Beta
মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫

জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে শতকোটি টাকা অনুদান দিল সরকার

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার ত্রাণ তহবিল থেকে ১০০ কোটি টাকার চেক জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধের হাতে তুলে দেন - পিআইডি
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার ত্রাণ তহবিল থেকে ১০০ কোটি টাকার চেক জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধের হাতে তুলে দেন - পিআইডি
[publishpress_authors_box]

অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মাদ ইউনূস তার ত্রাণ তহবিল থেকে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনকে ১০০ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হতাহতদের পরিবারকে এই ফাউন্ডেশন থেকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি মাসিক ভাতা দেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। চলতি সপ্তাহেই এ কার্যক্রম শুরুর কথা থাকলেও ঠিক কত টাকা করে সহায়তা দেওয়া হবে তা এখনও নির্ধারণ হয়নি।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এসব কথা বলেন। এসময় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও জুলাই  শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ উপস্থিত ছিলেন।

৭ জন কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এবং ১৪ সাধারণ সদস্য নিয়ে এই ফাউন্ডেশনের কমিটি করা হয়েছে, যার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। কোষাধ্যক্ষ হিসেবে রয়েছেন কাজী ওয়াকার আহমেদ। দপ্তর সম্পাদক ডাক ও টেলিযোগাযোগ উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। সদস্য হিসেবে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম ও উপদেষ্টা শারমিন মুরশিদ রয়েছেন। বাকি ১৪ সদস্য এখনও ঠিক করা হয়নি।

ফাউন্ডেশনটি চলতি সপ্তাহ থেকে প্রথম উদ্যোগ হিসেবে জরুরি আর্থিক সহায়তা শুরু করতে যাচ্ছে জানিয়ে নাহিদ বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টা ত্রাণ তহবিল থেকে ১০০ কোটি টাকার একটি ফান্ড জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনে অনুদান হিসেবে দিয়েছেন।”

ফাউন্ডেশনটিকে স্বাধীন আখ্যায়িত করে উপদেষ্টা নাহিদ বলেন, “যে কেউ এখানে কনট্রিবিউট করতে পারবে।”

দেশে ও দেশের বাইরে সকলের কাছে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা সকলের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি– এখানে অনুদান দেওয়ার জন্য, যাতে উদ্যোগগুলো সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি। শহীদ পরিবারদের পাশে দাঁড়াতে পারি।”

উপদেষ্টা নাহিদ বলেন, “এই কমিটির কার্যপরিধির মধ্যে হচ্ছে জরুরি আর্থিক সহায়তা তাদের জন্য, যারা আহত অবস্থায় হাসপাতালে আছেন, আর্থিক সংকটে ভুগছেন।”

পরবর্তী সময়ে এককালীন ভাতা দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করা হবে। আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি অভ্যুত্থানের ডকুমেন্ট আরকাইভিংয়ের জন্য;  অভ্যুত্থানের স্মৃতি ধরে রাখা শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখা। তাদের আদর্শকে বাস্তবায়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদি একটা পুর্নবাসনের জন্য সহযোগিতা করা হবে।”

অভ্যুত্থানে সম্পৃক্তদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য কাউন্সিলিং করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “অভ্যুত্থানের যারা অংশগ্রহণ করেছেন, আহত এবং শহীদ হয়েছেন, তাদের পরিবারের জন্য এই ব্যবস্থা করা হবে।”

অ্যাডভোকেসি ও সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ করা হবে বলেও জানান তিনি, বলেন, “এই ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে প্রচারণা করা হবে। অভ্যুত্থানের যে ডকুমেন্টশন আছে সেগুলো প্রচার করা হবে।”

প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলের প্রসঙ্গ টেনে এই উপদেষ্টা বলেন, “সেখানে বন্যার্তদের জন্য যে অনুদান আসছে সেটা এই ফাউন্ডেশন থেকে আলাদা। প্রধান উপদেষ্টা চাইলে যে কোনও খাতে অনুদান দিতে পারেন।”

সরকারের ত্রাণ তহবিল থেকে ফাউন্ডেশনের জন্য প্রথম উদ্যোগ শুরু করা হলো জানিয়ে তিনি বলেন, “এখন আমরা সবার কাছে ডোনেশনের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। সরকারের জায়গা থেকে বিভিন্ন যে উদ্যোগ আছে সেটা আলাদাভাবে চলতে থাকবে। ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে কাজগুলো চলতে থাকবে।”

দেশবাসী এবং প্রবাসীদের অনুদান দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শহীদ মীর মুগ্ধের বড় ভাই ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বলেন, “আপনাদের দান আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যারা আহত অবস্থায় আছে তাদের চিকিৎসা দ্রুত শুরু করা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।”

সবাইকে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধও জানান তিনি।

হতাহতের প্রাথমিক তালিকা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা নাহিদ  বলেন, “বিশ হাজারের অধিক আহত– এটা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কমিটির তথ্যানুসারে। নিহত ৮০০ জনের কাছাকাছি বা ৮০০ বলব। মূলত পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে, সেটা শেষের দিকে। সাতশ’র মত যোগাযোগ করতে পেরেছি এখন পর্যন্ত। যোগাযোগ সম্পূর্ণ হলে স্মরণসভা সরকারের পক্ষ থেকে করা হবে।”

ক্ষতিগ্রস্তদের মাত্রা অনুসারে তালিকা ভাগ করা হয়েছে বলে জানান নাহিদ।  তিনি বলেন, “হাত-পা হারিয়েছে কয়জন, চোখ হারিয়েছে কয় জন, তাদের অসুস্থতার মাত্রা কী রকম– যারা চোখ হারিয়েছে তাদের জন্য বিশেষ মেডিকেল টিম বাইরে থেকে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে যাতে দৃষ্টিশক্তি যতটুকু সম্ভব ফেরত আনা যায়।”

আহতদের জন্য সরকারি-বেসরকারি মেডিকেলে চিকিৎসা ফ্রি করে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন থেকে সহায়তা করা হয়েছে। অনেক জায়গায় এরকম হচ্ছে– আহতদের কাছে পৌঁছাতে পারে নাই। ব্যক্তিগত জায়গায় যে টাকা খরচ হয়েছে সেই টাকা যাতে ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।”

পরবর্তী সময়ে নীতিমালা অনুযায়ী মাসিক ভাতা ঠিক করা হবে বলেও এসময় জানান তিনি। নাহিদ বলেন, “কী পরিমাণ সহায়তা শহীদদের জন্য দেওয়া হবে তা এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। আগামীকাল (বুধবার) ফাউন্ডেশনের জন্য আনুষ্ঠানিক মিটিং আছে। সেই মিটিংয়ের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেব।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত