Beta
মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫

প্রেসিডেন্টদের কুকুর নিয়ে যত বিতর্ক

জো বাইডেনের কুকুর কমান্ডার বাইডেন। ছবি: রয়টার্স।
জো বাইডেনের কুকুর কমান্ডার বাইডেন। ছবি: রয়টার্স।
[publishpress_authors_box]

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পোষা কুকুর কমান্ডারের কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল হোয়াইট হাউজের কর্মীরা। এতে গত বছরের অক্টোবরে প্রেসিডেন্টের বাসভবন থেকে কুকুরটিকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

২০২২ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত নয় মাসে কুকুরটি দেশটির সিক্রেট সার্ভিসের কর্মীদের অন্তত ২৪ বার কামড়ে দিয়েছে বলে খবর এসেছে।

তবে কমান্ডার বাইডেনই যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বে বিতর্ক উস্কে দেওয়া প্রথম বা একমাত্র প্রেসিডেন্ট পোষা কুকুর নয়। কমান্ডারসহ প্রেসিডেন্টদের যত পোষা কুকুর বিশ্বজুড়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে তাদের সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

কমান্ডার

বাইডেনের পরিবারের পোষা কুকুর কমান্ডারকে গত বছর হোয়াইট হাউজ ছাড়তে হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা বিভাগের এক এজেন্টকে কামড়ে দেওয়ার পর। গুরুতর জখম ওই এজেন্টকে চিকিৎসাও নিতে হয়েছিল।

কমান্ডার একটি জার্মান শেফার্ড জাতের কুকুর। ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের জুলাইর মধ্যে হোয়াইট হাউজে আসা মানুষদের কমপক্ষে ২৪ বার কামড়ে দিয়েছে কুকুরটি।

২০২১ সালের ডিসেম্বরে একটি কুকুরছানা হিসেবে কমান্ডার হোয়াইট হাউজে প্রথম ঢোকে। হোয়াইট হাউজে আক্রমণাত্মক আচরণ দেখানো বাইডেনের দ্বিতীয় কুকুর ছিল কমান্ডার। এর আগে মেজর নামে বাইডেনের আরেকটি জার্মান শেফার্ড কুকুরও হোয়াইট হাউজ থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিল কামড়কাণ্ডের কারণে।

লেনু

ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্টের কুকুর লেনু ফিনল্যান্ড ও তার বাইরেও বিখ্যাত হয়েছিল। প্রেসিডেন্ট সাউলো নিনিস্তো প্রায়ই কুকুরটিকে সঙ্গে নিয়েই চলাফেরা করতেন। নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুসারে, এক রিপোর্টার লেনুর হাস্যোজ্জ্বল একটি ছবি টুইটারে পোস্ট করার পর সেটি ৫০ হাজার বারের বেশি শেয়ার হয় এবং ছবিটিতে লাইক পড়ে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার বার।

যুক্তরাষ্ট্রের জিমি ফ্যালন অভিনীত টুনাইট শোতেও লেনুকে দেখানো হয়েছিল। ফিনল্যান্ডে কুকুরটির নামে একটি পেস্ট্রিও ছিল।

বোস্টন টেরিয়ার জাতের কুকুর লেনু ক্যামেরায় পোজ দেওয়ার জন্য বিখ্যাত ছিল। নিনিস্তোর মতো ঝানু রাজনীতিবিদও অনেক সময় ক্যামেরার দিকে তাকাতে ভুলে যেতেন। কিন্তু লেনু সবসময়ই ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে থাকত। পিটুইটারি গ্ল্যান্ডের টিউমারে আক্রান্ত হয়ে ২০২১ সালের মে মাসে মারা যায় লেনু।

পুতিনের কুকুর-কূটনীতি

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ২০০৭ সালে সাবেক জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা ম্যার্কেলের সঙ্গে দেখা করার সময় তার ল্যাব্রাডর কুকুর কোনিকে নিয়ে এসেছিলেন।

তবে ১৯৯৫ সালে একবার কুকুরের তাড়া খাওয়ার পর থেকেই কুকুরকে ভয় পেতেন ম্যার্কেল। একটি ছবিতে পুতিনের কুকুর কোনি বৈঠকে উপস্থিত হলে ম্যার্কেলকে অস্বস্তিতে পড়তে দেখা যায়।

পুতিন বলেন, “আমি তার জন্য মজার কিছু করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু যখন আমি জানতে পারলাম যে তিনি কুকুর পছন্দ করেন না, আমি অবশ্যই ক্ষমা চেয়েছিলাম।”

ম্যার্কেল পরে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “আমি বুঝতে পারি কেন পুতিনকে এটা করতে হয়, নিজেকে একজন পুরুষ প্রমাণ করার জন্য। তিনি তার নিজের দুর্বলতাকে ভয় পান। রাশিয়ার কিছুই নেই, সফল রাজনীতি বা অর্থনীতি নেই। তাদের যা আছে তা হল এই পৌরুষ।”

তবে পুতিন কুকুর খুব বেশি ভালোবাসতেন বলে অনেক বিশ্বনেতাই তাকে কুকুর উপহার দিতেন। ২০১৭ সালে রাশিয়ার সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে তুর্কমেনিস্তানের প্রেসিডেন্ট গুরবাংগুলি বার্দিমুখামেদভ পুতিনকে একটি আলাবাই কুকুর উপহার দিয়েছিলেন। এটি একটি বিরল কুকুরের জাত যা বেশিরভাগ মধ্য এশিয়ায় পাওয়া যায়। বুলগেরিয়া ও জাপানের রাষ্ট্রপ্রধানরাও পুতিনকে কুকুর উপহার দিয়েছেন।

ম্যার্কেলকে অস্বস্তিতে ফেলা কুকুরটি ছিল পুতিনের জন্য রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগুর বিশেষ উপহার।

রুজভেল্ট, ফালা ও ভুয়া খবর

ডোনাল্ড ট্রাম্পেরও অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টরা তাদের বিরোধীদের বিরুদ্ধে ভুয়া খবরের অভিযোগ এনেছেন।

১৯৪৪ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাঙ্কলিন ডেলানো রুজভেল্টের বিরোধীরা অভিযোগ করেছিলেন যে, তিনি আলাস্কা সফর থেকে ফেরার সময় তার স্কটিশ টেরিয়ার জাতের কুকুর ফালাকে ফেলে এসেছিলেন। তাদের দাবি, কুকুরটিকে পুনরুদ্ধার করতে তাকে ফিরে যেতে হয়েছিল এবং এতে কয়েক মিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে।

তবে রুজভেল্ট দাবি করেন এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি, এর কোনও প্রমাণও নেই। তবে তিনি এই অভিযোগকে জনগণের সহানুভূতি অর্জনের জন্য ব্যবহার করেছিলেন।

জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, “এই রিপাবলিকান নেতারা আমার, আমার স্ত্রী বা আমার ছেলেদের উপর আক্রমণ করেও সন্তুষ্ট থাকতে পারেনি। তারা এখন আমার ছোট্ট কুকুর ফালাকেও আক্রমণ করছে।”

রুজভেল্ট বলেন, “তবে আমি বা আমার পরিবার এসব আক্রমণে খুব একটা বিরক্ত হই না। আপনারা জানেন ফালা হলো স্কটিশ জাতের কুকুর। সে যখন জানতে পারলো যে কংগ্রেসে ও এর বাইরে থাকা রিপাবলিকান কথাসাহিত্যিকরা গল্প ফেঁদেছেন, আমি নাকি তাকে আলেউটিয়ান দ্বীপপুঞ্জে ফেলে রেখে এসেছিলাম এবং তাকে খুঁজে বের করতে একটি ডেস্ট্রয়ার পাঠিয়েছিলাম, তখন তার স্কটিশ আত্মা রেগে যায়। তারপর থেকে আর সে আগের মতো আচরণ করেনি।”

ওয়াশিংটনের ফ্র্যাঙ্কলিন ডেলানো রুজভেল্ট মেমোরিয়ালে ফালারও একটি মূর্তি রয়েছে।

স্নায়ুযুদ্ধের গুপ্তচর কুকুরছানা

স্নায়ুযুদ্ধের সময় সোভিয়েত নেতা নিকিতা ক্রুশ্চেভ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন কেনেডিকে পুশিঙ্কা নামে একটি কুকুর উপহার দিয়েছিলেন। কুকুরটির মা ছিলো মহাকাশে উড়ে যাওয়া এবং জীবিত ফিরে আসা প্রথম কুকুরদের একটি।

পুশিঙ্কাকে (রাশিয়ান ভাষায় ‘ফ্লফি’) যখন ওয়াশিংটনে আনা হয় তখন অনেকেই সন্দেহ করেছিলেন যে, সেটি একটি গুপ্তচর কুকুর যার শরীরে অডিও ডিভাইস লুকানো আছে।

এনপিআর-এর এক প্রতিবেদন অনুসারে হোয়াইট হাউসের ইতিহাসবিদ জেনিফার পিকেন্স বলেন, “বোমা ও জীবাণু এবং অডিও ডিভাইস খোঁজাখুজির পর পুশিঙ্কা হোয়াইট হাউজে প্রবেশের অনুমতি পায়। কুকুরটি পরে প্রেসিডেন্ট কেনেডির প্রিয় টেরিয়ার চার্লির প্রেমে পড়ে যায়।”

পুশিঙ্কা চারটি কুকুরছানার জন্ম দিয়েছিলো, প্রেসিডেন্ট কেনেডি যেগুলোকে স্নেহ করে পুপনিক বলে ডাকতেন।

কুকুরছানাগুলো নেওয়ার জন্য হোয়াইট হাউজের কাছে ৫ হাজারটি অনুরোধ এসেছিল।

তথ্যসূত্র: আল জাজিরা

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত