Beta
বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫

পরাজয় মেনে নিয়ে যা বললেন কমলা হ্যারিস

Kamala_Speech
[publishpress_authors_box]

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে পরাজয় স্বীকার নিয়েছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস। তবে পরাজয় মেনে নিলেও তার রাজনৈতিক লড়াইয়ের থামছে না বলেও জানান কমলা।

নির্বাচনের পরদিন বুধবার ওয়াশিংটনের হাওয়ার্ড ইউনিভার্সিটির এক আবেগপূর্ণ বক্তৃতায় কমলা তার পরাজয় স্বীকার করে নেন। পাশাপাশি তার সমর্থকদের সেই মূল্যবোধগুলো ধরে রাখার আহ্বান জানান, যেগুলো তার নির্বাচনী প্রচারণার চালিকা শক্তি ছিল।

যে আদর্শ নিয়ে তিনি নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছেন, সে আদর্শের জন্য লড়ে যাওয়ার অঙ্গীকারও করেছেন কমলা।

তিনি বলেন, “নির্বাচনে পরাজয় মেনে নিলেও আমি সেই লড়াই ছাড়ব না, যা এই প্রচারণাকে উৎসাহিত করেছিল। লড়াই, স্বাধীনতার জন্য, সুযোগের জন্য, ন্যায্যতা এবং সমস্ত মানুষের মর্যাদার জন্য লড়াই। আমাদের জাতির হৃদয়ে থাকা আদর্শের জন্য লড়াই, যে আদর্শগুলো আমেরিকাকে সর্বোত্তমভাবে প্রতিফলিত করে; সেই লড়াইয়ে আমি কখনোই হাল ছাড়ব না।”

কমলা জানান, নির্বাচনে পরাজয় মেনে নিয়ে ট্রাম্পকে ফোন করে অভিনন্দনও জানিয়েছেন তিনি। শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের পাশাপাশি তিনি ট্রাম্পকে বিভাজন না করে যুক্তরাষ্ট্রের সব নাগরিকের প্রেসিডেন্ট হওয়ার আহ্বানও জানান।

যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস বলেন, “আজ আমি নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ফোনে তার বিজয়ের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছি। তাকে বলেছি, আমরা তার দলকে ক্ষমতা হস্তান্তরে সহায়তা করব। আমাদের দেশে নির্বাচনে পরাজিত হলে তা মেনে নেওয়া আমাদের গণতন্ত্রের মূল নীতি।”

২০২০ সালের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে পরাজিত হন ট্রাম্প। সেবার তিনি ফল মেনে নেননি। ট্রাম্পের নাম উল্লেখ না করে কমলা বলেন, “নির্বাচনের ফলের প্রতি সম্মান জানানোটা এমন একটা জিনিস, যা গণতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য গড়ে দেয়। জনগণের সমর্থন পেতে চাইলে সবার এর প্রতি সম্মান জানানো উচিৎ।”

নির্বাচনী প্রচারের সময় ট্রাম্পকে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন কমলা। তবে বুধবারের ভাষণে তিনি বলেন, “আমি জানি অনেকেই মনে করছেন, আমরা একটি অন্ধকার সময়ে প্রবেশ করতে যাচ্ছি। তবে আমাদের সবার ভালোর জন্যই আশা করছি তেমন কিছু হবে না।”

কমলা হ্যারিস তার সমর্থকদের হতাশ না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “এখন হতাশার নয়, একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করে যাওয়ার সময়। স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচার এবং ভবিষ্যতের স্বার্থে সংগঠিত হওয়া এবং পরস্পর সযুক্ত থাকার সময়।”

তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “যে তরুণরা এই পরাজয় দেখছে তাদের দুঃখিত এবং হতাশ হওয়াটা স্বাভাবিক। তবে দয়া করে জেনে রাখুন- সামনে আমরা জিতব। কখনও কখনও লড়াইয়ে জিততে একটু সময় লাগে। তার মানে এই নয় যে আমরা জিতব না।”

