সাড়ে তিন মাস পর কারাগারে থেকে বেরিয়ে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
জামিনে ছাড়া পাওয়ার চার দিন পর সোমবার রাতে গুলশানে খালেদা জিয়া বাড়িতে যান ফখরুল। সেখানে তিনি প্রায় দেড় ঘণ্টা ছিলেন।
দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত খালেদা জিয়া সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তির পর থেকে এই বাড়িতেই থাকছেন। অসুস্থতার কারণে তাকে মাঝে-মাঝে হাসপাতালেও যেতে হয়।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, সোমবার রাত ৮টা ১০ মিনিট থেকে রাত ৯টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত চেয়ারপারসনের বাড়িতে ছিলেন ফখরুল।
তাদের মধ্যে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে, সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি বিএনপির পক্ষ থেকে।
ফখরুলের সঙ্গে মঙ্গলবার সকালে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ব্যক্তিগত সহকারী মো ইউনুস সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “স্যার অসুস্থ। আপাতত তিনি কারও সাথে কথা বলবেন না।”
খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইউনুস বলেন, “দেখা করে এসেছেন। তবে কী কথা হয়েছে, সেসব আমি জানি না।”
খালেদা জিয়া আপাতত মুক্ত থাকলেও রাজনীতিতে এখন তিনি নিষ্ক্রিয়। লন্ডনে থাকা জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।
বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সকাল সন্ধ্যাকে জানান, সোমবার রাতেই দলের স্থায়ী কমিটির একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। মির্জা ফখরুল চেয়ারারসনের সঙ্গে দেখা করে এসে সেই সভায় যোগ দেন। ভার্চুয়াল এই সভায় সভাপতিত্ব করেন তারেক রহমান।
ওই নেতা বলেন, “যেহেতু স্থায়ী কমিটির বৈঠক ছিল। তার আগে ম্যাডামের কাছ থেকে সকল বিষয়ে পরামর্শ নিতেই দেখা করতে গিয়েছিলেন মহাসচিব।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, “আসলে মির্জা ফখরুল সাহেব তো ম্যাডামের আনুগত। সকল বিষয়ে পরামর্শ গ্রহণ তিনি ম্যাডামের কাছ থেকেই করে থাকেন সাধারণত।
“ফখরুল সাহেবের অনুপস্থিতে দলের মধ্যে কিছু বিশৃঙ্খলা, আর আন্দোলনে দলের কর্মকৌশল কী হবে-এসব বিষয় নিয়েই কথা হয়েছে সভাতে।”
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর বিএনপির পরবর্তী কর্মপন্থা কী হবে, উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে কি নেবে না, তা নিয়ে দলটির তৃণমূল নেতা-কর্মীরা এখন দিশাহীন।
ভোটের আগে কারাগারে যাওয়া বিএনপি নেতাদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের আলোচনার একটি গুঞ্জনও ছড়িয়েছিল। কারাগার থেকে বেরিয়ে শাহজাহান ওমরের আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে সংসদ সদস্য হওয়া সেই গুঞ্জনে ভিত্তি দেয়।
মির্জা ফখরুল গ্রেপ্তার হন গত ২৯ অক্টোবর। তার সঙ্গে স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও মির্জা আব্বাসও গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তারা তিনজনই মুক্তি পেয়েছেন।
গ্রেপ্তারের আগের দিন ঢাকায় বিএনপির সমাবেশস্থল নয়া পল্টনের অদূরে কাকরাইল ও বিজয়নগরে পুলিশের সঙ্গে নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হলে ফখরুল সমাবেশ না চালিয়ে পরদিন হরতালের ডাক দেন।
সেদিন ফখরুল নয়া পল্টন ছাড়ার পর সেখানে থাকা নেতা-কর্মীদের একদল ক্ষোভ জানিয়ে বলেছিল, মহাসচিব তাদের ফেলে বাসায় চলে গেছেন।
কারামুক্ত হওয়ার পর থেকে বিবৃতি পাঠালেও প্রকাশ্য কোনো সভা-সমাবেশে আসেননি ফখরুল।
তবে সোমবার সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ফখরুল সরকারের সমালোচনা করে বলেন, “৭ জানুয়ারি ডামি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ সংগঠনগুলো দেশকে ‘জোর যার মুলুক তার’ বানিয়েছে। মনে হয়, সহিংস আক্রমণ ও জীবননাশের ব্রত নিয়ে তারা বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে।”
রাষ্ট্রীয় পেশীশক্তির জোরে মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “তবে জনগণের শক্তির কাছে অবৈধ আওয়ামী শাসকগোষ্ঠীকে অচিরেই মাথানত করতে হবে।”
ফখরুল অচিরেই দলীয় কর্মসূচিতে সক্রিয় হবেন জানিয়ে দলের ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “কারাবন্দি অবস্থায় মহাসচিব অসুস্থ ছিলেন। তার ওজন প্রায় ছয় কেজি কমে গেছে এবং বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিয়েছিল।
“শনিবার বিকালে উনি স্পেশালাইজড হাসপাতালে গিয়েছিলেন। সেখানে গ্যাস্ট্রোলজি বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শামসুল আরেফিন উনাকে দেখেছেন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপত্র দিয়েছেন।”