কৌশলে এক দম্পতিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ডেকে এনে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে এক ছাত্রলীগ নেতা ও তার সহযোগীর বিরুদ্ধে।
শনিবার রাতে জাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের নেতা মোস্তাফিজুর রহমান এবং তার সহযোগী মামুন বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল সংলগ্ন জঙ্গলে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী নারী।
এই অভিযোগে তার স্বামীর করা মামলায় রবিবার সকালে মোস্তাফিজুর রহমানসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছে পুলিশ।
গ্রেপ্তার মোস্তাফিজুর রহমান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের এই শিক্ষার্থী থাকতেন মীর মশাররফ হোসেন হলে। তিনি ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানার বালিয়াহাটি গ্রামের মজিবর রহমান খানের ছেলে।
গ্রেপ্তার অপর তিনজন হলেন- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বগুড়ার শেরপুর থানার পারভবানিপুর গ্রামের প্রয়া ফজলুল হক সরকারের ছেলে সাব্বির হাসান সাগর, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী থানার নেওয়াশী গ্রামের মফিজুল হক সিদ্দিকে ছেলে সাগর সিদ্দিক ও রংপুর জেলার কতোয়ালী সদর থানার গন্দাদাশ গ্রামের মজিবর রহমানের ছেলে হাসানুজ্জামান।
পলাতক দুই আসামি হলেন নওগাঁর পত্নীতলা থানার আমন্ত গ্রামের মামুনুর রহমান মামুন ও মো. মুরাদ। মামুন ওই নারীর বাসার ভাড়াটিয়া।
ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর মোস্তাফিজকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই দম্পতির জিরাব এলাকার বাসায় ভাড়া থাকেন মামুন। শনিবার সন্ধ্যায় মামুন ভুক্তভোগী নারীর স্বামীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকেন। ওই নারীর স্বামী বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে অভিযুক্তরা তাকে মীর মশাররফ হোসেন হলের ‘এ’ ব্লকের ৩১৭ নম্বর কক্ষে নিয়ে আটকে রাখেন। পাশাপাশি তাকে দিয়ে তার স্ত্রীকে ফোন করান এবং জিরাব এলাকার বাসায় মামুনের রেখে আসা জিনিসপত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে আসতে বলেন। স্বামীর ফোন পেয়ে ওই নারী মামুনের জিনিসপত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে যান। পরে জিনিসপত্র হলের কক্ষে রেখে অভিযুক্তরা ওই নারীকে পাশের জঙ্গলে নিয়ে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগী নারী বলেন, “মামুন আমাদের বাসায় ভাড়া থাকতেন। তিনি আমার স্বামীর মাধ্যমে ফোন দিয়ে আমাকে তার রেখে যাওয়া জিনিসপত্র নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে বলেন। আমি তার জিনিসপত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে যাই। তখন তিনি আমাদের বাসায় থাকবেন না, মোস্তাফিজ ভাইয়ের কাছে থাকবেন বলে জানান।”
তিনি বলেন, “এরপর মামুন আমার কাছ থেকে তার জিনিসপত্রগুলো নিয়ে হলে রেখে আসেন। পরে আমার স্বামী অন্যদিক থেকে আসবে বলে আমাকে হলের সামনে থেকে পাশের জঙ্গলে নিয়ে যান। তার সাথে মোস্তাফিজ ভাইও ছিল। পরে তারা আমাকে ধর্ষণ করে।”
এই ঘটনা জানাজানি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এর পরিপ্রেক্ষিতে রবিবার ভোরে এক বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সকল কার্যক্রম থেকে মোস্তাফিজুর রহমানকে অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং তাকে সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটিতে সুপারিশ করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে নীতি আর্দশ ও সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে মোস্তাফিজকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়।
রবিবার দুপুরে আশুলিয়া থানায় এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অবস) আব্দুল্লাহিল কাফি মোস্তাফিজসহ চারজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, “ভুক্তভোগীর স্বামী রাতেই বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় ছয়জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন। আমরা সাভার ও আশুলিয়া থানা একাধিক টিম করে আসামিদের গ্রেপ্তার করেছি। মামলায় মোস্তাফিজ ও মামুনুর রশীদকে ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। বাকি চারজনের বিরুদ্ধে মারধর ও আসামিদের পালাতে সহায়তা করার অভিযোগ আনা হয়েছে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাব্বির আলম বলেন, অপরাধী যেই হোক তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, “ঘটনা শুনেছি। এ ঘটনায় পুলিশ আমাদের কাছে যেকোনো ধরনের সহযোগিতা চাইলে, আমরা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছি। হলের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অভিযুক্তদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। ঘটনার সাথে যারাই জড়িত থাকুক, আমরা শাস্তির ব্যবস্থা করব।”
সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকবর আলী বলেন, ভুক্তভোগী থানায় উপস্থিত হয়ে ঘটনা জানিয়েছেন। ঘটনাস্থল তদন্ত করে দেখা গেছে এলাকাটি আশুলিয়া থানা এলাকার মধ্যে পড়ে। তাই আসামিদের আশুলিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
আশুলিয়া থানার ওসি এএফএম সায়েদ জানান, পলাতক মামুনুর রহমান মামুন ও মো. মুরাদকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।