বিএনপির নিবন্ধন বাতিল ও দলটির রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে যুবলীগের দাবি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, যুবলীগের স্বতন্ত্র স্বত্তা আছে, এটা আওয়ামী লীগের চিন্তাভাবনা নয়।
যুবলীগ তাদের চিন্তা থেকে এটা বলেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “যুবলীগ চাইলেই তো একটা জাতীয় দল নিষিদ্ধ হয়ে যাবে না।”
রবিবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সংরক্ষিত নারী আসনে দলের পক্ষ থেকে ৪৮ জনের মনোনয়ন জমা দিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দিয়ে দলটির নিবন্ধন বাতিলের চেয়ে গত ১০ আগস্ট নির্বাচন কমিশনে স্মারকলিপি দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ। বিএনপির নিবন্ধন বাতিল ও দলটির রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবিতে স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়েও একই ধরনের স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে বলে, সে সময় সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়।
যুবলীগ আওয়ামী লীগের একটি সংগঠন উল্লেখ ওবায়দুল কাদের বলেন, “তারা তাদের স্বতন্ত্র স্বত্তা আছে; তারা করতে পারে। মূল দল হচ্ছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ এ ধরনের চিন্তাভাবনা করলে আমরা অবশ্যই বলতাম। আমাদের কোনও নেতা নিশ্চয় এ বিষয়টি অবতারণা করেনি।”
আওয়ামী লীগের কোনও নেতা এ দাবি তোলে না বলে কাদেরের পক্ষ থেকে জানানো হলেও গত ১২ ফেব্রুয়ারি সংসদে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি জানান সরকারি দলের জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম।
তবে কাদেরের দাবি এ বিষয় নিয়ে আওয়ামী লীগের কোনও উদ্বেগ নেই এবং এটা নিয়ে কোনও চিন্তাও নেই। তিনি বলেন, “ছাত্রলীগের এক নেতা দাঁড়িয়ে বলে দিল বিএনপিকে নিষিদ্ধ কর, আমরা ওর সঙ্গে লাফাবো?”
বিএনপির নিবন্ধন বাতিলের কোনও চিন্তা আওয়ামী লীগ করে নাই বলে জানান ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, “ওনারা নিজেরা নিজেরাই বলছে। বিএনপিকে নিয়ে ওত মাথাব্যাথা আমাদের নেই। কারণ তারা মুখে যে গর্জন, বাস্তবে আষাড়ে তর্জন।”
ওবায়দুল কাদের বলেন, সংরক্ষিত মহিলা আসনে ৪৮ জনের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি। এই ৪৮ জনের প্রস্তাবক সমর্থক আছেন, যারা জাতীয় সংসদ সদস্য। স্বতন্ত্র, ১৪ দল এবং আওয়ামী লীগ সব মিলিয়ে ৪৮ জন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলের ভিত্তিতে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নারী আসনের ৫০টির মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৮টি, জাতীয় পার্টি ২টি ও স্বতন্ত্ররা ১০টি আসন পায়। তবে স্বতন্ত্ররা তাদের ১০ আসন দিয়ে দেওয়ায় আওয়ামী লীগের ভাগে পড়েছে ৪৮টি।
রাজনৈতিক ও সাংগঠিক প্রয়োজনে সংসদ নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থীদের সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে প্রার্থী করা হয় বলে জানান কাদের।
দ্বাদশ সংসদ কতটা কার্যকরী হবে— এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের উলটো প্রশ্ন তুলে বলেন, “সংসদ কেন কার্যকর হবে না? বাধাটা কোথায়? ফ্রি ফেয়ার ইলেকশন হয়েছে। ভোট পড়েছে ৪১ শতাংশের বেশি। ২৮টি দল অংশ নিয়েছে। এখানে একটা অপজিশন আছে। বিরোধী দলের ভূমিকায় জাতীয় পার্টি কার্যক্রম শুরু করেছে। স্বতন্ত্রদের বলা হয়েছে, তারা তার প্রয়োজনে চাইলে সরকারের সমালোচনা করতে পারবে। সংসদ কার্যকর হওয়ার পথে কোনও বাধা বা অন্তরায় আছে বলে মনে করি না।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী দল বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, “তাদের আওয়াজ কোথায় থেমে গেল, আওয়াজ তো তাদেরই ছিল। সেই আওয়াজ এখন কোথায়, সেই আওয়াজ পালিয়ে গেছে। সরকারকে পালাতে বলেছে, এখন নিজেরাই পালিয়ে গেছে।”
ভোটের পর এখনও আওয়ামী লীগ সতর্ক পাহাড়ায় আছে জানিয়ে তিনি বলেন, “যদি কেউ এই নির্বাচন নিয়ে কোনও প্রকার ষড়যন্ত্রমূলক, সন্ত্রাসমূলক তৎপরতায় আসে, সেটা আমরা প্রতিরোধ করব।”
বিএনপির আন্দোলনেকে আষাড়ের তর্জন-গর্জন বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, “বিএনপি ভুলের চোরাবালিতে আটকে গেছে।”
রাজনৈতিক ও সাংগঠিক প্রয়োজনে সংসদ নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থীদের সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে প্রার্থী করা হয় বলে জানান কাদের।