Beta
মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৫

ক্ষমা পেলেও আইনি পথেই মুক্তি চান খালেদা জিয়া

হাসপাতালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি
হাসপাতালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি
[publishpress_authors_box]

জিয়া এতিমখানা ও দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতির দুই মামলায় রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় সাজা খাটতে আর না হলেও আইনি পথেই মুক্তি পেতে চান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

এজন্য মামলা দুটিতে সাজার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল চালিয়ে যেতে উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। আদালতও তার আপিল শোনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

জিয়া চ্যারিটেবল (দাতব্য) ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদাকে নিজ খরচে পেপারবুক তৈরির অনুমতি দিয়েছে হাই কোর্ট।

জিয়া অরফ্যানেজ (এতিমখানা) ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও আগামী ১০ নভেম্বর আপিল বিভাগে শুনানি হবে।

জিয়া এতিমখানা দুর্নীতির মামলাটি করা হয়েছিল ২০০৮ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে।

দুদকের করা এই মামলায় আওয়ামী লীগ সরকার আমলে অভিযোগ গঠনের পর বিচার শেষে ২০১৮ সালে রায়ে খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয় বিচারিক আদালত। তবে হাইকোর্টে সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করে।  

জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলাটি হয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার আমলে ২০১১ সালে। এই মামলাটিও করেচিল দুদক। ২০১৮ সালে এই মামলারও রায়ে খালেদা জিয়াকে সাত বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরপরই রাষ্ট্রপতি এই দুই মামলায় খালেদা জিয়াকে ক্ষমা করে মুক্তি দেন।

এখন খালেদা জিয়ার আদালতে লড়ার সিদ্ধান্তের বিষয়ে তার আইনজীবীরা বলেন, সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী কোনও অনুকম্পা চান না, আইনগতভাবেই মোকাবেলা করে এসব মামলা মিথ্যা প্রমাণ করতে চান।

রবিবার জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার আপিলের শুনানি দ্রুত করার জন্য খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আবেদন জানান।

একই সঙ্গে মামলাটি দ্রুত তালিকায় এনে শুনানির জন্য নিজ খরচে এ মামলার পেপারবুক প্রস্তুত করার আবেদন জানালে শুনানি নিয়ে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ সেই আবেদন মঞ্জুর করে।

আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন জয়নুল আবেদীন, কায়সার কামাল, রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ আরও বেশ কয়েকজন আইনজীবী।

পরে জয়নুল আবেদীন বলেন, “বেগম খালেদা জিয়া আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন যে, ‘কোনও অনুকম্পা নয়, আপনারা আইনগতভাবেই মোকাবেলা করে প্রমাণ করবেন এবং আপিলটি শুনানি করবেন।’ সেই কারণেই আজকে পেপারবুক রেডি করার জন্য আমরা আদেশ কামনা করেছি, আদালত মঞ্জুর করেছেন।”

রাষ্ট্রপতি সাজা মওকুফ করার পরও কেন এ মামলা শুনানি করতে চান- জানতে চাইলে কায়সার কামাল সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “উনি (খালেদা জিয়া) জানেন, এ মামলা রুজু থেকে রায় হওয়া পর্যন্ত সম্পূর্ণভাবে বেআইনিভাবে হয়েছে। তারপরও তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, আদালতের প্রতি বিশ্বাসী। যে কারণে আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করার জন্য শরণাপন্ন হয়েছি।”

তিনি বলেন, “হাই কোর্ট থেকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার আপিল শুনানির জন্য নিজ খরচে পেপারবুক প্রস্তুতির অনুমতি দিয়েছেন। আমরা চেষ্টা করছি, সপ্তাহ খানেকের মধ্যে পেপারবুক প্রস্তুতি কাজ সম্পন্ন করা যাবে।”

এদিকে, আপিল বিভাগে জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে জানিয়ে কায়সার কামাল বলেন, “আগামী ১০ নভেম্বর আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য তারিখ রয়েছে।”

জিয়া দাতব্য ট্রাস্টের নামে আনা প্রায় সোয়া ৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছিল একটি মামলায়। ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর বিচারিক আদালতের দেওয়া রায়ে খালেদাসহ চার আসামিকে সাত বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেয় ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালত। এরপর ওই বছরের ১৪ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর ১৯ নভেম্বর দণ্ডের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আপিল করেন খালেদা জিয়া।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল বিএনপির চেয়ারপারসনকে। ওই বছরের ৩০ অক্টোবর হাই কোর্টে এ মামলার আপিল শুনানি শেষে সাজা বেড়ে হয় ১০ বছর। এরপর ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারি হাই কোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পেলে দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল করেন তিনি।

এতিমখানা দুর্নীতির মামলায় সাজার পর ২০১৯ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকেই পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন সড়কের কারাগারে ছিলেন খালেদা জিয়া।

পরে দেশে কোভিড মহামারী শুরু হলে পরিবারের আবেদনে ২০২০ সালে আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাহী আদেশে শর্ত সাপেক্ষে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়। ওই বছরের ২৫ মার্চ সাময়িক মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসা ফিরোজায় ফেরেন তিনি।

এরপর থেকে পরিবারের আবেদনে প্রতি ছয় মাস পরপর মুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে আসছিল শেখ হাসিনার সরকার। প্রতিবারই দণ্ড স্থগিতের আদেশে তাকে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে এবং তিনি বিদেশ যেতে পারবেন না, এমন শর্ত দেওয়া হতো।

খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠাতে তার দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় আবেদন জানানো হলেও তাতে আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়া মেলেনি।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দৃশ্যপট পাল্টে যায়। পরদিন ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে দুর্নীতির দুটি মামলায় খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফ করেন।

৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নেওয়া হচ্ছে বলে সম্প্রতি বিএনপি জানিয়েছে।  

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত