Beta
শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Beta
শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
২০ বছর পর ধরা

হুমায়ুন আজাদকে ছুরি দিয়ে মেরেছিলেন নুর মোহাম্মদ

জেএমবির নেতা নুর মোহাম্মদকে ২০ বছর পর গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
জেএমবির নেতা নুর মোহাম্মদকে ২০ বছর পর গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
Picture of প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

লেখক-অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের ওপর হামলাকারী জঙ্গিদের দলে ছুরি হাতে ছিলেন নুর মোহাম্মদ। মামলায় হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ড মাথায় নিয়ে পালিয়ে ছিলেন তিনি। ২০ বছর পর তিনি ধরা পড়লেন।

মঙ্গলবার ভোরে ঢাকার বিমানবন্দর থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৪০ বছর বয়সী নুর মোহাম্মদকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে পুলিশের এন্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ) জানিয়েছে।

নুর মোহাম্মদের বাড়ি গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ঝড়াবর্ষা গ্রামের কলেজপাড়ায়। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির এই নেতা সাবু, শামীম, মাহবুবুর রহমান এমন নানা নামে পরিচয় দিতেন।

এটিইউর মিডিয়া অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস উইংয়ের পুলিশ সুপার মাহফুজুল আলম রাসেল সাংবাদিকদের বলেন, মামলা দায়েরের পর নুর মোহাম্মদ ২০ বছর ধরে আত্মগোপনে ছিলেন। গ্রেপ্তারের পর তার বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

“২০০৪ সালে ড. হুমায়ুন আজাদের ওপর হামলায় নুর মোহাম্মদ সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন,” বলেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে একুশের বইমেলা চলাকালে টিএসসির কাছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সংলগ্ন ফুটপাতে হামলার শিকার হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ।

লেখালেখির জন্য জঙ্গি হামলার ঝুঁকিতে ছিলেন এই শিক্ষক। বিশেষ করে ‘পাক সার জামিন সাদ বাদ’ বইটি প্রকাশের পর তার উপর হুমকি বেড়েছিল।

পরে পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে, জেএমবির আমির শায়খ আবদুর রহমানের নির্দেশে দলটির একদল সদস্য পরিকল্পিতভাবে হুমায়ুন আজাদকে হত্যার জন্য হামলা চালিয়েছিল।

সেদিন ধারাল অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়েছিল জঙ্গিরা। হুমায়ুন আজাদের ঘাড় মাথা, গলায় উপর্যুপরি কুপিয়ে হামলাকারীরা পালিয়ে গিয়েছিল।

ঘটনার পরদিন হুমায়ুন আজাদের ভাই মঞ্জুর কবির হত্যাচেষ্টার অভিযোগে একটি মামলা করেছিলেন। তিন বছর পর ২০০৭ সালে সেই মামলায় পুলিশ পাঁচজনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দিয়েছিল।

হামলায় রক্তাক্ত হুমায়ুন আজাদ।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছিল, জেএমবির সামরিক শাখার প্রধান আতাউর রহমান সানির নেতৃত্বে দলটির ‘কিলিং স্কোয়াডের’ সদস্যরা হুমায়ুন আজাদকে হত্যার উদ্দেশে ওই হামলা চালিয়েছিল। তাদের মধ্যে নুর মোহাম্মদের হাতে ছিল ছুরি, মিজানুর রহমানের হাতে ছিল চাপাতি, আনোয়ারুল ও নুরুল্লাহ নামে অন্য দুজনের হাতে ছিল বোমা।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, “বইমেলার গেটের বিপরীত পাশে একটা চটপটির দোকানে তারা অপেক্ষা করছিলেন। রাত সোয়া ৯টার দিকে সানি ইশারা দিয়ে হুমায়ুন আজাদের পিছু নিতে বলেন। তখন নূর মোহাম্মদ ও মিজানুর চাপাতি-ছুরি বের করে হুমায়ুন আজাদকে কোপাতে শুরু করেন। রাস্তার লোকজন চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করলে বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।”

পরে আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে মিজানুর বলেছিলেন, “আমি ও নূর মোহাম্মদ ধারাল অস্ত্র দিয়ে আঘাত করি। দূরে থাকা লোকজন ছুটে এলে আনোয়ারুল একটা বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। তখন লোকজন পালাতে থাকে। আমরাও পালিয়ে যাই।”

হামলার পর দেশে চিকিৎসা নিয়ে হুমায়ুন আজাদ ওই বছরের আগস্টে জার্মানিতে গিয়েছিলেন। সেখানে কয়েকদিন পর তার মৃত্যু হয়।

হামলার কারণেই হুমায়ুন আজাদ মারা গেছেন উল্লেখ করে পরে হত্যাচেষ্টা মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়। সিআইডির নেতৃত্বে দ্বিতীয় দফায় তদন্তও চলে।

অভিযোগপত্রে হত্যা মামলায় রূপান্তরিত করার কারণ হিসাবে বলা হয়েছিল, চিকিৎসা প্রতিবেদন, জার্মানি থেকে পাঠানো মৃত্যুর সনদ, ময়না তদন্ত প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন সাক্ষ্য প্রমাণে দেখা গেছে, আক্রমণের কারণেই হুমায়ুন আজাদ মারা যান।

দীর্ঘদিনের বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০২২ সালের ২৩ এপ্রিল ঢাকার আদালতে হত্যামামলার রায় হয়। তাতে চারজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। অন্য মামলায় জঙ্গিনেতা সানির মৃত্যুদণ্ড আগেই কার্যকর হয়ে যাওয়ায় তিনি বাদ পড়েন।

নূর মোহাম্মদকে পলাতক দেখিয়েই সেই রায় হয়েছিল।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত