (এমন কথা) খুবই দুর্ভাগ্যজনক। ব্যাপারটা (কোচের বিষয়টা) আমাদের ভেতরে আলোচনা হবে।” এই কোচকে রাখা বা সরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে সভাপতি কিছুই স্পষ্ট করেননি।
অনেকে মনে করেন কোচের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে জাতীয় দল ব্যবস্থাপনা কমিটিতে। আবার এই উপ কমিটির প্রধান বাফুফে সভাপতি নিজে। সিঙ্গাপুর ম্যাচটা তিনি দেখেছেন এবং তার নিজস্ব কিছু চিন্তা-ভাবনাও থাকতে পারে। এই উপ কমিটির কো-চেয়ারম্যান পদে আছেন সিনিয়র সহ সভাপতি ইমরুল হাসান। সিঙ্গাপুর বিপক্ষে বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্স নিয়ে তারও নিজস্ব কিছু পর্যবেক্ষণ আছে, তবে সেগুলো তিনি ওই উপ কমিটির সভায় আলোচনা করতে চান, “আমাদের সভায় নিশ্চয়ই সিঙ্গাপুর ম্যাচের পারফরম্যান্স এবং কোচের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হবে, তার ভিত্তিতেই একটা সিদ্ধান্ত হবে।”
তবে এটাও ঠিক, কোচ হাভিয়ের কাবরেরাকে সরাসরি প্রশ্নের মুখে ফেলার সুযোগও এখন নেই। সিঙ্গাপুর ম্যাচ শেষ হওয়ার পরদিনই স্পেন ফিরে গেছেন তিনি। তার সঙ্গে নতুন চুক্তিটাই এরকম- ঘরোয়া খেলা থাকলে দল নির্বাচনের জন্য তিনি এখানে থাকবেন। খেলা না থাকলে তার এখানে থাকার দরকার নেই। কেবল জাতীয় দলের ম্যাচের আগে অনুশীলন ক্যাম্পের জন্য তিনি ঢাকায় ফিরবেন।
প্রশ্ন হচ্ছে, কাবরেরার আবার ঢাকায় ফেরার সুযোগ আছে কিনা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দেখলে মনে হবে, ইতিমধ্যেই তার চাকরি গেছে। নতুন কোচের নামও ভাসছে সেখানে। তবে বাফুফের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানাচ্ছে, সভাপতি এখনই কোচ ছাঁটাই করতে চান না। তবে ছাঁটাই করলে কোচকে আগের মতো বাকি ১০ মাসের বেতন দিতে হবে, এমন নয়। নতুন চুক্তিতে মাত্র এক মাসের বাড়তি বেতন দিতে হবে। কিন্তু বাফুফে সভাপতি অপেক্ষা করতে চান হংকং ম্যাচ পর্যন্ত।
৯ অক্টোবর হংকংয়ের সঙ্গে ঢাকায় হোম ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। হংকংয়ের বিপক্ষে অ্যাওয়ে ম্যাচ ১৪ অক্টোবর। এই দুটো ম্যাচেও কোচের পারফরম্যান্স দেখতে চান বাফুফে সভাপতি। অর্থাৎ কাবরেরা আপাতত টিকে যাচ্ছেন।