যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়ন পেয়েছেন কমলা হ্যারিস। পার্টির দুই হাজার ৩৫০ জন প্রতিনিধির সমর্থন পাওয়ায় তার মনোনয়ন নিশ্চিত হয়েছে।
শুক্রবার দলটির ‘ন্যাশনাল কমিটি চেয়ার’ জেইম হ্যারিসন ভার্চ্যুয়ালি এক অনুষ্ঠানে ঘোষণা দেন, প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে প্রয়োজনীয় ভোট পেয়েছেন কমলা হ্যারিস।
ডেমোক্র্যাটিক পার্টি বলেছে, ৩ হাজার ৯২৩ জন প্রতিনিধি বা অংশগ্রহণকারীদের ৯৯ শতাংশ তাকে ভোট দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে দলটির মোট প্রতিনিধির সংখ্যা ৪ হাজার ৭০০ জন।
কোনও অঘটন না ঘটলে আগামী ২২ আগস্ট দলের জাতীয় কনভেনশনের শেষদিন তাকে চূড়ান্তভাবে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হবে। ১৯ থেকে ২২ আগস্ট হবে ওই কনভেনশন।
তার আগে ৭ আগস্টের মধ্যে কমলাকে তার ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বাছাই করতে হবে। ভাইস প্রেসিডেন্টকে চুড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হবে ২১ আগস্ট।
প্রেসিডেন্ট প্রার্থী নির্বাচনের জন্য গত বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) থেকে ই-মেইলে দলীয় প্রতিনিধিদের ভোট গ্রহণ শুরু করে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি। আগামী সোমবার (৫ আগস্ট) সন্ধ্যা পর্যন্ত চলবে এই ভোটগ্রহণ।
অবশ্য তার আগেই কমলার মনোনয়ন নিশ্চিত হয়ে গেছে। ভোটগ্রহণ শুরুর মাত্র ৩৬ ঘণ্টা তথা শুক্রবার দুপুরের মধ্যেই কমলা মনোনয়ন পাওয়ার জন্য প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন।
এর মধ্য দিয়ে কমলা হ্যারিস জাতীয় পর্যায়ে আরো দুটি ইতিহাস গড়তে চলেছেন। তিনি হবেন যুক্তরাষ্ট্রের বড় কোনও রাজনৈতিক দলের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী এবং দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভুত প্রেসিডেন্ট প্রার্থী।
আর নভেম্বরে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করতে পারলে আমেরিকার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হয়ে তিনি তৃতীয় ইতিহাসটি গড়বেন।
কমলা প্রথম ইতিহাসটি গড়েন ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়ে, যে পদে তিনি এখনও দায়িত্ব পালন করছেন।
৫৯ বছর বয়সী কমলা হ্যারিস ক্যালিফোর্নিয়ার অকল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন। ফলে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রায় ২০০ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো পশ্চিমের কোনও অঙ্গরাজ্য থেকে কেউ প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হলেন।
এছাড়াও কমলা ছিলেন ক্যালিফোর্নিয়ার প্রথম অ-শ্বেতাঙ্গ ও প্রথম নারী অ্যাটর্নি জেনারেল।
যুক্তরাষ্ট্রের এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ক্ষমতাসীন ডোমোক্র্যাটিক দলের প্রার্থীতা নিয়ে অনেক নাটকীয়তা হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলটি থেকে প্রথমে প্রার্থী করা হয়েছিল প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে।
কিন্তু গত ২৭ জুন বিরোধী দল রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীতার বিতর্কে ধরাশায়ী হওয়ায় চাপের মুখে সরে দাঁড়ান বাইডেন। গত ২২ জুলাই বাইডেন নিজের প্রার্থীতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।
জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বেশি বয়সী প্রেসিডেন্ট। তার বয়স এখন ৮১ বছর। এই বয়স নিয়ে তিনি ফের প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কতটা ভালো করতে পারবেন তা নিয়ে প্রথম থেকেই সংশয় ছিল।
জনমত জরিপগুলোতেও দেখা যায় বাইডেন প্রার্থী থাকলে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ক্ষমতা হারাবে। তাই দলটির নেতা, সমর্থক, অর্থদাতা ও শুভানুধ্যায়ীরা বাইডেনকে সরে দাঁড়ানোর জন্য চাপ দিতে থাকেন।
বাইডেন সরে যাওয়ার পর কমলা হ্যারিস প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা শুরু করার পরপরই ভোটারদের মধ্যে ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থীর সমর্থন বাড়তে থাকে। এমনকি দুদিনেই তিনি ট্রাম্পকে ছাড়িয়ে যান।
গত ২২ ও ২৩ জুলাই রয়টার্স-ইপসোস পরিচালিত এক জনমত জরিপে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪ শতাংশ ভোটারের প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রথম পছন্দ কমলা হ্যারিস। অন্যদিকে, ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন ৪২ শতাংশ ভোটার।
এরপর ২৬ থেকে ২৮ জুলাই পরিচালিত আরেক জরিপে, কমলার প্রতি সমর্থন জানান ৪৩ শতাংশ ভোটার। আর ট্রাম্পের ঝুলিতে ৪২ শতাংশ সমর্থনই রয়েছে। জরিপটি ৮৭৬ জন ভোটারসহ ১০২৫ জন প্রাপ্তবয়স্কের মতামত নিয়ে অনলাইনে করা হয়েছিল।
তবে গত ২৪ জুলাই প্রকাশিত সিএনএন/এসএসআরএস জরিপে ট্রাম্পকে এগিয়ে থাকতে দেখা যায়। সেই জরিপে ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন ছিল ৪৯ শতাংশ। আর কমলার সমর্থন ছিল ৪৬ শতাংশ।
জনমত জরিপগুলো থেকে ইঙ্গিত মিলছে, যুক্তরাষ্ট্রের এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।
ফলে অশীতিপর বাইডেনকে নিয়ে হতাশ হয়ে পড়া ডেমোক্র্যাটরা ফের চাঙা হয়ে উঠেছে। রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফের প্রেসিডেন্ট হওয়া ঠেকাতেও আশাবাদী হয়ে উঠেছেন তারা।
ইতিমধ্যে সাবেক ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রচারশিবিরের শীর্ষ ব্যবস্থাপকরাও কমলার নির্বাচনী প্রচারে যুক্ত হয়েছেন। ওবামা ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট।
তথ্যসূত্র: বিবিসি, আল জাজিরা, সিএনএন, রয়টার্স