ক’দিন আগেও কি কেউ ভেবেছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী বদলে যাবে? এমনকি কমলা হ্যারিসও কি ভেবেছিলেন?
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কয়েক মাস আগে ডেমোক্রেট শিবিরে নাটকীয়তায় প্রার্থী বদলে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পরিবর্তে ট্রাম্পের মুখোমুখি ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস।
আর তাতে আসন্ন নির্বাচনের চালচিত্রও গেছে বদলে। অশীতিপর বাইডেনকে নিয়ে হতাশ হয়ে পড়া ডেমোক্রেটরা চাঙা হয়ে উঠেছে; রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পের ফের প্রেসিডেন্ট হওয়া ঠেকাতে আশাবাদী হয়ে উঠেছে।
অথচ এক সপ্তাহ আগেও ডেমোক্রেটরাসহ যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ নাগরিক মনে করত, নভেম্বরের নির্বাচনে ট্রাম্পকে আর ঠেকানো যাবে না। বয়সের ভারে ন্যুব্জ বাইডেনের পক্ষে ট্রাম্পের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া সম্ভবপর হবে না।
তবে দলে এবং দলের বাইরে চাপের মুখে গত রবিবার বাইডেন সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার পর সেই চিত্র বদলে যাচ্ছে।
সোশাল মিডিয়াজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে উজ্জ্বল সবুজ রঙের হ্যারিস সমর্থকদের অসংখ্য মিম। ডেমোক্রেটদের নির্বাচনী তহবিলে বানের জলের মতো অর্থ আসছে। হ্যারিসের প্রচার শিবির জানায়, রবিবার বিকাল থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যার মধ্যে তার তহবিলে ১২৬ মিলিয়ন ডলার জমা হয়েছে। এত কম সময়ের মধ্যে এত বেশি অর্থ আর কখনও পায়নি দলটি।
ডেমোক্রেটিক পার্টির আরও হাজার হাজার সদস্য এবং সমর্থকরাও হ্যারিসের নির্বাচনী প্রচারের জন্য তাদের নিজস্ব সময় উৎসর্গ করার আগ্রহ প্রকাশ করছেন।
হ্যারিসের প্রচারাভিযানের চেয়ারম্যান জেন ও’ম্যালি ডিলন বুধবার জানান, ১ লাখেরও বেশি মানুষ হ্যারিসের নির্বাচনী প্রচারে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করার জন্য সাইন আপ করেছেন। এ ছাড়া আরও ২ হাজারেরও বেশি মানুষ তার প্রচারাভিযানে চাকরির জন্য আবেদন করেছেন।
এসবের মধ্য দিয়ে বাইডেনকে প্রার্থিতা থেকে সরানোর জন্য ডেমোক্রেটিক পার্টি কতটা মরিয়া ছিল, তা বোঝা যায়। এছাড়া দলটির অর্থদাতা ও সমর্থকরাও ট্রাম্পকে আরও ধারাবাহিক এবং আক্রমণাত্মক উপায়ে মোকাবেলা করতে পারেন, এমন একজন প্রার্থীকে সমর্থন করতে কতটা আগ্রহী সেটাও স্পষ্ট হলো।
নতুন জনমত জরিপগুলোতেও ভোটারদের সমর্থনের দিক দিয়ে ট্রাম্পকে পিছিয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে। যেখানে আগে ট্রাম্প স্পষ্টভাবেই এগিয়ে ছিলেন, সেখানে এখন দুজনের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হচ্ছে।
নভেম্বরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধক্ষেত্র মিশিগান এএফএল-সিআইও প্রেসিডেন্ট রন বিবার তার রাজ্যের শক্তিকে ‘বৈদ্যুতিক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “এবার নির্বাচনী চক্রের মতো এমন শক্তি আমি আগে আর কখনও দেখিনি।”
নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলো অনেকাংশে একই থাকলেও হ্যারিস তাতে তার নিজস্ব ছাপ রেখেছেন। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে তার প্রচারে প্রধানত নারীর প্রজনন স্বাধীনতা রক্ষা করা, ‘চুঁইয়ে পড়া অর্থনৈতিক নীতি’ প্রত্যাখ্যান এবং গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ও মূল্যবোধ রক্ষার মতো প্রতিশ্রুতিগুলো প্রাধান্য পেয়েছে।
তবে প্রতিশ্রুতিগুলো একজন নতুন বার্তাবাহক হ্যারিসের মাধ্যমে আরও স্পষ্টভাবে আসছে। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে প্রচারাভিযানে হ্যারিসের উদ্যমী পারফরম্যান্সও বাইডেনের সীমাবদ্ধতা কী ছিল, তা দেখিয়ে দিয়েছে।
হ্যারিসের প্রাণশক্তি এমনকি বাইডেনের প্রচার শিবিরের সাবেক কর্মীদেরও অবাক করেছে, যারা রবিবার হঠাৎ করেই নিজেদেরকে হ্যারিসের প্রচারে কাজ করতে দেখতে পান।
তবে হ্যারিসকে এখনও অনেক লম্বা পথ পাড়ি দিতে হবে। হ্যারিস এখনও তার রানিংমেট তথা ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বাছাই করেননি বা তার প্রচারের প্রথম টেলিভিশন বিজ্ঞাপনও চালু করেননি। ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কনভেনশনের আর মাত্র কয়েক সপ্তাহ বাকি।
এখনও ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্কও বাকি আছে, যা কোটি কোটি দর্শক দেখবে। ওই বিতর্কের পরও নির্বাচনের গতিপথ বদলে যেতে পারে।
ট্রাম্প এই সপ্তাহের শুরুতে বলেছিলেন, তিনি হ্যারিসের সঙ্গে বিতর্ক করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নন। তবে হ্যারিস বলেছেন, তিনি আগামী ১০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় এবিসির বিতর্কে অংশ নেবেন। বিতর্কটি ট্রাম্প এবং বাইডেনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
বুধবার প্রকাশিত সিএনএন/এসএসআরএস জরিপে দেখা গেছে, দেশব্যাপী নিবন্ধিত ভোটারদের মধ্যে ৪৯ শতাংশ সমর্থন নিয়ে ট্রাম্প কমলার চেয়ে মাত্র ৩ পয়েন্ট এগিয়ে আছেন। কমলার সমর্থন ৪৬ শতাংশ।
রয়টার্স/ইপসোসের জরিপে ট্রাম্পের চেয়েও এগিয়ে আছেন কমলা। গত সোম ও মঙ্গলবার চালানো রয়টার্সের জরিপে, কমলার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪ শতাংশ ভোটার এবং ট্রাম্পের প্রতি ৪২ শতাংশ ভোটার সমর্থন জানিয়েছেন।
নতুন জরিপে যারা কমলাকে সমর্থন করেছে, তাদের অর্ধেক (৫০ শতাংশ) বলেছেন, তারা শুধু ট্রাম্প বিরোধিতার জন্য নয় বরং কমলাকে সমর্থনের জন্যই ডেমোক্রেটদের ভোট দেবে। যা বাইডেনের চেয়ে বেশি।
বাইডেনের সমর্থকদের মধ্যে মাত্র ৩৭ শতাংশ বলেছিলেন, তারা শুধু বাইডেনকে পছন্দ করেন বলেই ডেমোক্রেটদের ভোট দেবে। অন্যদিকে, ট্রাম্প সমর্থকদের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ (৭৪ শতাংশ) সর্বশেষ জরিপে বলেছে, তারা শুধু ট্রাম্পকে পছন্দ করেন বলেই রিপাবলিকানদের ভোট দেবে।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত নিউইয়র্ক টাইমস/সিয়েনা কলেজের জরিপেও প্রায় একই ফলাফল এসেছে। এতে দেখা গেছে, দেশব্যাপী নিবন্ধিত ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্পের সমর্থন ৪৮ শতাংশ আর কমলার সমর্থন ৪৬ শতাংশ। তরুণ এবং অ-শ্বেতাঙ্গ ভোটারদের মধ্যে বাইডেনের তুলনায় হ্যারিসের সমর্থন বেশি।
তবে কমলা হ্যারিস কেবল তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং অভিযান শুরু করেছন। এই অভিযানের আরও প্রায় ১০০ দিন বাকি। এই সময়ের মধ্যে তিনি আরও ভালো বা খারাপও করতে পারেন। এ ছাড়া গাজার যুদ্ধ নিয়ে বিভক্ত দলের গ্রুপগুলোকে একত্রিত করার ক্ষেত্রে বাইডেনের মতো একই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবেন কমলা।
গত রবিবার জো বাইডেন তার প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার মাত্র ৩৬ ঘণ্টার মধ্যেই কমলা হ্যারিসের মনোনয়ন নিশ্চিত হয়ে যায়। এখন শুধু আনুষ্ঠানিকতা বাকি, যা আগামী ২২ আগস্ট দলের জাতীয় সম্মেলনে দেওয়া হবে।
সোমবারের মধ্যেই তিনি দলের প্রায় ৪ হাজার ডেলিগেটের মধ্যে প্রায় ২ হাজার জনের সমর্থন পেয়ে যান। দলের জাতীয় সম্মেলনে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হতে এই সমর্থনই যথেষ্ট। দলের ডেলিগেটদের সমর্থন নিশ্চিত হওয়ার পরই জোরালোভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন কমলা। এর মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হ্যারিসের সমর্থনে মিমের বন্যা বয়ে যায়।
ভবিষ্যত যার উপর
কমলা হ্যারিস মঙ্গলবার মিলওয়াকিতে গিয়ে ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে তার প্রথম সমাবেশ করেন। সেদিন বক্তৃতায় হ্যারিস বাইডেনের চেয়ে আরও স্পষ্ট এবং বেশি দূরদর্শী একটি অর্থনৈতিক প্রতিশ্রুতি দেন।
হ্যারিস বলেন, “মধ্যবিত্ত শ্রেণী গড়ে তোলা হবে আমার একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য।” রিপাবলিকান পার্টির সমর্থক হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের প্রকল্প-২০২৫কে হ্যারিস একটি চরমপন্থী এজেন্ডা বলেও অভিহিত করেন।
‘প্রজেক্ট-২০২৫’ বা প্রকল্প-২০২৫ হল ডানপন্থী শাসন মডেলের একটি পরিকল্পনা। এটি তৈরিতে বা এর পরিকল্পনার নেতৃত্বে রয়েছে ওয়াশিংটন ডিসির নামকরা রক্ষণশীল থিংক ট্যাংক হেরিটেজ ফাউন্ডেশন। ৫১ বছরের পুরোনো প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ট্রাম্পের মিত্র কেভিন রবার্টস।
ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচার দলের অনেক কর্মীও এর সঙ্গে জড়িত; যদিও ট্রাম্প এর সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক থাকার কথা অস্বীকার করেছেন।
এদিন সমাবেশে আসা অনেকেই বলেন, হ্যারিস ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হওয়ায় তারা অনেক আশাবাদী।
