Beta
শুক্রবার, ১৬ মে, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ১৬ মে, ২০২৫

৮ বছর আগের যে ৫ মামলা থেকে নিষ্কৃতি পেলেন খালেদা জিয়া

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি
[publishpress_authors_box]

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর কারামুক্ত খালেদা জিয়া তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ শাসনামলে করা মানহানির পাঁচটি মামলায় খালাস পেয়েছেন।

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মামলাগুলোয় মঙ্গলবার শুনানির দিন ধার্য ছিল। বাদী আদালতে হাজির না হওয়ায় মামলাগুলো খারিজ করে আসামিকে খালাস দেন ঢাকার আদালত।

ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মাহবুবুল হক চারটি এবং অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম তোফাজ্জল হোসেন বাকি মামলা খারিজের আদেশ দেন।

খালেদা জিয়ার পক্ষে আদালতে শুনানি করেন মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সৈয়দ জয়নাল আবেদীন মেজবাহসহ বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা।

শুনানিতে তারা বলেন, হয়রানি করার উদ্দেশ্যে এই মামলাগুলো করা হয়েছিল। প্রতিটি মামলার বাদীই আওয়ামী লীগ সরকারের মদদপুষ্ট। সবগুলোর অভিযোগই বানোয়াট।

বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করছে বলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে দাবি করলেও বিএনপির অভিযোগ ছিল বিপরীত। তারা বলে আসছিল, সরকারের ইঙ্গিতেই চলে বিচার বিভাগ।

শুনানিতে খালেদার আইনজীবীরা বলেন, এই মামলাগুলো থেকে বিএনপি নেত্রীর অব্যাহতি চেয়ে আদালতে আবেদন করা হলেও শুধু শুনানি পেছাত। কয়েকটি মামলার বাদী এ বি সিদ্দিকী চার বছর আগে মারা গেলেও মামলাগুলো রাখা হয়েছিল হয়রানির জন্য।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটার পরপরই দণ্ডিত খালেদা জিয়ার মুক্তির আদেশ দেন রাষ্ট্রপতি।

দুর্নীতির মামলায় দণ্ড নিয়ে ২০১৮ সালে কারাগারে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। দুই বছর পর কোভিড মহামারী দেখা দিলে আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাহী আদেশে কয়েকটি শর্তে তাকে মুক্তি দেয়।

ছয় বছর পর তিনি স্থায়ীভাবে মুক্তি পান। তবে তার বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা চলার মধ্যে মঙ্গলবার পাঁচটি েথকে নিষ্কৃতি পেলেন তিনি। নানা অভিযোগে এই মামলাগুলো হয়েছিল।

ভুয়া জন্মদিন পালন

ভুয়া জন্মদিন পালনের অভিযোগে ২০১৬ সালের ৩০ আগস্ট ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী জহিরুল ইসলাম মামলাটি করেন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে। ওই বছর ২৭ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করেছিল আদালত।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, বিভিন্ন মাধ্যমে খালেদা জিয়ার ৫টি জন্মদিন পাওয়া গেলেও কোথাও ১৫ আগস্ট জন্মদিন পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় তিনি ৫টি জন্মদিনের একটিও পালন না করে ১৯৯৬ সাল থেকে ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যারবার্ষিকীর জাতীয় শোক দিবসে আনন্দ উৎসব করে জন্মদিন পালন করে আসছেন। শুধু বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সুনাম ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশে ওইদিন জন্মদিন পালন করেন তিনি।

যুদ্ধাপরাধীদের মদদ

যুদ্ধাপরাধীদের মদদ দেওয়ার অভিযোগে ২০১৬ সালের ৩ নভেম্বর বাংলাদেশ জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিকী মামলাটি করেন। ২০১৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তেজগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এ বি এম মশিউর রহমান আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেছিলেন। ওই বছরের ১২ অক্টোবর খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল আদালত।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পর মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ৭ নভেম্বর সিপাহী বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছেন। ২০০১ সালে ক্ষমতা গ্রহণ করে খালেদা জিয়া স্বাধীনতাবিরোধী আল বদর, রাজাকারদের মন্ত্রী করেন। এর মাধ্যমে স্বীকৃত স্বাধীনতাবিরোধীদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়ে দেশের মানচিত্র এবং জাতীয় পতাকার মানহানি ঘটিয়েছেন খালেদা জিয়া।

আওয়ামী লীগ সমর্থক এ বি সিদ্দিকী এই মামলাগুলোর চারটি করেছিলেন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে।

বঙ্গবন্ধুকে কটূক্তি

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগের ২০১৭ সালের ২৫ জানুয়ারি মানহানির মামলাটি করেন জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিকী।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধু দেশের স্বাধীনতা চাননি। তিনি চেয়েছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রিত্ব। জেনারেল জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ায় এদেশের জনগণ যুদ্ধে নেমেছিল। খালেদা জিয়ার ওই বক্তব্য মানহানিকর।

মামলায় অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার কথা জানিয়ে ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই ঢাকার শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. জাফর আলী বিশ্বাস আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে মানহানিকর মন্তব্যের অভিযোগে খালেদা জিয়া ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি এই মামলাটিও করেন এ বি সিদ্দিকী।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত এক আলোচনা সভায় খালেদা জিয়া বলেন, “তিনি তো (বঙ্গবন্ধু) বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাননি, তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। শহীদ প্রেসিসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। আজকে বলা হয়, এত শহীদ হয়েছে, এটা নিয়েও অনেক বিতর্ক আছে।”

হত্যার হুমকি

প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও তার স্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে হত্যার হুমকির অভিযোগ এনে ২০১৬ সালের ৩ নভেম্বর এ বি সিদ্দিকী এ মামলা করেন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর জিয়াউর রহমান সামরিক সরকারের দায়িত্ব নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছেন। ১৯৮১ সালের ১৭ মে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেশে ফিরলে তাকে হত্যার হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি তার বাবার বাড়িতে ঢুকতে দেননি জিয়া।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত