হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলা খারিজের প্রতিবাদে খাগড়াছড়িতে গণবিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে ইউপিডিএফের দুই সহযোগী সংগঠন হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ। এ মামলায় বিচারের নামে প্রহসন হয়েছে এমন অভিযোগ এনে ঘটনায় জড়িতদের কুশপুতুল পোড়ান বিক্ষোভকারীরা।
শনিবার সকালে খাগড়াছড়িতে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়। শুরুতে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে স্বনির্ভর বাজার থেকে শহরের চেঙ্গী স্কয়ারে যান সংগঠনদুটির নেতাকর্মীরা। পরে সেখানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা।
বিক্ষোভ সমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সভাপতি কণিকা দেওয়ানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নীতি চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক রিতা চাকমা।
এসময় রাঙ্গামাটি-মহালছড়ি সড়ক ও দীঘিনালা-সাজেক সড়ক থেকেও নারীরা মিছিল নিয়ে এসে চেঙ্গী স্কয়ারে জড়ো হন। বিক্ষোভ কয়েক শ’ ছাত্রী ও নারী অংশ নেয়। সমাবেশের এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা ‘বিচারের নামে প্রহসনে লিপ্ত কুচক্রীদের’ প্রতিকৃতিতে আগুন ধরিয়ে দেন।
সমাবেশে কণিকা দেওয়ান বলেন, “দেশে বিচারের নামে প্রহসন চলছে। সরকার কথায় কথায় নারীর অধিকার-ক্ষমতায়ন, উন্নয়নের কিচ্ছা শোনানো হচ্ছে অথচ অপহরণের মতো ঘটনার সুষ্ঠু বিচার করতে পারছে না। দেশ-বিদেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী কল্পনা অপহরণ মামলা খারিজ করে সরকার চিহ্নিত অপহরণকারীদের রক্ষার চেষ্টা করছে। এ রায়ের মাধ্যমে সরকারের লক্ষ্য পার্বত্য চট্টগ্রামে অন্যায়কে উসকে দেওয়া, অপরাধকে প্রশ্রয় দেওয়া, তা স্পষ্ট হয়েছে।”
কণিকা দেওয়ান বলেন, “বিচারের নামে প্রহসনের রায় পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ তথা নারী সমাজ মনে নেবে না। কল্পনা চাকমার অপহরণ মামলার চিহ্নিত অপহরণকারীদের বিচার নিশ্চত না হওয়া পর্যন্ত লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন।”
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নীতি চাকমা বলেন, “কল্পনা চাকমাকে নিয়ে দুর্বৃত্তরা অনেকভাবে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। বাঙালিদের মতো আমাদের পাহাড়িরাও অনেকে গুজবখেকো, বিভ্রান্ত হয়। কল্পনাকে অপহরণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে শাসকগোষ্ঠী নানা ষড়যন্ত্র করে। যারা চক্রান্তকারী এবং জনগণের দুশমন-শত্রু তারা তাদের অপরাধ ঢাকতে নানাভাবে কাল্পনিক কাহিনী বানিয়ে মিথ্যাচার করে।”
নীতি চাকমা বলেন, “কল্পনা অপহরণ মামলার খারিজের রায় মানি না। এটা সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত কঠোর কর্মসূচি জারি থাকবে।”
জনগণের আদালতে হবে একদিন এর বিচার হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি। বলেন, “দুনিয়ার কোনও দুষ্কৃতকারী ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েও পার পায়নি। দুষ্কৃতকারীদের শাস্তি অনিবার্য।”
১৯৯৬ সালের ১১ জুন মধ্যরাতে রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার লাইল্যাঘোনা এলাকার বাড়ি থেকে কল্পনা চাকমা অপহৃত হন। পাহাড়ি নেত্রী অপহরণের ঘটনাটি দেশজুড়ে ছিল আলোচিত। বিশ্বের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনও এনিয়ে সরব হয়েছিল।
পরদিন বাঘাইছড়ি থানায় কল্পনার ভাই কালিন্দী চাকমা বাদী হয়ে অপহরণের মামলা করেন। মামলাটি রাঙ্গামাটির আদালতে তোলা হয়। সিআইডিকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে আদালত মামলার অধিকতর তদন্তের জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে রাঙ্গামাটির পুলিশ সুপারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এ মামলার ৩৯তম তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে ২০১৬ সালে রাঙ্গামাটির পুলিশ সুপার তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন। তবে এতে নারাজি দেন কল্পনার ভাই কালিন্দী চাকমা। তিনি অধিকতর তদন্তের দাবি জানান।
আদালতে এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন বহুবার শুনানি শেষ হয়েছে। সবশেষ ২৩ এপ্রিল শুনানির নির্ধারিত দিনে নারাজি আবেদন নাকচ করে পুলিশের দেওয়া প্রতিবেদন গ্রহণ করেন রাঙ্গামাটির জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম ফাতেমা বেগম মুক্তা।
আট বছর আগে জেলা পুলিশ সুপার মামলাটিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে বলেছিলেন, কল্পনা চাকমা অপহৃত হলেও কে বা কারা করেছে, তার কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
আদালত শুনানির পর বাদীর আবেদন নাকচ করে পুলিশের সেই প্রতিবেদনটিই গ্রহণ করেছে বলে বলে বাদীপক্ষের আইনজীবী জুয়েল দেওয়ান জানান।
ফলে কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলাটি ২৮ বছরে তার কোনও হদিস না মেলার মধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়ে গেল।