মিলওয়াকির একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রশাসক ফেলিটা ড্যানিয়েলস অ্যাশলে বলেন, ২০২০ সালে তিনি হ্যারিসকে বাইডেনের রানিংমেট হিসেবে সমর্থন করেন। তাই এবার তিনি তাকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে দেখে ‘খুবই উত্তেজিত’।
তিনি বলেন, “ভবিষ্যৎ এটার উপরই নির্ভর করছে।”
জেসাপ-অ্যাংগার নামের এক সমর্থক বলেন, তিনি গত কয়েকদিন ধরে টিকটকে প্রচুর কনটেন্ট দেখেছেন। সেগুলোতে হ্যারিসকে জনপ্রিয় গায়িকা টেইলর সুইফট এবং কেশার মতো জনপ্রিয় শিল্পীদের সঙ্গীতের সঙ্গে উপস্থাপন করা হয়েছে।
জেসাপ-অ্যাঙ্গার বলেন, “আমি মনে করি হ্যারিসও তাদের মতোই আইকনিক।”
গর্ভপাতের অধিকার এবং শিক্ষার মতো নীতিগত বিষয়ে হ্যারিসের সঙ্গে তিনিও একমত বলে জানান জেসাপ।
তিনি বলেন, “সামগ্রিকভাবে এই নভেম্বরে ব্যালটে একজন শক্তিশালী স্বাধীন নারীকে দেখা সত্যিই আশাব্যঞ্জক।”
কৃষ্ণাঙ্গ নারী ও শিক্ষকদের প্রতি হ্যারিসের আবেদন
কমলা হ্যারিস প্রতিটি দিন পদ্ধতিগতভাবে ডেমোক্রেট পার্টির সমর্থকদের মূল অংশগুলোকে লক্ষ্য করে প্রচারণা চালাচ্ছেন। মঙ্গলবার তিনি একটি দোদুল্যমান রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশের সমর্থক, বুধবার কৃষ্ণাঙ্গ নারী এবং বৃহস্পতিবার শিক্ষকদের মধ্যে প্রচার চালান।
ইন্ডিয়ানাপোলিসে জেটা ফি বেটা সরোরিটির বক্তৃতায় তিনি কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের উদ্দীপিত করার চেষ্টা করেন। ওই কৃষ্ণাঙ্গ নারীরা ২০২০ সালে বাইডেনকেও ডেমোক্রেট প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন নিশ্চিত করতে সাহায্য করেছিল।
হ্যারিস ব্ল্যাক সোরোরিটির গ্র্যান্ড বোলে সমাবেশে বলেছিলেন, “আবারও সময় এসেছে। ফের আমাদের জাতি আপনাদের উপর নির্ভর করছে, যেমনটি সবসময়ই করত। জাতিকে উৎসাহিত করতে, সংগঠিত করতে এবং সংঘবদ্ধ করতে আমার পাশেও আপনাদের চাই।
“ভোট দেওয়ার জন্য লোকদের নিবন্ধন করতে, তাদের নির্বাচনে নিয়ে যেতে এবং আমাদের ভবিষ্যতের জন্য লড়াই চালিয়ে যেতে আমার আপনাদের দরকার।”
হ্যারিস ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ‘আমেরিকাকে অন্ধকার অতীতে ফিরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা’ সমর্থনের অভিযোগ করেন। হ্যারিস বলেন, “শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের খরচ কমানোসহ প্রকল্প-২০২৫ এর কিছু এজেন্ডা আমাদের শিশুদের, আমাদের পরিবার এবং আমাদের ভবিষ্যতের ওপর সরাসরি আক্রমণের শামিল।”
বৃহস্পতিবার হ্যারিস আমেরিকান ফেডারেশন অফ টিচার্স কনভেনশনে অংশ নেওয়ার জন্য হিউস্টনেও ভ্রমণ করেন। সেখানেও তিনি প্রকল্প-২০২৫ এর দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, রিপাবলিকানরা ক্ষমতায় এলে শিক্ষক এবং অন্যান্য সরকারী কর্মচারীদের জন্য শিক্ষার্থী ঋণ মওকুফ বন্ধ করে দেবে। স্কুলে ভর্তি হওয়ার আগে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর শিশুদের জন্য ফ্রি শিক্ষা বাতিল করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং তার স্ত্রী মিশেল ওবামা বৃহস্পতিবার রাতে কমলাকে সমর্থন দিয়েছেন।