কমলা বলেন, “গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল কখনও হাল ছাড়বেন না। পৃথিবীকে একটি ভালো জায়গা করে তোলার চেষ্টা করা বন্ধ করবেন না। পৃথিবীতে অসাধারণ ভালো কিছু করার ক্ষমতা আপনাদেরই আছে।”

শান্তিপূর্ণভাবে রাজনৈতিক সংগ্রাম অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করে তিনি বলেন, “আমরা ভোটকেন্দ্রে, আদালতে এবং জন পরিসরে এই লড়াই চালিয়ে যাব। আমরা এই লড়াইকে আরও শান্ত উপায়ে পরিচালনা করব— যেভাবে আমরা আমাদের জীবনযাপন করি, একে অপরের সঙ্গে সহমর্মিতা ও সম্মানের সঙ্গে আচরণ করে।

“অপরিচিত ব্যক্তির মুখের দিকে তাকিয়ে এবং প্রতিবেশীকে দেখে; সর্বদা আমাদের শক্তি ব্যবহার করে মানুষকে উপরে তোলার জন্য, সমস্ত মানুষের প্রাপ্য মর্যাদার জন্য লড়াই করে যাব।”

দ্বিতীয়বারের প্রচেষ্টায়ও একজন নারী প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে জয়ী করতে আমেরিকানদের জাতিগত ব্যর্থতা নিয়ে কমলা সরাসরি কিছু বলেননি। নির্বাচনী প্রচারণার সময়ও তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছিলেন।

তবে তিনি পরোক্ষে বলেন, “যখন কেউ আপনাকে বলে যে, কোনও কিছু অসম্ভব কারণ এটি আগে কখনও করা হয়নি, তাদের কথায় কখনও কান দেবেন না।”

কমলা হ্যারিস এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হলে তিনি হতেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। কিন্তু ট্রাম্প অর্থনীতি এবং অন্যান্য ইস্যু নিয়ে ডেমোক্র্যাটদের প্রতি হতাশ পুরুষদের আবেগ উস্কে দেওয়ার জন্য নির্বাচনী প্রচারণায় বারবার বলেছিলেন, “পুরুষত্ব হুমকির মুখে”।

নির্বাচনের আগে নিউ ইয়র্ক টাইমসসহ বেশ কয়েকটি জরিপে দেখা গেছে, কমলা হ্যারিস নারী ভোটারদের মাঝে সমর্থনে এগিয়ে থাকলেও পুরুষদের মাঝে অনেক পিছিয়ে ছিলেন। ফলে অর্থনীতি ও অভিবাসনসহ বিভিন্ন ইস্যুর পাশাপাশি এবারের নির্বাচন অনেকটা নারী বনাম পুরুষের ভোটও হয়ে উঠেছিল।

জীবন-জীবিকা নিয়ে অসন্তুষ্ট তরুণ পুরুষরা তাদের কেউ বোঝার চেষ্টা করছে না- এমন অনুভূতি থেকে হতাশ হয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প বা ইলন মাস্কের ব্রো-কালচারে আকৃষ্ট হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নির্বাচনের আগে নিউ ইয়র্ক টাইমসের জরিপে দেখা গিয়েছিল, পুরুষ ভোটারদের মধ্যে সমর্থনে ট্রাম্প কমলার চেয়ে ১৪ শতাংশ এগিয়ে রয়েছেন। অন্যদিকে, কমলা হ্যারিস নারীদের মধ্যে সমর্থনে ট্রাম্পের চেয়ে ১২ শতাংশ এগিয়ে ছিলেন।

আট বছর আগে হিলারি ক্লিনটন প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসাবে লড়াই করার সময়ও নারীর প্রতি নেতিবাচক মনোভাব তার পরাজয়েরও একটি বড় কারণ ছিল।

তথ্যসূত্র: সিএনএন, বিবিসি

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত