কথা ছিল ক্যানবেরায় পৌঁছানোর পর মিডিয়ার সামনে কথা বলবেন জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। উইকিলিকস এমনটাই জানিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।
বুধবার অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় সময় ৭টা ৩৭ মিনিটে দেশটির রাজধানী ক্যানবেরায় পৌছান অ্যাসাঞ্জ। বিমানবন্দরে পরিবারের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর অ্যাসাঞ্জ ক্যাম্পেইনের একটি গাড়িতে করে চলে যান তিনি।
এরপরই অ্যাসাঞ্জের স্ত্রী স্টেলা অ্যাসাঞ্জ, তার বাবা জন শিপটন ও আইনজীবী জেনিফার রবিনসন ও বেরি পোলাক সংবাদ সম্মেলন করেন।
এসময় স্টেলা অ্যাসাঞ্জ বলেন, “জুলিয়ান আমাকে আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে বলেছেন। সে এখানে থাকতে চেয়েছিল। কিন্তু আপনাদের বুঝতে হবে, তিনি কীসের ভেতর দিয়ে গিয়েছেন। তার সময় দরকার। তার সুস্থ হওয়া দরকার। আর এসবই একটি প্রক্রিয়ার বিষয়।
“আমি অনুরোধ করছি – অনুগ্রহ করে – আমাদের কিছুটা সময় এবং গোপনীয়তা দিন। আমাদের পরিবারকে একত্রে থাকার এবং পরিবার হিসেবে নিজেদেরকে নতুন করে খুঁজে পাবার সুযোগ দিন। সে যখন তার পছন্দ অনুযায়ী আবার কথা বলতে চাইবেন, তখনই তিনি তার বক্তব্য দেবেন।”
স্টেলা তার বক্তব্যে জানান, তার স্বামীর বিরুদ্ধে করা মামলা মূলত সাংবাদিকতার ওপর হামলা।
সংবাদ সম্মেলনে অ্যাসাঞ্জের আইনজীবী বেরি পোলাক বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের এসপিওনাজ অ্যাক্টের অধীনে কখনও কোনও সাংবাদিক বা প্রকাশকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়নি। এই আইনের ১০০ বছরের বেশি ইতিহাসে এটি এভাবে কখনও ব্যবহৃত হয়নি। নিশ্চিতভাবেই আমাদের আশা, এটি আবার কখনও এই পদ্ধতিতে ব্যবহৃত হবে না।
“জনগণের কাছে নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশের জন্য কাউকে কারাগারে রাখা উচিত নয়। এই ক্ষেত্রে এমন তথ্য প্রকাশ করা হয়েছিল যে, যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ইরাক ও আফগানিস্তানে যুদ্ধাপরাধ করেছে।
“নিঃসন্দেহে এসব তথ্য জনগণের জানা দরকার ছিল। আর জুলিয়ান এটি জনগণের সামনে প্রকাশ করেছিলেন। আশা করি এটি শুধু জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে মামলার সমাপ্তি নয়, গোটা সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে মামলারও সমাপ্তি।”
দীর্ঘ ১৪ বছরের আইনি লড়াইয়ের পর মুক্ত বাতাসে শ্বাস নিচ্ছেন উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তিতে রাজি হওয়ার পর যুক্তরাজ্যের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে এরই মধ্যে তিনি স্বভূমি অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছে গেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের গোপনীয় নথি ফাঁস করে ওয়াশিংটনের রোষে পড়া অ্যাসাঞ্জ চুক্তিতে নিজের ফৌজদারি অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছেন, যার বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র তাকে মুক্তিতে আপত্তি জানায়নি।
সোমবার যুক্তরাজ্যের বেলমার্শ কারাগার থেকে বেরিয়ে অ্যাসাঞ্জ ভাড়া করা উড়োজাহাজে করে অস্ট্রেলিয়া রওনা হন।
প্রথমে অস্ট্রেলিয়ার নিকটবর্তী প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ নর্দান মারিয়ানা আইল্যান্ডসে যান তিনি। এই দ্বীপপুঞ্জটি যুক্তরাষ্ট্রের অংশ। এর রাজধানী সাইপানে যুক্তরাষ্ট্রের একটি জেলা আদালতে বুধবার অ্যাসাঞ্জের সাজা ঘোষণা করা হয়। তাতে তার ৬২ মাসের কারাদণ্ড হয়।
তবে অ্যাসাঞ্জকে আর যুক্তরাষ্ট্রের কারাগারে থাকতে হবে না। কারণ চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাজ্যের কারাগারে থাকার মেয়াদকেও তার সাজা ভোগের মেয়াদ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের কারাগারে গত পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে বন্দি ছিলেন অ্যাসাঞ্জ। সেখান থেকেই তিনি তাকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেওয়ার বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালান।
সাইপানে যুক্তরাষ্ট্রের ডিস্ট্রিক্ট আদালতে রায় ঘোষণার পরই অ্যাসাঞ্জ নিজ দেশ অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যান। কেননা আদালত তাকে মুক্ত মানুষ হিসাবে ঘোষণা করে।
তথ্যসূত্র : সিডনি মর্নিং হেরাল্ড।