সিএনএন এর জরিপে দেখা গেছে, হ্যারিস কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে আছেন। মঙ্গলবার প্রকাশিত সিএনএন/এসএসআরএস জরিপে দেখা গেছে, কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের মধ্যে হ্যারিসের সমর্থন ৭৮ শতাংশ, আর ট্রাম্পের সমর্থন মাত্র ১৫ শতাংশ।
এই একই ভোটারদের মধ্যে গত এপ্রিল ও জুনে চালানো জরিপে দেখা যায়, বাইডেনের সমর্থন ছিল ৭০ শতাংশ আর ট্রাম্পের ছিল ২৩ শতাংশ।
বাইডেন সরে দাঁড়ানোর পর হিসপ্যানিক ভোটারদের মধ্যেও ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রতি সমর্থন বেড়েছে। হিসপ্যানিক ভোটারদের মধ্যেও ৪৭ শতাংশ সমর্থন নিয়ে হ্যারিস ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে। হ্যারিসের বিপরীতে হিসপ্যানিকদের মধ্যে ট্রাম্পের সমর্থন ৪৫ শতাংশে নেমে এসেছে। যেখানে বাইডেনের বিপরীতে হিসপ্যানিকদের মধ্যে ট্রাম্পের সমর্থন ছিল ৫০ শতাংশ। আর বাইডেনের সমর্থন ছিল ৪১ শতাংশ।
তরুণদের মধ্যেও বাইডেনের চেয়ে হ্যারিসের জনপ্রিয়তা বেশি। নতুন জরিপে দেখা গেছে, ৩৫ বছরের কম বয়সী ভোটারদের ৪৭ শতাংশ হ্যারিসকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চান। হ্যারিসের বিপরীতে ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন দেখিয়েছে ৪৩ শতাংশ তরুণ।
গত এপ্রিল ও জুনে এই একই ভোটারদের মধ্যে বাইডেনের চেয়ে ট্রাম্পের প্রতিই বেশি সমর্থন দেখা গেছে। সেসময় ৪৯ শতাংশ তরুণ ভোটার বলেছিলেন, তারা ট্রাম্পকেই প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চান। বিপরীতে বাইডেনকে ভোট দেওয়ার কথা বলেছিলেন মাত্র ৪২ শতাংশ।
শ্বেতাঙ্গ নারীরাও হ্যারিসের পাশে
‘হোয়াইট উইমেন: অ্যানসার দ্য কল’ শিরোনামে কমলা হ্যারিসের জন্য বৃহস্পতিবার রাতে একটি জুম বৈঠক করেন বিশিষ্ট রাজনৈতিক কর্মী শ্যানন ওয়াটস। ৯০ মিনিটের ওই বৈঠকে হ্যারিসের নির্বাচনী তহবিলে আরও প্রায় ২০ লাখ ডলার জমা পড়ে।
এতে অংশগ্রহণকারী সব নারীই ছিলেন শ্বেতাঙ্গ। পপ তারকা পিংক, অভিনেত্রী কনি ব্রিটনসহ অনেকে বিশিষ্ট নারী ব্যক্তিত্ব এতে অংশ নেন। তারা সকলেই কমলার সমর্থনে কথা বলেন। শ্যানন ওই বৈঠকে কমলার যোগ্যতার নানান দিক তুলে ধরেন।
অনলাইনে সরাসরি সম্প্রচারিত ওই বৈঠকে প্রথম দফায় ১ লাখ ৩৬ হাজারের বেশি নারী যোগ দেন। একসঙ্গে এত বেশি মানুষ জুম বৈঠকে যোগ দেওয়ায় সম্প্রচারে সমস্যা হচ্ছিল। একপর্যায়ে সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যায়। তবে কিছুক্ষণের মধ্যে আবার শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত বৈঠকে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ১ লাখ ৬৪ হাজার ছাড়িয়ে যায়।
এর আগে জুমের আর কোনও বৈঠকে একসঙ্গে এক লাখের বেশি মানুষের যোগ দেওয়ার কোনও রেকর্ড নেই। অনুষ্ঠানটি ইউটিউবেও অনেকে সরাসরি দেখেছেন।
২০১৬ সালের নির্বাচনে শ্বেতাঙ্গ নারী ভোটারদের ৫২ শতাংশই ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছিলেন। সেবার ডেমোক্রেট প্রার্থী ছিলেন হিলারি ক্লিনটন। ২০২০ সালের নির্বাচনেও শ্বেতাঙ্গ নারীরা বাইডেনের চেয়ে ট্রাম্পকেই বেশি ভোট দিয়েছেন। শ্যানন ওয়াটস সেই পরিস্থিতিতে পরিবর্তনের ডাক দিয়েছেন। ২০০০ সালের নির্বাচন থেকেই শ্বেতাঙ্গ নারীরা রিপাবলিকান পার্টিকেই বেশি ভোট দিয়ে আসছে।
শ্যানন ওয়াটস এবার সেই পরিস্থিতিতে বদলের ডাক দিয়েছেন। শ্বেতাঙ্গ নারীদের তিনি বলেন, রিপাবলিকানদের ভোট দিলে আমাদের নারীদেরই অধিকারের ক্ষতি হবে। কারণ তারা লিঙ্গবৈষম্য ফিরিয়ে আনবে এবং পিতৃতন্ত্রকে জোরদার করবে। ওয়াটস বলেন, তিনি আশা করেন এবার আর ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হবে না।
‘স্বাধীনতা’ রক্ষার ডাক
হ্যারিসের প্রচার শিবির তার নির্বাচনী প্রচারণার প্রথম ভিডিও প্রকাশ করে বৃহস্পতিবার। ৭৫ সেকেন্ডের ভিডিওটি গায়িকা বিয়ন্সের ‘ফ্রিডম’ গানটি দিয়ে বানানো হয়েছে।
ভিডিওটির মূল থিমের সঙ্গে ২০২৩ সালের এপ্রিলে বাইডেন তার নির্বাচনী প্রচার শুরুর ভিডিওতে যা বলেছিলেন, তার মিল রয়েছে।
সেই তিন মিনিটের ভিডিওতে বাইডেন বলেছিলেন, “আমরা যে প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছি, তা হলো সামনের বছরগুলোতে আমাদের বেশি স্বাধীনতা থাকবে, নাকি কম স্বাধীনতা থাকবে। বেশি নাকি কম অধিকার। আমি কী উত্তর চাই, তা আমার জানা আছে এবং আমি মনে করি আপনারাও জানেন আপনারা কী উত্তর চান। এটা আত্মতুষ্টির সময় নয়। সেজন্যই আমি পুনরায় নির্বাচনে লড়ছি।”
হ্যারিসও স্বাধীনতা রক্ষার ডাক দিয়েছেন। তবে তিনি বাইডেনের গণতন্ত্র রক্ষার ডাকের সঙ্গে নারীদের প্রজননের স্বাধীনতা, গর্ভপাতের অধিকার এবং আরও অনেক কিছু অন্তর্ভুক্ত করেছেন। হ্যারিস স্বাধীনতার পরিসরকে আরও বিস্তৃত করেছেন।
ভিডিওটি শুরু হয় হ্যারিসের একটি জিজ্ঞাসা দিয়ে— “এই নির্বাচনে, আমরা প্রত্যেকে একটি প্রশ্নের মুখোমুখি: আমরা কোন ধরনের দেশে থাকতে চাই?”
মিলওয়াকির প্রচার সমাবেশে তিনি এই প্রশ্নটি করেছিলেন। ভিডিওটি সেই দৃশ্য দিয়েই শুরু করা হয়।
হ্যারিস বলেছিলেন, “আমরা স্বাধীনতা বেছে নেব। স্বাধীনতা শুধু পাওয়ার নয়, এগিয়ে যাওয়ার। বন্দুক সহিংসতা থেকে নিরাপদ থাকার স্বাধীনতা। আপনার নিজের শরীরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা।”
হ্যারিস আরও বলেন, “আমরা এমন একটি ভবিষ্যত বেছে নেব, যেখানে কোনও শিশু দারিদ্র্যের মধ্যে থাকবে না, যেখানে আমরা সকলকেই স্বাস্থ্যসেবা দিতে পারব। যেখানে কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।”
তথ্যসূত্র : সিএনএন, রয়টার্স, দ্যা গার্ডিয়ান, নিউ ইয়র্ক টাইমস