রাকেশ রোশন নির্মিত ‘কারান অর্জুন’-কে বলা হয়ে থাকে বলিউডের অন্যতম আইকনিক সিনেমা। সালমান খান, শাহরুখ খান, কাজল এবং মমতা কুলকার্নি অভিনীত এই সিনেমাটি মুক্তি পায় ১৯৯৫ সালে — সে বছর বলিউডের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আয় করা সিনেমা।
গেল ২২ নভেম্বর আবারও সিনেমা হলে মুক্তি দেওয়া হয়েছে বলিউডের এই কাল্ট ক্লাসিক। অথচ রূপালি জগতের ধারে কাছেও নেই মমতা কুলকার্নি, দুষ্টু তরুণরা যাকে মজা করে ডাকতো ‘মমতা চুলকানি’!
৬ কোটি রুপি বাজেটের এই সিনেমাটি ৪২ কোটি রুপিরও বেশি আয় করেছিল। আর বিশ্বব্যাপী এর আয় ছিল প্রায় ৪৪ কোটি রুপি।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে রাকেশ রোশন ‘কারান অর্জুন’-এর দুই অভিনয় শিল্পীকে স্মরণ করেন। একজন হলেন প্রয়াত অমরেশ পুরি, যিনি অভিনয় করেছিলেন খল চরিত্রে।
আর আরেকজন হলেন মমতা কুলকার্নি। যাকে ২০০৩ সালের পর আর ইন্ডাস্ট্রিতে দেখা যায়নি। কোথায় আছেন এই অভিনেত্রী?
মমতা কুলকার্নি সম্পর্কে রাকেশ রোশন জানান, মমতা কোথায় আছেন তা তিনি একেবারেই জানেন না। তার সঙ্গে নাকি কোন যোগাযোগই নেই!
নব্বই দশকের জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী ‘রাম লক্ষ্মণ’ ‘কারান অর্জুন‘, ‘ক্রান্তিবীর’, ‘কাভি তুম কাভি হাম’ এবং ‘চায়না গেইট’ এর মত সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন, কুড়িয়েছিলেন খ্যাতি।
‘কারান অর্জুন’ সিনেমার ‘গুপ চুপ গুপ চুপ’ আজও বলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় গান হিসেবেই রয়ে গেছে। এই গানের মমতাকে দর্শক আজও মনে রেখেছে।
কিন্তু কী হয়েছিল মমতার? কেনই বা ছেড়ে দিলেন অভিনয়?
এসব প্রশ্নের কোন নিশ্চিত উত্তর কারও কাছে নেই।
তবে ধারণা করা হয়, ক্যারিয়ারের পড়তির শুরুটা তার ‘চায়না গেইট’ থেকে বাদ পড়ার পর। ছিলেন এই সিনেমার গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে। তবে পর্দায় যতটা তার থাকার কথা ছিল থাকেননি। বলা ভালো, পরিচালক রাজকুমার সন্তোষি তাকে গল্প থেকে মাঝপথে বাদ দিয়ে দেন।
পরিচালকের দাবি, যেভাবে চাইছিলেন ঠিক সেভাবে চরিত্রটিকে দাঁড় করাতে পারছিলেন না মমতা। তাই শুটিংয়ের এক পর্যায়ে মমতাকে বাদ দিতে বাধ্য হন রাজকুমার। আবার অন্যদিকে মমতা অভিযোগ করেন, রাজকুমারের ‘আপত্তিকর প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায়’ তাকে বাদ দেওয়া হয়।
২০০৩ সালে, মমতা কুলকার্নি অভিনয় ছেড়ে যোগিনীর জীবন বেছে নেন। যোগিনী জীবনের ওপর তার একটি বইও বের হয়েছে। যার নাম ‘অটোবায়োগ্রাফি অব আ যোগিনী’।
মমতা কুলকার্নির শেষ বলিউড সিনেমা ছিল ২০০২ সালের ‘কাভি তুম কাভি হাম’। জীবনের শেষ সিনেমাটি তিনি করেছিলেন কলকাতায়। ‘শেষ বংশধর’ নামের ওই সিনেমাটি ২০০৩ সালে টলিউডে মুক্তি পায়।
তবে শুধুমাত্র অভিনয় দিয়েই নয়, মমতা আলোচিত ছিলেন পর্দার বাইরের নানা ঘটনার কারণেও।
বলিউডের ওপর মাফিয়াদের ব্যাপক প্রভাব বরাবরই ছিল। বলা হয় ৯০’র দশকে নাকি তাদের বিশাল অঙ্কের বিনিয়োগ ছিল ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে।
এমনই এক প্রেক্ষাপটে মমতা কুলকার্নি জড়িয়ে পড়েন আন্ডারওয়ার্ল্ডে। মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহিমের সহযোগী ছোটা রাজনের সঙ্গে তিনি জড়িয়ে পড়েন রোমান্টিক সম্পর্কে। তবে ছোটা রাজন ভারত ছাড়তে বাধ্য হলে তাদের সম্পর্কের ইতি ঘটে।
অনেকের ধারণা, সফল ক্যারিয়ার থাকা সত্ত্বেও আন্ডারওয়ার্ল্ডের সঙ্গে সংযোগ তার অভিনয় জীবনে প্রভাব ফেলেছিল।
১৯৯৩ সালে ‘স্টারডাস্ট’ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ মডেল হয়ে হৈচৈ ফেলে দেন মমতা কুলকার্নি। কিন্তু কী এমন করেছিলেন মমতা যে গোটা ভারত জুড়েই সোরগোল পড়ে গিয়েছিল? ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে ঠাঁই পাওয়া বলিউড অভিনেত্রী তিনিই তো আর প্রথম নন!
আসলে প্রচ্ছদের জন্য মমতা টপলেস হয়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। সে সময়ের প্রেক্ষাপটে এটি ছিল ভীষণ সাহসী ঘটনা। এই ফটোশুট ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেয়। প্রচ্ছদে মমতার টপলেস ছবি গোটা ভারতে তোলে আলোড়ন। প্রতিবাদও করে অসংখ্য মানুষ। মমতার বিরুদ্ধে অশ্লীলতার অভিযোগে করা হয় মামলা।
এই মামলা দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে। শেষমেশ ২০০০ সালে মমতা কুলকার্নিকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। আদালত তাকে ১৫ হাজার রুপি জরিমানা করে।
আরও পড়ুন পুরনো বলিউড সিনেমার মুক্তিতে কী লাভ
অভিনয় ছাড়লেও, বিভিন্ন সময় আলোচনায় ছিলেন এই অভিনেত্রী। জানা যায়, মিডিয়া সংশ্লিষ্ট এক ইভেন্টে খাবার-দাবার নিয়ে সবাইকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে দেন। ইভেন্টে মাংস নিয়ে ওয়েটারের সঙ্গে বাঁধিয়ে দেন তুমুল ঝগড়া। উপস্থিত অনেকেই পরিস্থিতি সামলাতে চাইলেও, সামলানো যাচ্ছিল না মমতাকে।
আরেকবার আমিশা প্যাটেলের পারিশ্রমিক নিয়ে তাকে অপমান করেন মমতা কুলকার্নি। এই ঘটনা নিয়ে বলিউডে কম চর্চা হয়নি।
যদিও বিষয়টি নিয়ে আমিশা কোথাও খোলামেলা আলাপ করতে চাননি। এক সাক্ষাতকারে তাকে এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ‘এসব বহু আগের কথা’ বলে তিনি এড়িয়ে যান।
এরপর ২০১৩ সালে ভিকি গোস্বামীকে বিয়ে করে আবারও আলোচনায় আসেন মমতা কুলকার্নি। ভিকি ছিলেন আহমেদাবাদের একজন কুখ্যাত মাদক সম্রাট। যার জেরে মমতা এক বিশাল আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালান নেটওয়ার্কের সঙ্গে জড়িয়ে পোড়েন।
২০১৬ সালে মমতা কুলকার্নি মাদক পাচারে অভিযুক্ত হন। যদিও তার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।
এই ঘটনা তাকে দর্শকের মন থেকে আরও দূরে সরিয়ে দেয়। পরিণত করে এক প্রায় বিস্মৃত তারকায়।
মমতা নাকি এখন বসবাস করছেন কেনিয়ায়। শোনা যায়, সেখানে তিনি একজন যোগিনী হিসেবে ‘শান্ত’ জীবনযাপন করছেন। তিনি আছেন বলিউডের গ্ল্যামার ও ঝলমলে দুনিয়া থেকে অনেক দূরে।