Beta
শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫
ট্রাম্পকে মোকাবেলায় স্পষ্ট পরিকল্পনা দিতে না পারায় পদত্যাগের জন্য চাপ

চাপে থাকা ট্রুডো কি পদত্যাগ করবেন

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।
[publishpress_authors_box]

ভারতের সঙ্গে চলমান কূটনৈতিক ডামাডোলের মধ্যেই নতুন করে চাপে পড়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। মন্ত্রিসভা থেকে তার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মিত্র ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড পদত্যাগের ঘটনা বেকায়দায় ফেলেছে তাকে।

ক্রিস্টিয়া ছিলেন কানাডার অর্থমন্ত্রী ও উপ-প্রধানমন্ত্রী। জাতীয় নির্বাচনের কয়েক মাস বাকি থাকতে গত সোমবার তার পদত্যাগের ঘটনাকে ট্রুডোর জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্রিস্টিয়ার পদত্যাগের ঘটনায় ট্রুডো প্রধানমন্ত্রীর পদের পাশাপাশি তার দল লিবারেল পার্টির নেতৃত্ব থেকেও সরে যাওয়ার চাপের মুখে আছেন।

ক্রিস্টিয়া জানান, যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কানাডার ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপের হুমকি মোকাবেলায় ট্রুডোর সঙ্গে মতপার্থক্যের কারণে তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

ফ্রিল্যান্ড তার সোমবারের পদত্যাগপত্রে লিখেছেন, “যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসন আক্রমণাত্মক অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদী নীতি অনুসরণ করছে। এর মধ্যে রয়েছে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি। এই হুমকিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে।

“এজন্য এখন থেকেই আমাদের আর্থিক সংস্থানগুলো সংরক্ষণ করতে হবে, যাতে আসন্ন শুল্ক যুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় মজুদ রাখা যায়। এছাড়া ব্যয়বহুল রাজনৈতিক চালবাজিও এড়িয়ে চলতে হবে, যার সামর্থ্য জন্য আমাদের এখন নেই। আর তাছাড়া এতে কানাডিয়ানদের মাঝেও আমাদের নিয়ে সন্দেহ তৈরি হবে।”

তার পদত্যাগের কয়েক মাস আগে থেকেই কানাডায় ট্রুডোর নেতৃত্ব নিয়ে বিতর্ক চলে আসছে। জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, আবাসন সংকট এবং অন্যান্য সমস্যার কারণে ট্রুডোর জনপ্রিয়তা অনেকটাই কমে গেছে।

নভেম্বরের শেষের দিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প কানাডার উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেন। এতে নতুন করে ট্রুডোর বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

কানাডার ব্যবসায়ী নেতারা এবং রাজনীতিবিদরা ট্রাম্পের ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় ট্রুডোর পরিকল্পনা কী, সেই প্রশ্ন তুলেছেন।

বিরোধী দলের আইনপ্রণেতারা তাকে কানাডার অর্থনীতির ওপর এই হুমকি প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানান।

কনজারভেটিভ পার্টির নেতা পিয়েরে পলিয়েভর সোমবার কানাডার রাজধানী অটোয়ায় সাংবাদিকদের বলেন, “সবকিছু নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। আমাদের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার এবং ঘনিষ্ঠ মিত্রের পক্ষ থেকে ২৫ শতাংশ শুল্কের হুমকির মুখে আমরা এই বিশৃঙ্খলা, বিভাজন ও দুর্বলতাকে মেনে নিতে পারি না।”

তিনি আরও বলেন, “ট্রাম্প এমন একজন ব্যক্তি, যিনি কয়েক মাইল দূর থেকেই অন্যের দুর্বলতা আঁচ করতে পারেন।”

ফ্রিল্যান্ডের পদত্যাগের পর চাপ সামলাতে ট্রুডো এখন বিকল্প পথগুলো বিবেচনা করছেন বলে জানিয়েছে দেশটির গণমাধ্যমগুলো।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে জাস্টিন ট্রুডো।

ট্রুডো পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন

বলা হচ্ছে, ২০১৫ সাল থেকে কানাডার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করা ট্রুডো শেষ পর্যন্ত লিবারেল পার্টির নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়াতে পারেন। আর এমনটা ঘটলে দলটিকে একজন অন্তর্বর্তীকালীন নেতা বাছাই করতে হবে। ওই নেতা আরেকজন স্থায়ী নেতা নির্বাচনের জন্য জাতীয় সম্মেলনের আয়োজন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন।

তবে অন্তর্বর্তীকালীন নেতার জন্য সম্ভাব্য প্রার্থী কে হতে পারেন, তা এখনও পরিষ্কার নয়। বিষয়টি ক্রমশ জটিল হয়ে উঠেছে। কারণ কানাডাকে ২০২৫ সালের অক্টোবরের মধ্যে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। ফলে নেতৃত্বে পরিবর্তনের জন্য লিবারেলদের হাতে সময় খুবই সীমিত।

তবে কানাডার ইতিহাসবিদ রবার্ট বোথওয়েল অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেছেন, “যদি আরও এক বা দুইজন লিবারেল মন্ত্রী পদত্যাগ করেন বা পুনর্নির্বাচনে না দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে ট্রুডো ‘টোস্ট হয়ে যাবেন’। অর্থাৎ তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হবেন।

লিবারেল এমপিরা ট্রুডোকে সরে দাঁড়াতে বলতে পারেন

এরপরও ট্রুডো প্রধানমন্ত্রী থাকতে চাইলে তাকে অপসারণ করার কোনও আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া লিবারেল পার্টিতে নেই। অবশ্য, দলের অধিকাংশ পার্লামেন্ট সদস্য চাইলে তাকে সরে দাঁড়ানোর জন্য চাপ দিতে পারেন।

কিছু লিবারেল এমপি এর মধ্যেই প্রকাশ্যে ট্রুডোকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন। অবশ্য তার পাশেও আছেন অনেকে।

সিবিসি নিউজের হিসাব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ১৩ জন লিবারেল সংসদ সদস্য ট্রুডোকে দলের শীর্ষ পদ থেকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন।

সোমবার ট্রুডোকে পদত্যাগের আহ্বান জানানো সংসদ সদস্য চ্যাড কলিন্স বলেন, “আমি বলতে পারি, আমরা ঐক্যবদ্ধ নই। আমাদের সামনে এগোনোর একমাত্র উপায় হলো, নতুন নেতা নির্বাচন করা এবং কানাডিয়ানদের কাছে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে একটি নতুন পরিকল্পনা উপস্থাপন করা।”

বিরোধী এমপিরা লিবারেল সরকারকে অপসারণ করতে পারেন

কানাডার পার্লামেন্টে বর্তমানে লিবারেলদের সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন নেই। এজন্য বিরোধী আইনপ্রণেতারা অনাস্থা প্রস্তাব আনলে তাদের সরকার ঝুঁকিতে পড়বে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে, যদি সব দল লিবারেলদের বিরুদ্ধে ভোট দেয়, তবে ট্রুডো সরকারের পতন হবে। অবশ্য যদি কোনও একটি বিরোধী দল ভোটদান থেকে বিরত থাকে, তবে ট্রুডো ক্ষমতায় থাকতে পারবেন।

এখন পর্যন্ত বামপন্থী নিউ ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এনডিপি) লিবারেলদের সমর্থন দিচ্ছে। তাদের সমর্থনের ফলে কয়েকমাস আগে কনজারভেটিভদের অনাস্থা প্রস্তাবও ব্যর্থ হয়।

তবে লিবারেলদের মতো এনডিপিরও জনমত জরিপে অবস্থান দুর্বল। আগামী বছরের নির্বাচনেও তাদের ভোটে যাওয়ার তেমন একটা ইচ্ছা নেই। ২০২৫ সালের ২০ অক্টোবরের মধ্যে কানাডায় পরবর্তী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

তবে এনডিপি নেতা জগমিত সিং এই সপ্তাহে বলেছেন, তিনি মনে করেন ট্রুডোর পদত্যাগ করা উচিৎ।

জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে সদ্য পদত্যাগ করা কানাডার অর্থমন্ত্রী এবং উপ-প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড।

সোমবার সিং বলেন, “তারা কানাডিয়ানদের জন্য লড়াইয়ের বদলে নিজেদের মধ্যে লড়াই করছে। এই কারণে আজ আমি জাস্টিন ট্রুডোকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানাচ্ছি। তার বিদায় নেওয়া উচিৎ।”

এদিকে, পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে মঙ্গলবার থেকে শীতকালীন ছুটি শুরু হয়েছে। ২৭ জানুয়ারির আগে আর তা খুলবে না। বিরোধী দলগুলো অনাস্থা ভোট আয়োজনের প্রথম সুযোগ পাবে তার পরে।

তার মানে, ফেব্রুয়ারির আগে ট্রুডোর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা যাচ্ছে না। তবে অনাস্থা ভোট সফল হলে আগাম নির্বাচনের পথ সুগম হবে।

ট্রুডো থেকে যেতে পারেন

ট্রুডো নেতৃত্বে থাকার সিদ্ধান্ত নিলে তাকে আসন্ন নির্বাচনের আগে লিবারেল পার্টির মধ্যে পুনরায় সুদৃঢ় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। এজন্য তিনি পার্লামেন্ট স্থগিত করার সিদ্ধান্তও নিতে পারেন।

এতে বর্তমান অধিবেশন আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হলেও পার্লামেন্ট ভাঙবে না। এর মাধ্যমে তিনি কিছুটা সময় পাবেন এবং অনাস্থা ভোট এড়াতে পারবেন।

স্থগিতাদেশ দেওয়ার ফলে হাউস অব কমন্স কয়েক সপ্তাহ দেরিতে খুলবে। এতে সরকার দেশ পরিচালনার জন্য তাদের লক্ষ্য নিয়ে নতুন পরিকল্পনা উপস্থাপন করতে পারবে।

তবে এই সপ্তাহের পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, কানাডার আগাম নির্বাচনের দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়েছে।

ট্রুডো যেকোনো সময় পার্লামেন্ট ভেঙে নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্তও নিতে পারেন। এতে তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ হবে ভোটারদের হাতে।

তবে সাম্প্রতিক জনমত জরিপে দেখা গেছে, লিবারেলরা কনজারভেটিভ পার্টি থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। পরবর্তী নির্বাচনে কনজারভেটিভদের জয়ী হওয়ার এবং সরকার গঠনের সম্ভাবনাই বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা

সাম্প্রতিক জরিপগুলো বলছে, জাস্টিন ট্রুডো আসন্ন নির্বাচনের আগে জনসমর্থন ফিরে পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন।

গত নভেম্বরে লেজার পরিচালিত একটি জরিপে দেখা যায়, ৪২ শতাংশ কানাডিয়ান আগামী নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টিকে ভোট দেওয়ার কথা ভাবছেন। এর বিপরীতে, মাত্র ২৬ শতাংশ ট্রুডোর লিবারেল পার্টিকে ও ১৫ শতাংশ নিউ ডেমোক্র্যাটিক পার্টিকে (এনডিপি) সমর্থন করেছেন।

একই জরিপে উঠে আসে, প্রায় ৭০ শতাংশ কানাডিয়ান ট্রুডোর সরকারের প্রতি অসন্তুষ্ট।

ওন্টারিওর ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক লরা স্টিফেনসন আল জাজিরাকে বলেন, “এই মুহূর্তে কানাডায় পরিবর্তনের জন্য ব্যাপক আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। আর কানাডিয়ানদের বিশ্বাস, দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকা সরকারের কাছ থেকে কোনও পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম।”

২০১৫ সালে জাস্টিন ট্রুডোর কানাডার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার মধ্য দিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হার্পারের অধীনে প্রায় এক দশকের কনজারভেটিভ পার্টির শাসনের অবসান ঘটে।

ট্রুডোর শাসনকালও এখন ১০ বছরের কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়ায়, কানাডিয়ানরা তার সরকারের প্রতি ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। বিশ্বব্যাপী অন্যান্য অনেক দেশের মতো কানাডায়ও ‘ক্ষমতাসীন ক্লান্তি’ দেখা দিচ্ছে।

জগমিত সিং।

অন্টারিও টেক ইউনিভার্সিটির সেন্টার অন হেইট বায়াস অ্যান্ড এক্সট্রিমিজমের পরিচালক বারবারা পেরি বলেন, “আমরা এখন এমন একটি অবস্থায় পৌঁছেছি, যা ট্রাম্পের প্রথম নির্বাচিত হওয়ার সময় তথা ২০১৬ সালের তুলনায় খুবই ভিন্ন।”

তিনি উল্লেখ করেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কানাডায় ডানপন্থী চিন্তাধারা বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

