কোটাবিরোধী আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল বলেছে, বর্তমান বাংলাদেশে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য ‘অতি সীমিত সংখ্যক’ কোটা ছাড়া আর কোনও কোটার প্রয়োজন নেই।
বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ছাত্রদলের এই অবস্থানের কথা জানান সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির।
একইদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলনে এসে এই আন্দোলন নিয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে ছাত্রলীগ। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চাকরিতে কোটা নিয়ে এখন যে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে, তার সমাধান আদালত থেকেই আসবে বলে মনে করছে ছাত্রলীগ।
যারা আন্দোলন করছেন, আপিল বিভাগের আদেশের পর জনদুর্ভোগ সৃষ্টির মতো কর্মসূচি না দিয়ে তাদের ক্লাসে ফেরার আহ্বানও জানান সংগঠনটির নেতারা। সর্বোচ্চ আদালতের আদেশের পরও আন্দোলনের কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার মধ্যে রাজনৈতিক ইন্ধন রয়েছে বলেও সন্দেহ করছে সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠনটি।
সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল করে হাইকোর্টের রায়ের পর থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে আন্দোলন শুরু হয়। আন্দোলনকারীরা প্রতিদিন ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করছে। এতে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে জনদুর্ভোগ দেখা দিচ্ছে।
হাইকোর্টের রায় স্থগিতে সরকার আবেদন করার পর আপিল বিভাগ বুধবার নিয়মিত আপিল আবেদনের নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি চার সপ্তাহের জন্য হাই কোর্টের রায়ের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করে। প্রধান বিচারপতি এই বিষয়ে কোনও বক্তব্য আদালতে উপস্থাপনের পরামর্শ দিয়ে আন্দোলন না করতে শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন।
আন্দোলনকারীরা আপিল বিভাগের রায়কে ইতিবাচক বললেও সরকারের কাছে কোটা সংস্কারের দাবি জানিয়ে বলছে, তা নাহলে তারা আন্দোলন থেকে সরবে না। বৃহস্পতিবারও তারা রাজধানী ঢাকার শাহবাগসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় কর্মসূচি পালন করছে।
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘২০১৮ সালে যে কোটা সংস্কার আন্দোলন হয়েছিল সেই আন্দোলনে আমরা নৈতিক সমর্থন দিয়েছি এবং সেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেছে। এখন যে আন্দোলন হচ্ছে, সেই আন্দোলনেও আমরা সমর্থন দিচ্ছি।
“আমরা বিশ্বাস করি, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থীরা যে কোটা সংস্কারের বিষয়ে যে আন্দোলন করছে, সেটির বিষয়ে একটা চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হওয়া উচিত।”
বিএনপির পক্ষ থেকে দলের মহাসচিব এ বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছেন- উল্লেখ করে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “আমাদের যে বক্তব্য সেটি হচ্ছে, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের অতি সীমিত সংখ্যক কোটা ছাড়া বাংলাদেশে এই মুহূর্তে আর কোনও কোটার কোনও প্রয়োজন নেই। এটি আমাদের অফিশিয়াল বক্তব্য।
“চলমান যে গণতান্ত্রিক আন্দোলন সাধারণ শিক্ষার্থীরা করছে এই আন্দোলনের সাথে ছাত্রদল পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করছে এবং একই সাথে আমরা বিশ্বাস করি, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীদের রুখে দিয়ে এই আন্দোলন সফল হবে ইনশাল্লাহ।”
‘কোটা বাতিল নয়, কোটা সংস্কারের দাবি তুলে ধরে নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, ‘২০১৮ সালে যখন কোটা মুভমেন্ট হয়েছিল তখন ছাত্রদলের পক্ষ থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সেই আন্দোলনে আমরা অংশগ্রহণ করেছি এবং তাদেরকে সমর্থন দিয়েছিলাম। আপনাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, ২০১৮ সালে যে আন্দোলন হয়েছিল সেই আন্দোলনটি ছিল কোটা সংস্কার আন্দোলন। এর নামই ছিল কোটা সংস্কার আন্দোলন।”
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা করে ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, তিনি কোটা সংস্কার না করে কোটা বাতিল করেন একটা প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের বলে। তিনি যেভাবে আদালতকে ব্যবহার করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রায় পক্ষে নিয়েছিলেন, একইভাবে কোটা পুনঃস্থাপন করেছেন।
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ যাদের দেওয়া হয়েছে তাদের সুবিধা দিতে কোটা পুনর্বহাল করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয় ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রদলের সহসভাপতি আতিকুর রহমান রাসেলের ‘গুম হওয়ার’ বিষয়টি তুলে ধরতে।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, গত ১ জুলাই আজিমপুর এলাকা থেকে রাসেলকে তুলে নিয়ে যায় সাদা পোশাকের একদল লোক।
কোটাবিরোধী আন্দোলনে জড়িতদের ‘সাধুবাদ’ জানিয়ে ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, “একই সঙ্গে আমি বলতে চাই, এই গুম-খুনের সংস্কৃতি গড়ে তুলেছে এই অবৈধ ফ্যাসিস্ট সরকার। এর বিরুদ্ধে আপনাদের সোচ্চার হতে হবে।”
রাসেলের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, “ঢাকা কলেজের যেসব নেতৃবন্দ কোটাবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদেরকে বলছি, আপনাদের কলেজের সহপাঠী আতিকুর রহমান রাসেলকে গুম করা হয়েছে, তার সন্ধানে আপনারাও দাবি জানাবেন, সেটা আমরা প্রত্যাশা করি।”
ছাত্রদল সভাপতি বলেন, “রাসেলের নামে কোনও মামলা নেই, কোনও ওয়ারেন্ট নেই। বিনা কারণে তাকে গুম করা হয়েছে। বার বার আমাদের ভাইদের গুম করা হয়েছে। আমরা তাদের পাইনি।”
‘দুই একদিনের মধ্যে কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ারি’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল বলেন, “আজকে ১২ দিন আমাদের সহযোদ্ধা গুম হয়ে আছেন। আমাদের পাশাপাশি রাসেলের পরিবারও অত্যন্ত উৎকণ্ঠার মধ্যে সময় পার করছেন।”
তিনি বলেন, “অনতিবিলম্বে রাসেলকে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দেওয়া না হলে দুই একদিনের মধ্যেই ঢাকাসহ সারাদেশে আন্দোলন শুরু করব। যতক্ষণ রাসেলকে ফিরিয়ে দেওয়া না হবে ততক্ষণ এই সরকারের বিরুদ্ধে কঠিন থেকে কঠিনতর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করব।”
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুম, সাংগঠনিক সম্পাদক আমানউল্লাহ আমান, ঢাকা কলেজ শাখার সভাপতি শাহীনুর রহমান শাহীন ও সাধারণ সম্পাদক জুলহাস মিয়াসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।