বৃষ্টি হচ্ছিল স্তাদে দ্য ফ্রান্সে। মেয়েদের ১০০ মিটার স্প্রিন্ট পিছিয়ে যায় তাতে। রেস শুরু হতে ভেজা ট্র্যাকে জুলিয়েন আলফ্রেডকে মনে হচ্ছিল, উড়ছেন রীতিমতো। সেন্ট লুসিয়ার এই অ্যাথলেট সোনা জিতলেন ১০.৭২ সেকেন্ডে।
শেলি অ্যান ফ্রেজার-প্রাইস নাম তুলে নেওয়ায় মনে হচ্ছিল সোনা জিতবেন শা’কারি রিচার্ড।সন কিন্তু ১০.৮৭ সেকেন্ডে রুপা জিতেন যুক্তরাষ্ট্রের এই তারকা। যুক্তরাষ্ট্রেরই মেলিসা জেফারসন ১০.৯২ সেকেন্ডে জিতেন ব্রোঞ্জ।
দীর্ঘদিন পর অলিম্পিকের ১০০ মিটারের পদক তালিকায় জ্যামাইকার কেউ নেই। ফ্রেজার-প্রাইস নাম তুলে নেওয়ায় একমাত্র টিয়া ক্লেটন ছিলেন ফাইনালে। তিনি শেষ করেন সপ্তম স্থানে। তবে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের জুলিয়েন আলফ্রেড চমকেই দিয়েছেন সবাইকে।
সেন্ট লুসিয়ার জনসংখ্যা মাত্র ১ লাখ ৮০ হাজার। এর আগে অলিম্পিকে কোনো পদক ছিল না তাদের। সেই আক্ষেপটা দ্রুততম মানবী হয়ে মেটালেন উসাইন বোল্টকে আদর্শ করে বেড়ে ওঠা জুলিয়েন।
ইনস্টাগ্রামে তাঁর পরিচিতি আছে তিন লাইনে। প্রথমে লেখা ‘অ্যাথলেট’। দ্বিতীয় লাইনে সেন্ট লুসিয়ার পতাকা। তৃতীয় লাইনে লেখা ‘রোমানস ৮.১৮’। এটি বাইবেলের একটি লাইন, যার অর্থ-তুমি আগামীতে যে সাফল্য পেতে চলেছ তার সঙ্গে এখনকার কষ্টের কোনও মিল নেই।
১২ বছর বয়সে বাবা হারান তিনি। এর দুই বছর পর চলে যান জ্যামাইকায়। গত বছরের ডিসেম্বরে হারান নিজের শারীরশিক্ষার শিক্ষক সাইমন স্টিফেনকে। তিনিই জুলিয়েনকে নিয়ে এসেছিলেন অ্যাথলেটিক্সে। এত হারানোর বেদনা সহ্য করে শেষ পর্যন্ত অলিম্পিকে নিজেকে চেনালেন ২২ বছরের এই তরুণী।
সেন্ট লুসিয়ার হয়ে জেতা প্রথম সোনাটা জুলিয়েন উৎসর্গ করলেন তার প্রয়াত বাবাকে, ‘‘আমি সৃষ্টিকর্তা আর বাবার কথাই ভাবছি। ২০১৩ সালে আমাদের ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে যান বাবা। এটা তোমার জন্য বাবা। এটা নিজের কোচ আর সৃষ্টিকর্তার জন্যও করেছি।’’
বাবার মৃত্যুর পর অ্যাথলেটিক্স ছেড়ে দিয়েছিলেন জুলিয়েন। কিন্তু কোচ স্টিফেনই তাকে ট্র্যাকে ফেরান। ২০১৫ সালে জ্যমাইকায় সেন্ট ক্যাথারিন হাইস্কুলে ভর্তি হন তিনি। গত বছর বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ১০০ মিটারে পঞ্চম আর ২০০ মিটারে হয়েছিলেন চতুর্থ। কিন্তু এনসিএএ ইন্ডোর প্রতিযোগিতায় ৬০ ও ২০০ মিটারে জিতে আসেন আলোচনায়। এবার তো বিশ্বের দ্রুততম মানবীই হলেন তিনি।