রাঙ্গামাটির মাইনী নদী খননের বালি দিয়ে কাপ্তাই হ্রদ ভরাটের ঘটনার সরেজমিন তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে জেলার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালত। একইসঙ্গে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাঙ্গামাটির অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিনের আদালত এসব নির্দেশ দেয়।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী নিলন চাকমা সকাল-সন্ধ্যাকে বলেন, “সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে বিজ্ঞ আদালত বিষয়টি তদন্ত করে রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপারকে (এএসপি) আগামী ২৩ জুন পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।”
পানি উন্নয়ন বোর্ডের খনন করা বালি দিয়ে হ্রদ ভরাটের ঘটনায় মঙ্গলবার সকাল সন্ধ্যায় ‘একদিকে নদীরক্ষা তো অন্যদিকে হ্রদ ধ্বংস’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদন প্রকাশের পর পাইপ সরিয়ে ফেলে পাউবো।
পরে সেটি নিয়েও ‘নদী বাঁচাতে হ্রদ ভরাট : পাইপ তো সরল, দায় কে নেবে’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়।
আদেশে বলা হয়েছে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সূত্রে বিষয়টি আদালতের দৃষ্টিগোচর হয়। প্রতিবেদনগুলোয় উল্লেখ করা হয়, নদী খননের বালি ফেলা হচ্ছে কাপ্তাই হ্রদে। এতে কাপ্তাই হ্রদের অংশ বিশেষ পরিণত হচ্ছে বালুচরে। হ্রদ ভরাটের ফলে বাজার এলাকায় নৌ-ঘাটগুলো অস্তিত্বের সংকটে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাজার সম্প্রসারণের নামে হ্রদের বিস্তীর্ণ অংশ ভরাটের অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
এসব কাজ পরিবেশবিধ্বংসী উল্লেখ করে আদালত বলেছে, এর আগে ২০২২ সালে একটি রিট আবদনের পরিপ্রেক্ষিতে কাপ্তাই হ্রদের পাড়ের দখল ঠেকাতে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
রাঙ্গামাটির লংগদু উপজেলার মাইনীমুখে বন বিভাগের বিশ্রামাগার এলাকার অংশে মাইনী নদী খননের বালি দিয়ে কাপ্তাই হ্রদের বিশাল অংশ বালি দিয়ে ভরাটের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মাইনীমুখ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কামার হোসেন কমলসহ একটি চক্রের বিরুদ্ধে।
পরিবেশ অধিদপ্তর প্রাথমিক তদন্তে ইউপি চেয়ারম্যান, বাজার সমিতির সভাপতি-সম্পাদকসহ স্থানীয় নেতাদের জড়িত থাকার প্রমাণও পেয়েছে।
এ বিষয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির (দুপ্রক) রাঙ্গামাটি জেলা সভাপতি মো. ওমর ফারুক বলেন, আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে ঘটনার তদন্ত ও জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এজন্য আমরা আদালতকে ধন্যবাদ জানাই।
তিনি বলেন, এসব পরিবেশবিরোধী ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতরা শাস্তির আওতায় এলে সমাজে অনিয়ম-দুর্নীতি, পরিবেশবিধ্বংসী কাজ অনেকাংশে কমে আসবে, অন্যরা নিরুৎসাহিত হবে।