বঙ্গবন্ধুর খুনি ও একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ফাঁসি কার্যকর করে আলোচনায় আসা জল্লাদ শাহজাহান ভূঁইয়া (৭৪) মারা গেছেন। সোমবার ভোরে ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
শের-এ-বাংলা নগর থানার ডিউটি অফিসার (এএসআই) আনোয়ার শিকদার বিষয়টি সকাল সন্ধ্যাকে নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, সাভারের হেমায়েতপুরের জাদুরচর এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন শাহজাহান। রবিবার গভীর রাতে বুকে ব্যথা অনুভব করলে তাকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার ভোরে তার মৃত্যু হয়।
শাহজাহান ভূঁইয়া বেশি পরিচিত জল্লাদ শাহজাহান নামে। বঙ্গবন্ধুর খুনি ও একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ফাঁসি কার্যকর করে প্রথম আলোচনায় আসেন জল্লাদ শাহজাহান। ১৯৭৯ সালে একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হন শাহজাহান ভূঁইয়া। ৪৪ বছরের কারাভোগ শেষ করে ছাড়া পান ২০২৩ সালের ১৮ জুন। কারাগারে কাটানো এই দীর্ঘ সময়ে তিনি কার্যকর করেন প্রায় ৪০টি ফাঁসি। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে একজনের সবচেয়ে বেশি ফাঁসি কার্যকর করার রেকর্ড।
কারাগার থেকে মুক্তির পর প্রতারণার শিকার হয়ে গত ১ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন করেন জল্লাদ শাহজাহান। কর্মসংস্থানের দাবিও জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলন থেকে জানা যায়, ১৯৮৯ সালে সহযোগী জল্লাদ হিসেবে গফরগাঁওয়ের নূরুল ইসলামকে ফাঁসি দিয়ে জল্লাদ জীবন শুরু করেন শাহজাহান। এরপর ১৯৯৩ সালের জুলাইয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবী কন্যা শারমীন রীমা হত্যা মামলার আসামি খুকু মুনির, ২০০৪ সালের ১০ মে খুলনা জেলা কারাগারে এরশাদ শিকদার, ২০০৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর রংপুর জেলা কারাগারে ইয়াসমিন হত্যা মামলার আসামি এএসআই মইনুল হক ও আবদুস সাত্তারের ফাঁসি কার্যকর করেন তিনি।
এছাড়া ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ কাশিমপুর ও ৯ মার্চ ময়মনসিংহে জঙ্গি নেতা সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাই, আতাউর রহমান সানি, আবদুল আউয়াল, খালেদ সাইফুল্লাহ ও ইফতেখার মামুন, ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় মুত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ খুনির ফাঁসি কার্যকর করেন জল্লাদ শাহজাহান।
এরপর ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রথম যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লা, ২০১৫ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত জামায়াত নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, ২০১৫ সালে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী, ২০১৬ সালে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, ২০১৬ সালে জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর করেছেন তিনি।
এছাড়া ২০২০ সালের ৫ মে (কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রথম ও একমাত্র ফাঁসি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদের ফাঁসিও কার্যকর করেছিলেন জল্লাদ শাহজাহান।
