চার মাস সাত দিন পর রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদে শুরু হয়েছে মাছ শিকার। এতে দীর্ঘদিন পর সংলগ্ন এলাকায় ফিরেছে প্রাণচাঞ্চল্য, বাজারে শুরু হয়েছে তাজা মাছের সরবরাহ।
রবিবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে হ্রদে মাছ শিকার শুরু হওয়ার পর ভোর থেকেই বিপণনকেন্দ্রগুলোয় মাছ নিয়ে আসতে শুরু করেন জেলেরা। জেলা শহরের প্রধান বিপণণকেন্দ্রসহ জেলার কাপ্তাই, মারিশ্যা ও খাগড়াছড়ির মহালছড়ির উপকেন্দ্রে ভোর থেকেই ভিড় ছিল মৎস্যজীবীদের।
এরপর সেই মাছের শুল্ক আদায় শেষে বরফ দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে পরিবহনের জন্য প্রস্তুত করেন শ্রমিকরা।
দীর্ঘ চার মাস পর আবারও কাজে ফিরে খুশি জেলে-শ্রমিক-ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরা। বিপণন কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি বছর মাছের আহরণ ও রাজস্ব আদায় গত বছর থেকে বাড়বে।
ভোর থেকেই রাঙ্গামাটির বিপণনকেন্দ্রগুলো ভীষণ জমজমাট।
ট্রাক-পিকআপে ভর্তি হওয়া এসব মাছের অধিকাংশের গন্তব্য ঢাকা।
প্রথম দিনের মাছ আহরণের পরিমাণ দেখে খুশি ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। তারা বলছেন, হ্রদে পানি বেশি থাকায় মাছ তুলনামূলক কম ধরা পড়েছে। প্রথমদিনেই কাঁচকি, চাপিলার আধিক্য ছিল সবচেয়ে বেশি।
কাপ্তাই হ্রদ মৎস্য উন্নয়ন ও বিপণনকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক কমান্ডার মো. আশরাফুল আলম ভূঁইয়া বলেন, “ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেছি অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার কাপ্তাই হ্রদের আইড় মাছের আহরণ ও আকার বেড়েছে। তবে বিশেষ করে কাঁচকি ও চাপিলার মতো মাছ ছোট আকারের ধরা পড়ছে। অন্য বছরের চেয়ে এবার কাপ্তাই হ্রদে পানি অনেকটা বেশি। যে কারণে জেলেরা যেসব জায়গায় জাল ফেলে থাকেন সেখানে ওই পরিমাণ মাছ পাওয়া যাচ্ছে না।
“বৃষ্টিপাত ও ঢলের কারণে হ্রদের পানি ঘোলা হওয়ার কারণে মাছ পর্যাপ্ত খাবার না পেয়ে বাড়তে পারেনি। তবে আমরা আশাবাদী চলতি মৌসুমে মাছ আহরণ ও আমাদের শুল্কহার আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।”
প্রচলিত রীতি অনুসারে প্রতি বছরের পহেলা মে থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত তিন মাস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে বড় কৃত্রিম জলাধার কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে জেলা প্রশাসন। কাপ্তাই হ্রদে কার্পজাতীয় মাছের সুষম বৃদ্ধি, মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিতসহ জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
এ সময়ে হ্রদের মাছ বিপণনসহ স্থানীয় বরফকলগুলোও বন্ধ রাখা হয়। তবে চলতি বছর নির্ধারিত সময়ের ছয়দিন আগে ২৫ এপ্রিল থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত তিন মাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যেও হ্রদে পানি পর্যাপ্ত না বাড়ায় প্রথম দফায় ১৫ দিন ও দ্বিতীয় দফায় ২৩ হ্রদে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা বাড়ানো হয়। নির্ধারিত তিন মাস সময়ের পর আরও একমাস সাত দিন পর শুরু হল কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকার।