ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টার মামলায় জামিন পেয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। তবে জামিন পেলেও কারামুক্তি মিলছে না তার। কারণ, দেশের বিভিন্ন থানায় তার নামে মামলা রয়েছে।
ফলে অনুপ্রবেশের চেষ্টার অভিযোগে হওয়া মামলা থেকে জামিন পেলেও আপাতত কারাগারই থাকছে তার ঠিকানা।
মঙ্গলবার সকালে সিলেটের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক অঞ্জন কান্তি দাসের আদালতে তোলা হয় সাবেক বিচারপতি মানিককে। সেনা ও পুলিশের কড়া নিরাপত্তার মধ্যে তারা সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আদালতে নেওয়া হয়।
আদালতে তার পক্ষে জামিন আবেদন করেন সরকার নিযুক্ত আইনজীবী। শুনানি শেষে তার আবেদন মঞ্জুর করেন বিচারক।
সংশ্লিষ্ট আদালতের পুলিশ পরিদর্শক জমশেদ আলম জানান, সাবেক বিচারপতি মানিকের বিরুদ্ধে ৫৪ ধারায় মামলা হয়েছিল। সেটিতেই তিনি জামিন পেয়েছেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় মামলা থাকায় তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না।
শুনানির পর তাকে প্রথমে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়, পরে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, ঢাকার একটি মামলার আসামি হিসেবে তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
তীব্র ছাত্র-গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। সরকার পতনের পর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আটক ও গ্রেপ্তার করা হতে থাকে সাবেক সরকার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা থেকে শুরু করে কর্মকর্তাদেরও। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মামলাও হতে থাকে।
এরই মধ্যে গত ২৩ আগস্ট রাত সাড়ে ৯টার দিকে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে শামসুদ্দিন চৌধুরী আটক করে বিজিবি। পরদিন সকালে তাকে কানাইঘাট থানায় হস্তান্তর করা হয়। ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে সেদিন বিকেলেই আদালতে হাজির করা হলে সিলেটের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম-১ আদালতের বিচারকর আলমগীর হোসাইন তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
সেদিন যখন শামসুদ্দিন চৌধুরীকে আদালতে তোলা হচ্ছিল তখন প্রাঙ্গণে থাকা কয়েকজন তাকে বেধড়ক কিলঘুষি মারে, সেসময় তিনি গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্দেশ্য করে নানা ধরনের স্লোগানও দেওয়া হচ্ছিল।
সেদিন বিকালে আদালত থেকে শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হলে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় তাকে ‘আনফিট’ ঘোষণা করেন চিকিৎসক। তার পরামর্শ অনুযায়ী সাবেক এই বিচারপতিকে ভর্তি করা হয় সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে।
ওই রাতেই তার স্ক্রোটাল ইনজুরি বা অণ্ডকোষে আঘাতের কারণে সৃষ্ট সমস্যার অস্ত্রোপচার হয়। এরপর থেকে হাসপাতালেই ছিলেন তিনি। এছাড়া শামসুদ্দিন চৌধুরীর হৃদযন্ত্রেও কিছু জটিলতা আছে, ১০ বছর আগে তার বাইপাস সার্জারি হয়েছিল। পাশাপাশি ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপেরও রোগী তিনি।
সব মিলিয়ে তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে ১২ সেপ্টেম্বর হাসপাতাল থেকে তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এরপর আবার কারাগারে ফিরেছেন তিনি।
সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. সাখাওয়াত হোসেন সকাল সন্ধ্যাকে জানিয়েছেন, সিলেটে একটি মামলায় জামিন হলেও ঢাকার একটি মামলায় তাকে আপাতত কারাগারেই রাখতে হচ্ছে। পরবর্তীতে ঢাকায় স্থানান্তর করা হবে।