তিনি আরও বলেন, “২০১৬ সালে আমরা ডানপন্থী রাজনীতির উত্থানের কিছুটা আভাস দেখেছিলাম। তবে এখন আমরা শুধুমাত্র আভাস নয়, আরও অনেক বেশি কিছু দেখতে পাচ্ছি।

“এটি ডানপন্থীদের জন্য অনেক ইতিবাচক ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে যারা প্রগতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি ও আলোচনা দেখতে চান, তাদের জন্য পরিস্থিতি বেশ নেতিবাচক সংকেত দিচ্ছে।”

যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা সম্পর্ক

গত ২৫ নভেম্বর ট্রুথ সোশালে পোস্ট করা এক বার্তায় ট্রাম্প ঘোষণা দেন, মাদক ও অভিবাসন প্রবাহ বন্ধ না করা পর্যন্ত তিনি কানাডা ও মেক্সিকোর উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন।

ট্রাম্পের এই হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে ট্রুডো কানাডাকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এবং অরাজনৈতিক “টিম কানাডা” নীতির ভিত্তিতে কাজ করার ডাক দেন। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা মজবুত সম্পর্কের গুরুত্বও তুলে ধরেন।

কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পৃথিবীর দীর্ঘতম আন্তর্জাতিক সীমান্ত রয়েছে। এর দৈর্ঘ্য ৮,৮৯১ কিলোমিটার (৫,৫২৫ মাইল)। ২০২৩ সালে দেশ দুটির মধ্যে দৈনিক প্রায় ২ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের (কানাডিয়ান ৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার) পণ্য ও সেবা বিনিময় হয়েছে বলে কানাডার সরকারি পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়েছে।

ট্রাম্পের হুমকির পর কানাডার সরকার কঠোর সীমান্ত ব্যবস্থার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এছাড়া ট্রুডো ট্রাম্পের ফ্লোরিডার মার-এ-লাগো এস্টেটে নভেম্বরের শেষদিকে আকস্মিক এক সফর করেন। সেখানে তাদের মধ্যে ভবিষ্যতের পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হয়।

ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ট্রুডো সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল, কানাডার স্বার্থ রক্ষায় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ভিত্তিতে আলোচনা করা উত্তম, শত্রুতার ভিত্তিতে নয়। দুই দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হলেও ট্রুডো এখনো সেই কৌশলেই এগোচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে।

তবে ২০২৫ সালের ট্রাম্প প্রশাসন তার প্রথম মেয়াদের তুলনায় ভিন্ন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ট্রাম্প এবার মূলধারার রিপাবলিকানদের এড়িয়ে গিয়ে কঠোর মনোভাবাপন্ন সমর্থকদের কাছে টেনেছেন। এবার তিনি অর্থনীতি, অভিবাসন ও পররাষ্ট্রনীতিতে সুস্পষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে হোয়াইট হাউসে ফিরেছেন।

একই সময়ে ট্রাম্প সমর্থক, যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী সংবাদমাধ্যম এবং নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের প্রশাসনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিও ট্রুডোর তীব্র সমালোচনা করছেন।

উদাহরণ হিসেবে, ১১ ডিসেম্বর ট্রাম্পের উপদেষ্টা এবং ধনকুবের ইলন মাস্ক তার সোশাল মিডিয়া এক্সে ট্রুডোকে ‘অসহনীয় হাতিয়ার’ বলে অভিহিত করেন। তিনি আরও বলেন, “লিবারেল পার্টির এই নেতা ‘আর বেশিদিন ক্ষমতায় থাকবেন না।”

সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার ইউনিভার্সিটির কানাডা-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক অধ্যাপক আসা ম্যাককারচার বলেন, “ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ লোকদের অনেকেই কানাডাকে ট্রুডোর অধীনে একটি ‘কমিউনিস্ট দেশ’ হিসাবে দেখেন।”

ডানপন্থীদের আক্রমণ

কানাডার ডানপন্থীরাও দেশটির অর্থেনৈতিক দুর্দশার জন্য ট্রুডোকে দোষারোপ করেন। ডানপন্থী নেতা পলিয়েভর নিজেকে ট্রাম্পকে মোকাবিলায় সবচেয়ে সক্ষম রাজনীতিবিদ হিসাবে উপস্থাপন করছেন। তার মতে, ট্রাম্পকে মোকাবেলা করতে হলে ট্রাম্পের মতোই আক্রমণাত্মক ডানপন্থী হতে হবে।

গত ১৫ নভেম্বর পলিয়েভরকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য শুল্কনীতি কীভাবে মোকাবেলা করবেন। উত্তরে তিনি বলেছিলেন, তিনি “আগুনের সঙ্গে আগুন দিয়েই লড়াই করবেন।”

এক রেডিও সাক্ষাৎকারে পলিয়েভর বলেন, “ট্রাম্প আমেরিকান শ্রমিকদের জন্য যা ভালো তা চান, আমিও কানাডার শ্রমিকদের জন্য তাই চাই। আমরা আর কোনোভাবে প্রতারণার শিকার হতে চাই না। ট্রাম্প ট্রুডোকে ক্ষমতায় রাখতে চান, কারণ তিনি তাকে সহজে ব্যবহার করতে পারবেন।”

কানাডার কনজারভেটিভ পার্টির নেতা পিয়েরে পলিয়েভর।

এই কথা চালাচালির মাঝেই সাম্প্রতিক জরিপগুলোতে দেখা গেছে, অনেক কানাডীয় মনে করেন পলিয়েভরই ট্রুডোর তুলনায় ট্রাম্পকে মোকাবেলা করতে বেশি সক্ষম।

গত মাসে অ্যাবাকাসের এক ডেটা জরিপে দেখা গেছে, ৪৫ শতাংশ কানাডীয় বলেছেন, পলিয়েভরই ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে কানাডার জন্য ভালো ফলাফল আনার বেশি সম্ভাবনা রাখেন। অন্যদিকে মাত্র ২০ শতাংশ বলেছেন, ট্রুডো ট্রাম্পকে ভালোভাবে মোকাবেলা করতে পারবেন।

আরেকটি জরিপেও (পিডিএফ) ট্রাম্পের সঙ্গে মোকাবেলার প্রশ্নে ট্রুডোকে পিছিয়ে থাকতে দেখা গেছে। এতে ৩৬ শতাংশ পলিয়েভরকে বেছে নিয়েছেন, আর ৩৪ শতাংশ ট্রুডোকে।

‘ট্রুডো যুগ’ কি শেষ হতে চলেছে

এখন পর্যন্ত ট্রুডো তার অর্থমন্ত্রী এবং উপ-প্রধানমন্ত্রী ফ্রিল্যান্ডের পদত্যাগ সম্পর্কে জনসমক্ষে কোনও মন্তব্য করেননি। এটি তার পরবর্তী নির্বাচনে লিবারেল পার্টির নেতৃত্ব দেওয়ার পরিকল্পনাকে প্রভাবিত করবে কিনা তা নিয়েও কিছু বলেননি।

সোমবার রাতে ট্রুডো তার মন্ত্রিসভার সঙ্গে একটি বৈঠক করেছিলেন, যেখানে বেশ কয়েকজন লিবারেল এমপি তাকে পদত্যাগ করতে অনুরোধ করেন। তবে এখনও পর্যন্ত ট্রুডো কোনও সিদ্ধান্ত নেননি।

এরপর কী ঘটবে তা অজানা হলেও এটা নিশ্চিত, ট্রুডো তার রাজনৈতিক জীবনে সবচেয়ে বিপজ্জনক সময়ের মুখোমুখি হয়েছেন। অনেক বিশেষজ্ঞ প্রশ্ন তুলছেন, ফ্রিল্যান্ডকে হারানোর পর আর কত দিন তিনি নেতৃত্বে থাকতে পারবেন।

ব্রিটিশ কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির রাজনৈতিক বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক স্টুয়ার্ট প্রেস সোশাল মিডিয়াতে সোমবার লিখেছেন, “এই ঘটনা ট্রুডোর সবচেয়ে বিশ্বস্ত সমর্থকদেরও ঝাঁকুনি দেবে। আমি নিশ্চিত নই, ২০২৪ সালের শেষ পর্যন্ত তিনি টিকে থাকতে পারবেন কিনা।

“২০২৫ সালের শেষদিকে গিয়ে আমরা হয়তো পেছন ফিরে দেখব যে, ট্রাম্পের একটি পোস্টই সেসব ঘটনার সূত্রপাত করেছে, যেসব অবশেষে ট্রুডো যুগের সমাপ্তি ঘটিয়েছে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত