সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ভোট গণনার সময় মারামারির মামলায় জামিন পেয়েছেন আইনজীবী নাহিদ সুলতানা যুথী; তবে আদালতের কাছে তাকে শুনতে হয়েছে ক্ষমতার বড়াই না দেখাতে।
বুধবার তাকে আগাম জামিন দেওয়ার সময় হাইকোর্ট বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, “আজকে আপনার ক্ষমতা আছে, কালকে নাও থাকতে পারে। তখন আপনাকে রক্ষা করবে কে? তখন আপনাকে কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের কাছেই আসতে হবে। এজন্য সুপ্রিম কোর্টের মর্যাদা ধরে রাখতে হবে।”
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুব সংগঠন যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের স্ত্রী যুথী এবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সম্পাদক পদে প্রার্থী ছিলেন।
নির্বাচনের ফল ঘোষণার সময় তার পক্ষে যুবলীগ প্রভাব খাটায় বলেও অভিযোগ উঠেছিল। ভোট গণনা শেষের আগে তাকে একবার সম্পাদক পদে বিজয়ীও ঘোষণা করা হয়েছিল।
তবে পরে ‘চাপের মধ্যে’ দেওয়া সেই ঘোষণা বাতিল করেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবুল খায়ের। শেষে ফল ঘোষণায় দেখা যায়, যুথী জয়ী হননি।
এদিকে গত ৭ মার্চ ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে মারামারি ঘটনায় সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সাইফুর রহমান সিদ্দিকী সাইফ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন।
হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে করা সেই মামলায় স্বতন্ত্র সম্পাদক প্রার্থী যুথী ছাড়াও এই নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ ১৯ জনকে আসামি করা হয়।
পুলিশ এরপর কাজলকে গ্রেপ্তার করে কারাগারেও পাঠায়। পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, তারা যুথীকেও খুঁজছেন।
এর মধ্যেই আগাম জামিনের আবেদন নিয়ে গত সোমবার বিচারপতি মোহাম্মদ সেলিম ও বিচারপতি শাহেদ নুরুদ্দিনের হাইকোর্ট বেঞ্চে গিয়েছিলেন যুথী।
কিন্তু সেই আদালত শুনানিতে বিব্রতবোধ করলে আবেদনটি প্রধান বিচারপতির দপ্তর হয়ে তৃতীয় বেঞ্চে যায়।
বুধবার বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি এসএম মাসুদ হোসেন দোলনের হাইকোর্ট বেঞ্চে সেই আবেদনের শুনানি হয়।
মামলার আসামি যুথীসহ মোট চার আইনজীবীর জামিন আবেদনের শুনানি নেয় এই আদালত। এরপর চারজনকেই আগাম জামিন দেওয়া হয়।
অন্য আইনজীবীরা হলেন মো. জাকির হোসেন ওরফে মাসুদ, শাকিলা রৌশন, ব্যারিস্টার চৌধুরী মৌসুমী ফাতেমা (কবিতা)।
তাদের জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শেখ আওসাফুর রহমান বুলু। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কে এম মাসুদ রুমি।
আওসাফুর রহমান সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, আদালত চারজনকে আট সপ্তাহের আগাম জামিন দিয়েছেন।
শুনানির সময় আদালত জামিন প্রার্থী আইনজীবীদের উদ্দেশ করে মন্তব্য করে।
জামিন শুনানির সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন যুথী। তবে জামিন নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের কোনও প্রশ্নের উত্তর দেননি তিনি।
যুথী আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদে সক্রিয় হলেও তিনি এবার নির্বাচনে পরিষদের নীল প্যানেলের বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন।
বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্য সচিব যুথীর দেবর শেখ ফজলে নূর তাপস, যিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের পদেও রয়েছেন।
গত ৬ ও ৭ মার্চ সমিতির নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হয়। এরপর ৭ মার্চ রাতে গণনা শুরু হলে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী শাহ মনজুরুল হক ‘পরিবেশ ভালো নেই’ বলে গণনা বন্ধ রাখতে বলেন।
তখন স্বতন্ত্র প্রার্থী যুথী ভোট গণনা চালিয়ে যাওয়ার দাবি তোলেন। তখন শুরু হয় হট্টগোল, মারামারি। উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ভোট গণনা না করে সম্পাদক প্রার্থী যুথীকে বিজয়ী ঘোষণা করেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবুল খায়ের।
অভিযোগ ওঠে, যুবলীগ চাপ দিয়ে এই ফল ঘোষণা করতে আবুল খায়েরকে বাধ্য করেছেন। এদিকে যুবলীগ চেয়ারম্যান পরশ ঘোষিত সম্পাদক ও তার স্ত্রী যুথীকে অভিননন্দন জানিয়ে ফেইসবুকে পোস্টও দেন।
তবে পরে ব্যালট বাক্স সিলগালা করে পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় ঘটনাস্থল ত্যাগ করে নির্বাচনের সাব কমিটিসহ প্রার্থীরা।
পরে আবুল খায়ের অভিযোগ করেন, গণনা শেষের আগেই চাপ দিয়ে যুথীকে বিজয়ী ঘোষণা করতে বাধ্য করা হয়েছিল। সেই ঘোষণা বাতিল করেন তিনি।
পরে ভোট গণনা শেষে ৯ মার্চ মধ্য রাতে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেন আবুল খায়ের। তাতে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেল সম্পাদকসহ ১০টি পদে এবং বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেল সভাপতিসহ চারটি পদে জয়ী হয়েছে।
ঘোষিত ফল অনুযায়ী, সম্পাদক পদে যুথী পান ২৬৯ ভোট। এই পদে বিজয়ী শাহ মনজুরুল হক পেয়েছেন ৩ হাজার ৩১৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নীল প্যানেলের রুহুল কুদ্দুস কাজল পান ১ হাজার ৭০২ ভোট।
সভাপতি পদে বিএনপির এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ২ হাজার ৬২২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের আবু সাঈদ সাগর পান ২ হাজার ৫৩৯ ভোট।