ডলার সংকটের কারণে আমদানি ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তার সুফলও মিলছে। এতে বাণিজ্য ঘাটতিতে নিম্মগামী প্রবণতা এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বুধবার বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) প্রথম প্রান্তিকে অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৬৩ কোটি (৪.৬৩ বিলিয়ন) ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ কম।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৫০১ কোটি (৫.০১ বিলিয়ন) ডলার।
চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ১ হাজার ৫১৯ কোটি (১৫.১৯ বিলিয়ন) ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করেছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে দশমিক ৯ বেশি। গত বছরের এই দুই মাসে ১৫ দশমিক শূন্য ছয় বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল।
অন্যদিকে জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ১০ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার আয় করেছেন রপ্তানিকারকরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৫ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। গত বছরের এই তিন মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে ১০ দশমিক শূন্য পাঁচ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছিল।
এ হিসাবেই চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রথম প্রান্তিকে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ কমে ৪ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।
২২ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষ হয়েছিল। তার আগের অর্থবছরে (২০২২-২৩) এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২৭ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার।
লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি
অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সূচক হচ্ছে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্য বা ব্যালান্স অব পেমেন্ট। এই সূচকে ৬ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলারের বড় ঘাটতি নিয়ে শেষ হয়েছিল ২০২৩-২৪ অর্থবছর।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) এই সূচকে ১৫ কোটি ডলারের উদ্বৃত্ত ছিল। কিন্তু সেপ্টেম্বর শেষে অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ব্যালান্স অব পেমেন্ট ১২ কোটি ৭০ লাখ ডলারের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে।
গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে এই সূচকে ১৮২ কোটি ৯০ লাখ (১.৮৩ বিলিয়ন) ডলারের ঘাটতি ছিল।
আর্থিক হিসাবে উদ্বৃত্ত
২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে আর্থিক হিসাবে (ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট) উদ্বৃত্তের পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার। তবে ঘাটতি নিয়ে শুরু হয় ২০২৪-২৫ অর্থবছর। অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার।
তবে জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে এই সূচকে ৫৬ কোটি ডলারের উদ্বৃত্ত হয়েছে।
গত অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১২৩ কোটি (১.২৩ বিলিয়ন) ডলার।
সামগ্রিক লেনদেনে ঘাটতি ১.৪৬ বিলিয়ন ডলার
সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে (ওভারঅল ব্যালান্স) ঘাটতি কমেছে। জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে এই সূচকে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার।
গত বছরের একই সময়ে এই ঘাটতি ছিল ২ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার।
রেমিটেন্স বেড়েছে ৩৩.৩ শতাংশ
দেশের অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর মধ্যে এ মুহূর্তে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে রেমিটেন্স বা প্রবাসী আয়।
গত ২০২৩০২৪ অর্থবছরে প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। যা ছিল আগের অর্থবছরের (২০২২-২৩) চেয়ে ১০ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেশি।
সেই ইতিবাচক ধারা চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরেও অব্যাহত রয়েছে। প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৬ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৩ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি।
ইতোমধ্যে অক্টোর মাসের রেমিটেন্সের তথ্যও প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের চতুর্থ মাস অক্টোবরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ২৩৯ কোটি ৫১ লাখ (২.৩৯ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। এই অঙ্ক গত বছরের অক্টোবরের চেয়ে ২১ দশমিক ৫০ শতাংশ বেশি।
সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) ৮ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছে দেশে। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি।
এফডিআই কমেছে ১৫ শতাংশ
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ৩০ কোটি ডলারের নিট এফডিআই (সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ) এসেছে দেশে। গত অর্থবছরের একই সময়ে এই অঙ্ক ছিল ৩৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার।
এ হিসাবে এই তিন মাসে এফডিআই কমেছে ১৫ শতাংশ।