জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের সময় হত্যা-নিপীড়নের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্টদের ফোন কলসহ অনলাইনে পাওয়া সব রেকর্ডের সত্যতা যাচাইয়ে ডিজিটাল ফরেনসিক পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
প্রসিকিউশনের এক আবেদেনের ওপর শুনানি নিয়ে সোমবার বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডিকে এ আদেশ দিয়েছে। ট্রাইব্যুনালে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর বি এম সুলতান মাহমুদ ও প্রসিকিউটর তানভীর জ্বোহা।
পরে আদেশের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ বলেন, “বিভিন্ন ভয়েস রেকর্ডিং ফাঁস হয়ে যাচ্ছে, সেগুলোর অথেন্টিসিটি প্রমাণ করার জন্য এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার) থেকে যে ভয়েস ক্লিপিংগুলো নিয়েছি, এগুলো যাচাই করার জন্য সিআইডির প্রতি একটা নির্দেশনা ট্রাইব্যুনালে চেয়েছিলাম, ট্রাইব্যুনাল সেটা মঞ্জুর করেছেন।”
এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে সাংবাদিকরা অনুরোধ করলে তিনি বলেন, “ট্রাইব্যুনালে আমরা বলেছি, শেখ হাসিনাসহ অন্যান্য যাদের অডিও রেকর্ডগুলো ফাঁস হয়েছে, তাদের অথেন্টিসিটি প্রমাণ করার জন্য আমরা ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেছিলাম, ট্রাইব্যুনাল সেটা মঞ্জুর করেছেন। সিআইডিসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য যে সংস্থা আছে, তাদের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছেন।”
ওইখানে কার কার কল রেকর্ড আছে, জানতে চাইলে সুলতান মাহমুদ বলেন, “এটা এই মুহূর্তে বলা যাবে না, কার কার আছে।”
এরপর সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাব দেন আরেক প্রসিকিউটর তানভীর জ্বোহা। তিনি বলেন, “আমরা বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্ন অনলাইন ফোরামে অনেক রকম ভয়েস রেকর্ড পাচ্ছি। এবং ভয়েস রেকর্ডগুলোর সূত্র, জিও লোকেশন, এবং কনটেন্ট, টোন, ইউনিক ম্যাচ, যেগুলোকে ডিএন বলি, সেগুলো ঠিক কি না, বা সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ভয়েস কি না—এ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আমরা কোর্টে নির্দেশনা চেয়েছি। আমাদের সিআইডির যে বিশেষায়িত ফরেনসিক ল্যাব আছে, সেই ফরেনসিক ল্যাবের তথ্য-উপাত্ত যাতে এখানে প্রেরিত হয়।”
নতুন কোনও কল রেকর্ড না কি, যেগুলো ফাঁস হয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে ফরেনসিক প্রতিবেন চাওয়া হয়েছে—জানতে চাইলে তানভীর জ্বোহা বলেন, “জ্বি সেগুলো আছে, এবং আমাদের আলামত এবং জব্দকৃত যেসকল মুঠোফোন আছে, সেখানে বেশকিছু নির্দেশনা পেয়েছি, সেই নির্দেশিত ভয়েসের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য, অকাট্য দালিলিক প্রমাণের জন্য আমরা আসলে ফরেনসিক করতে চেয়েছি।”
ফাঁস হওয়াসহ আরও অনেক অডিও রেকর্ড জব্দ করা হয়েছে জানিয়ে তানভীর বলেন, “এগুলো নিয়ে কাজ চলছে। শুধুমাত্র সাবেক প্রধানমন্ত্রীরই না, অনেকেরই ভয়েস রেকর্ড আছে। বেশকিছু সমর্থিত এবং অসমর্থিত, বিভিন্ন রকমের অনলাইন থেকে শুরু করে এবং অপ্রকাশিত রেকর্ড, এমন কিছু সোর্স থেকে রেকর্ডগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো আসলে তার কি না, এবং জিও লোকেশনটা কী, আরও যথাযথ তদন্তের জন্য আমরা এ কাজটি করছি।”
তবে গণমাধ্যমে এই দুই প্রসিকিউটরের বক্তব্য দেওয়ার পর তাদের বক্তব্য অফিসিয়াল নয় জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আমরা হিউজ পরিমাণ ডিজিটাল এভিডেন্স কালেকশন করেছি। ভিডিও ফুটেজ, সিসিটিভি ফুটেজ, বিভিন্ন মোবাইলে ধারণকৃত ভিডিও। বিভিন্ন জায়গার কল রেকর্ড মেসেজ বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তির কাছ থেকে, সংবাদমাধ্যম থেকে পেয়েছি। সেগুলো থেকে ডিজিটালি ফরেনসিক করে রিপোর্টের জন্য সিআইডিকে নির্দেশনা প্রদানের জন্য একটি আবেদন করা হয়। আমাদের প্রাপ্ত তথ্যের বিষয়ে তারা সার্টিফিকেশন দেবে।”
দুই প্রসিকিউটরের বক্তব্যের বিষয়ে তাজুল বলেন, “সেক্ষেত্রে উনারা যদি কোনও বিশেষ ব্যক্তির নাম বলে থাকেন, সেটা কোনও বিশেষ ব্যক্তির না। আসলে সমস্ত এভিডেন্সের ব্যাপারেই পার্ট পার্ট করে ফরেনসিক টেস্ট করার জন্য তাদের কাছে পাঠাচ্ছি। এ মর্মে কোর্টের কাছ থেকে আদেশ নিয়েছি।”
সরকারের কোনও সংস্থার ব্যাপারে সহযোগিতা বা অসহযোগিতার ব্যাপারে প্রসিকিউশন থেকে আনুষ্ঠানিক কোনও বক্তব্য দিচ্ছে না জানিয়ে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, “কারণ এটা একটা চলমান প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে, তথ্য সংগ্রহ চলছে। কাউকে এই মুহূর্তে কারও বিরুদ্ধে দায়ী করার মতো অবস্থায় এখনও আমরা যাইনি। যদি কোনও সংস্থা সহযোগিতা না করে, আইনগত পদ্ধতিতে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয় আছে। আপাতত কারও বিরুদ্ধে দায়ী করার মতো ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত মনে করছি না। সুতরাং এ ব্যাপারে কোনও ভুল বোঝাবুঝি যাতে না হয়, সেটা আপনাদের সামনে ক্লিয়ার করছি।”
তার মানে আপনারা যেখানে যাচ্ছেন সহযোগিতা পাচ্ছেন কি—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “পাচ্ছি বা পাচ্ছি না, এ দুটো প্রশ্নের কোনোটিরই জবাব আমি দিচ্ছি না। আমরা তথ্য কালেকশনের মধ্যে আছি, কিছু পাচ্ছি, কিছু পাচ্ছি না, হয়তো আমরা চেষ্টা করছি। সুতরাং অসহযোগিতা করছে, এ রকম অভিযোগ করার পর্যায়ে আমরা এখনও নেই।
“আমি যেটা বলেছি, সেটা আমাদের অফিসিয়াল বক্তব্য, এর বাইরে যা কিছু বলা হোক না কেন আমাদের অফিসিয়াল বক্তব্য হিসেবে গণ্য হবে না।”