Beta
মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫

জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের সামনে কী

জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত না পাঠানোর দাবিতে সরব যুক্তরাজ্যের অনেকে।
জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত না পাঠানোর দাবিতে সরব যুক্তরাজ্যের অনেকে।
[publishpress_authors_box]

আবার আদালতে ফিরেছে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের মামলা। এ কি তবে শেষের শুরু? প্রশ্ন উঠতেই পারে, কারণ উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতার ভবিষ্যৎ কী হবে, তা এবারই ঠিক হচ্ছে।

গোপন সামরিক-কূটনৈতিক নথি প্রকাশের ঘটনায় বিচারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে আপিলের আবেদন জানিয়েছিলেন অ্যাসাঞ্জ।

ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান জানিয়েছে, মঙ্গল ও বুধবার তার আপিলের আবেদনের বিষয়ে শুনানি চলছে যুক্তরাজ্যের হাইকোর্টে। যেখানে নির্ধারিত হবে, কী ঘটতে যাচ্ছে তার সঙ্গে।

২০১৯ সাল থেকে লন্ডনের সুরক্ষিত বেলমার্শ কারাগারে রয়েছেন অ্যাসাঞ্জ। এই পাঁচ বছরে তার আইনজীবীরা লড়ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যর্পণ আদেশের বিরুদ্ধে।

কী ফলাফল আসতে পারে শুনানি শেষে?

জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ পাঁচ বছর ধরে রয়েছেন লন্ডনের কারাগারে।

আল জাজিরা লিখেছে, দুটি দিকই রয়েছে আলোচনায়। বিচারকরা অ্যাসাঞ্জকে প্রত্যর্পণ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ দিতে পারেন। তখন পুরো আপিল শুনানি আবার তালিকাভুক্ত করা হবে এবং সবশেষে তার প্রত্যর্পণের বিষয়ে একেবারে নতুন কোনও সিদ্ধান্তও আসতে পারে।

অথবা অ্যাসাঞ্জের আপিল আবেদন বাতিল হতে পারে। এরপর তাকে দ্রুত যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানোর জন্য তুলে দেওয়া হবে বিমানে।

তবে তেমনটা ঘটলে ফ্রান্সের স্ট্রাসবার্গের ইউরোপিয়ান কোর্ট অব হিউম্যান রাইটসে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন অ্যাসাঞ্জের আইনজীবীরা।

তা ঘটলে যতদিন না সেখানে শুনানি শেষ হবে, ততদিন যুক্তরাজ্য থেকে তার প্রত্যর্পণ হবে না। শুনানি শেষে ওই আদালত যে রায় দেবে, তা যুক্তরাজ্যকেও মেনে নিতে হবে। কারণ ইউরোপীয়ান কনভেনশন অন হিউম্যান রাইটসের স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর একটি তারা।

৫২ বছর বয়সী অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ১৯১৭ সালের গুপ্তচরবৃত্তি আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ মামলায় সাজা হতে পারে ১৭৫ বছর কারাদণ্ড। তবে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আইনজীবীরা বলেছেন, চার থেকে ছয় বছরের সাজা পেতে পারেন তিনি।

কেন ব্রিটিশ কারাগারে অ্যাসাঞ্জ

২০১০ সালে সামরিক ও কূটনৈতিক হাজার হাজার গোপনীয় নথি প্রকাশ করে উইকিলিকস। এসব তথ্য ফাঁস করেছিল সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা বিশ্লেষক চেলসি। এরপরই অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে যুক্তরাষ্ট্র।

প্রকাশিত এসব কাগজপত্রে উন্মুক্ত হয়ে পড়ে গোপন কূটনৈতিক চুক্তি, এমনকি ইরাক ও আফগানিস্তানের যুদ্ধে প্রাণ হারানো বেসামরিক নাগরিকদের তথ্যও।

২০১৯ সালে অ্যাসাঞ্জকে গ্রেপ্তার করে লন্ডন পুলিশ। এর আগে সাত বছর ধরে তিনি লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

২০১৯ সালের মে মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ড থাকাকালে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে গোপন সরকারি তথ্য সংগ্রহ ও প্রকাশ করায় গুপ্তচর আইন ভঙ্গের অভিযোগ তোলে যুক্তরাষ্ট্রের আইন বিভাগ।

এর আগে ওবামা প্রশাসন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার কথা ভাবলেও শেষ পর্যন্ত আনেনি, কারণ তা গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে হুমকির মুখে ফেলবে।

এঘটনায় বিচার করার জন্যই অ্যাসাঞ্জ নিজেদের হেফাজতে পেতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। আর কয়েক বছর ধরে অ্যাসাঞ্জও তাকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের চেষ্টার বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে। এতে করে লন্ডনে তার বন্দিজীবন হচ্ছে দীর্ঘায়িত।

যুক্তরাষ্ট্রে ফিরলে সাজা হতে পারে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের।

২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হলে অ্যাসাঞ্জের আত্মহত্যার ঝুঁকি থাকায় তার প্রত্যর্পণ আদেশ অস্বীকার করেন ব্রিটিশ বিচারক। পরে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তার সঙ্গে আচরণের বিষয়ে নিশ্চয়তা পেয়ে ব্রিটিশ উচ্চ আদালত সেই সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে নেয়। ২০২২ সালে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল প্রত্যর্পণের অনুরোধে সম্মতি দেন।   

তারপরও আইনি লড়াই চলতে থাকে। অ্যাসাঞ্জের আইনজীবী দল প্রীতি প্যাটেলের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে। সেই আপিল আবেদনও এক বিচারক বাতিল করে দেন।

তার বিরুদ্ধে অ্যাসাঞ্জের আপিল গ্রহণ হবে কি না, এখন উচ্চ আদালতের দুজন বিচারক সেই সিদ্ধান্ত দেবেন।

মঙ্গলবার অ্যাসাঞ্জের আইনজীবীরা তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন। তারপর কথা বলার কথা ‍যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের আইনজীবী দলের। এরপর বিচারকরা বিবেচনা করবেন পুরো বিষয়টি।

এতে সিদ্ধান্ত পেতে লাগতে পারে কয়েক ঘণ্টা, কয়েক দিন বা কয়েক সপ্তাহ।

ফলে সবমিলিয়ে এবারের শুনানিকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণ চ্যালেঞ্জের ‘শেষের শুরু’ বলছেন অ্যাসাঞ্জ সংশ্লিষ্টরা।

তবে পুরো এই প্রক্রিয়ায় প্রভাব পড়ছে অ্যাসাঞ্জের স্বাস্থ্যের ওপর। সামনে কী অপেক্ষা করছে, সেই বিষয়েও ভীতি প্রকাশ করেছে অধিকারকর্মীরা।

অ্যাসাঞ্জের স্ত্রী স্টেলা অ্যাসাঞ্জ গত সপ্তাহে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তার স্বামী মানসিক অবসাদে ভুগছেন। কারাগারে থাকার এই সময়ে তিনি অকালে বুড়িয়ে যাচ্ছেন। তার মানসিক ও শারিরীক স্বাস্থ্য নিয়ে ভয়ে রয়েছেন তিনি।

স্টেলা বলেন, “কারাগারে থাকা প্রতিটি দিনই তার জীবন ঝুঁকিতে রয়েছে। আর যদি প্রত্যর্পণ করা হয়, তবে তিনি মারাই যাবেন।”

স্টেলা ও অ্যাসাঞ্জের রয়েছে দুটি সন্তান। স্টেলা বলেন, “জুলিয়ান আর আমি সন্তানদের নিরাপদে রাখতে চাই। সবকিছু তারা জানে না। কী ঘটছে সেসব তাদেরকে জানানো ঠিক হবে বলে আমার মনে হয় না।”

মানবাধিকার সংগঠনগুলো চায় জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের মুক্তি।

জাতিসংঘের নির্যাতন বিষয়ক বিশেষ র‌্যাপোটিয়ার অ্যালিস জিল অ্যাডওয়ার্ডও অ্যাসাঞ্জের প্রত্যর্পণ স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। তার ভয়, তাকে প্রত্যর্পণ করা হলে তিনি প্রবল নির্যাতন বা অন্য কোনও সাজার ঝুঁকিতে পড়বেন।    

এদিকে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে তার নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছে দেশটির সরকার। দেশটির সংসদ গত সপ্তাহে তার মুক্তি চেয়ে একটি প্রস্তাবও পাস করে। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি অ্যালবানিজ বলেন, “এ বিষয়ে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে কথা বলেছি। আমাদের নিজেদের একটি শক্ত দৃষ্টিভঙ্গি দেখানো দরকার। যেন দেশগুলো বিষয়টি বিবেচনা করে তারপর সিদ্ধান্তে পৌঁছায়।”

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো আরও কিছু মানবাধিকার সংগঠন এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলা রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স অনেক আগে থেকেই অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে নেওয়ার এবং তার প্রত্যর্পণ আদেশ বাতিল করার আহ্বান জানাচ্ছে।

রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের আন্তর্জাতিক প্রচার বিষয়ক পরিচালক রেবেকা ভিনসেন্ট শুনানির আগে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, “আশা করি, যুক্তরাষ্ট্র এই প্রত্যর্পণ অনুরোধ তুলে নেবে এবং বেলমার্শের কারাগারে অ্যাসাঞ্জ যতদিন পার করলেন সেটাকেই সাজা ভোগের সময় হিসেবে বিবেচনা করবে।”

তার মতে, জনস্বার্থে এই ধরনের তথ্য প্রকাশ করায় এমন আচরণেষর শিকার কারও হওয়া উচিৎ নয়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত